ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার শাহজালালে কোকেনের চালান আটক ॥ পেরুর নাগরিক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এবার শাহজালালে কোকেনের চালান আটক ॥ পেরুর নাগরিক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আনা কোকেনের একটি চালান ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোকেনসহ গ্রেফতার ওই ব্যক্তি দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর নাগরিক। তার নাম জেমস বার্ডলেস (পাসপোর্ট নম্বর-এ ৬৮৫৯৩৫৮)। এর আগে সাগর পথে চট্টগাম সমুদ্রবন্দরে ভোজ্যতেলের সঙ্গে আনা তরল কোকেনের একটি চালান ধরা পড়ে। ওই চালানটিও এসেছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে। পেরু ও বলিভিয়া পাশাপাশি রাষ্ট্র। বিমানবন্দরে সকালে ইমিগ্রেশন পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ইমিগ্রেশন এলাকা থেকে জেমস বার্ডলেসকে আটক করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) মোঃ জাফরুল্লাহ কাজল সাংবাদিকদের বলেন, পেরুর ওই নাগরিকের কাছ থেকে ১৮শ’ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়েছে। আটক কোকেনের দাম কত হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা কাজল। পেরুর কোকেন পাউডারের কালোবাজারে মূল্য প্রতিকেজি ৪ হাজার ৫০০ ডলার বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে ৮টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে দুবাই থেকে ঢাকায় আসেন ওই বিদেশী। আগাম তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ইমিগ্রেশন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান ও শাহরিয়ার আলম বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেছে। পেরুর নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য অধিদফতরের মহা পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এটা বড় আমাদের কর্মতৎপরতার বড় সাফল্য। আমরা এ চালানটি আটকের জন্য আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। সেভাবেই আমাদের টিমকে তৎপর রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত অপারেশান সাকসেসফুল। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিইএ) দেয়া তথ্যানুযায়ী অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। আটক কোকেনের পরিমাণ ১ কেজি ৮০০ গ্রাম। পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আটক জেমস বার্ডলেস মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে দুবাই এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮২ ফ্লাইটে করে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল দিয়ে পার হওয়ার সময় তার লাগেজ তল্লাশি করে পাউডার জাতীয় দ্রব্য জব্দ করা হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রাথমিক পরীক্ষায় জেমসের বহন করা পাউডার কোকেন হিসেবে চিহ্নিত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিইএ) দেয়া তথ্যমতে, আটক জেমসের দুবাই থেকে কোকেন নিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ের গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে দুবাই বিমানবন্দরেই উধাও হয়ে যান তিনি। এরপর ডিইএ আমাদের জানায়- জেমস যে কোন সময় বাংলাদেশে যেতে পারে এবং তা আজই (মঙ্গলবার)। এরপরই আমরা বিমানবন্দরে অবস্থান নিই। বেসমারিক বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুবাই থেকে আসা যাত্রী ও বিমান সম্পর্কে তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হই জেমস বাংলাদেশেই আসছেন। পরে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) তৌফিক উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল বিমানবন্দরে অভিযান চালায়। নজরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষর সহায়তায় নাম ও পাসপোর্ট নম্বরসহ দুবাই থেকে আসা যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হয়। দুবাই থেকে আসা যাত্রীদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এ অভিযানে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন,‘দুবাই থেকে কোকেন পাচার করে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বিমানবন্দরে তৎপর ছিলাম।’ এর আগে ডিইএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৭ জুন চট্টগ্রামে সূর্যমুখী তেলের ড্রাম থেকে ১৮৫ কেজি কোকেন আটক করা হয়। যা আমদানি করা হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে। আটক জেমসের দেশ পেরু বলিভিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি রাজধানীর হোটেল লা ভিঞ্চি থেকে দুই কেজি কোকেনসহ পেরুর নাগরিক হুয়ান পাবলো রাফায়েল জাগজিটারকে আটক করা হয়। হুয়ান পাবলো পেরু থেকে ইকুয়েডর, পানামা, ব্রাজিল ও দুবাই হয়ে ঢাকায় কোকেন নিয়ে এসেছিলেন। ওই সময় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তিনি জানিয়েছিলেন, সাড়ে চার হাজার ডলারের বিনিময়ে কোকেনগুলো ইউরোপের একটি দেশে পৌঁছে দেয়ার চুক্তি ছিল তার। বর্তমানে কারাগারে আছেন পাবলো। উল্লেখ্য, এর আগে সূর্যমুখী তেলের ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে কনটেনারটি চট্টগ্রামের খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা কনটেনারটি আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। পরদিন ৮ জুন গোয়েন্দা পুলিশ, শুল্ক গোয়েন্দা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কনটেনারে থাকা ভোজ্যতেলের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ১০৭টি ড্রামের তরল পরীক্ষা করে কোকেনের নমুনা ধরা পড়েনি। সংগৃহীত নমুনা ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। পরে ২৭ জুন এর মধ্যে ৯৬ নম্বর ড্রামে কোকেন থাকার কথা নিশ্চিত করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। ১০৭টি ড্রামের একটিতে কোকেনের নমুনা মিলে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কোকেন বলে তাদের ধারণা। ৮ জুলাই আদালতের আদেশে পুনরায় গোয়েন্দা পুলিশ ১০৭টি ড্রামের নমুনা সংগ্রহ করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিনই নমুনা আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম ফরিদ আলম পুনরায় এসব নমুনা ঢাকা সেনানিবাসের আর্মড ফোর্সেস ফুড এ্যান্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরীক্ষাগার ঢাকা এবং সিআইডি’র ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার আদেশ দেন। কোকেন জব্দের এই মামলায় এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও পুলিশ। তারা হলেন- আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্টস পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ম-ল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান খান, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল এবং শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠান কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদকে ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
×