ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘রং হেডেড’, সতর্ক করে অব্যাহতি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘রং হেডেড’, সতর্ক করে অব্যাহতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘রং হেডেড’ (বিকৃত মস্তিষ্ক) বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত অবমাননার অভিযোগে তাকে কড়াভাবে সতর্ক করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে নেত্রকোনার রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৫তম সাক্ষী মাকসুদা হোসেন আভাকে জেরা করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। আজ বুধবার নতুন সাক্ষীর জবানবন্দীর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহকে কড়া সতর্ক করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভয়ানক ও প্রচ- বিকৃত মস্তিষ্কের (রং হেডেড) অধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। গত ১০ জুন আদালত অবমাননা রায়ের পর পরই ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে যে সব মন্তব্য করেছেন তা কেবল একজন বিকৃত মস্তিষ্কের ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। তিনি চরম বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এসব বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। ট্রাইব্যুনালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল। ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, একজন ব্যক্তি তিনি যেই হোন না কেন, বাকস্বাধীনতার নামে তিনি স্বেচ্ছাচারী কথাবার্তা বলতে পারবেন না। আদালতের ওপর মানুষের আস্থাকে নষ্ট করতে পারবেন না। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছে এই দেশের সমাজের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই তিনি আইনের উর্ধে না। তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন এবং অপরাধের আগে বা পরে যদি কোন ভাল কাজ করেও থাকেন তার পরও সেই অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আদালতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আস্থা ও বিশ্বাসের। এমন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের বক্তব্যে কিছু যায় আসে না। তবে এ ধরনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি না করতে তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হলো।’ এর আগে গত ৩০ আগস্ট জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৯ আগস্ট বিচারকদের নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গত ১২ জুলাই বিচারকদের নিয়ে কটূক্তির জন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিস জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হয়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় জাফরুল্লাহকে। এর আগেও আদালত অবমাননার দায়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আসামির কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার দ- এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৬ জুলাই গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ ও তিন মুক্তিযোদ্ধা ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিন বিচারককে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলায় জাফরুল্লাহ বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা আনার আবেদন করেন। গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহ্বায়ক কামাল পাশা চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আসগর, মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী এফ এম শাহীন ট্রাইব্যুনালে এ আবেদন করেন। গত ১০ জুন আদালত অবমাননার দায়ে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টার কারাদ- (এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা) এবং পঁঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল-২। পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বাইরে বের হয়ে ডাঃ জাফরুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রায়কে তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ বলে কটূক্তি করেন। ননী তাহেরের বিরুদ্ধে ১৬তম সাক্ষী আজ ॥ নেত্রকোনার রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনেবর ১৫তম সাক্ষী মাকসুদা হোসেন আভার জেরা শেষ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার। আজ বুধবার ১৬তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মাকসুদা হোসেন আভা তার জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আসামিরা আমার ভাই দবির হোসেনকে নির্যাতন করে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
×