ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চার

হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে শরণার্থী ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে শরণার্থী ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যে ধারণা রয়েছে, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এলেই অনেক সুযোগ-সুবিধা মিলবে। ওপার থেকে এপারে এসে কোনভাবে ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে পারলেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে। তাই কোন কিছুই না ভেবে তারা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে হাজির হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায়, কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পর্যটন এলাকা। এই এলাকায় সমুদ্রসৈকত ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক যান। তাই কক্সবাজার এলাকাকে নিরিবিলি রাখতে চায় সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রোহিঙ্গারা ওই এলাকায় থেকে বনের কাঠ পাচার, মাদকদ্রব্য পাচার, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এপারের রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের আসতেও উৎসাহিত করছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও নয়াপাড়ার ক্যাম্প দুটি সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নোয়াখালী জেলায় বিভিন্ন চর রয়েছে। সেকারণে নোয়াখালীর কোন চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব কি-না, জানতে চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়। সম্প্রতি নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দফতর জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে প্রথমে জমি দেখা হয়। তবে সেখানে জমি পাওয়া যায়নি। এরপর নোয়াখালীর হাতিয়ার চরাঞ্চলে জমি পাওয়া গেছে। হাতিয়ার যেখানে জমি পাওয়া গেছে, সেই জায়গাটির নাম ঠেঙ্গারচর। সেখানে বনবিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ একর জমিতে ক্যাম্প করা যেতে পারে বলে মতামত পাঠিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক অফিস। সূত্র জানায়, হাতিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত ঠেঙ্গারচরে কোন জনবসতি নেই। তাই সেখানে খুব সহজেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে এই জমিটি বনবিভাগের। বনবিভাগের কাছ থেকেই জমিটি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসক অফিস। তবে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নিয়ে আনার বিষয়ে প্রতিবাদ করছেন নোয়াখালীর স্থানীয় জনগণ। তবে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক অফিস জানিয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প করা হবে, সেখানে কোন জনবসতি নেই। সেকারণে নোয়াখালীর কোন বাসিন্দার আপত্তি করা উচিত নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস জনকণ্ঠ’কে বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে এনে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছে। সে প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর এলাকার নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকার কারণে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে কারণে এখন থেকে তিন বছর আগে সেখান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে সময় যমুনার নদীর চরাঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে বর্ষাকালে যমুনা নদীর পানিতে সেখানে প্রায় সব চরই ডুবে যায় বলে যমুনার চরে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন মেয়াদে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলতে পুনরায় উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও রয়েছে। সেকারণে এখন পুনরায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এবার ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলা হবে। এদিকে কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরিয়ে নেয়ার সরকারী পরিকল্পনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের উদ্যোগ যৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কেননা প্রত্যন্ত ঠেঙ্গারচর জোয়ারের সময় সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। সেখানে কোন রাস্তা বা বন্যা প্রতিরক্ষারও ব্যবস্থা নেই। তাই সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করাটা কোনভাবেই উচিত হবে না। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে প্রত্যাবাসন করার আগে তাদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা হবে। অমানবিকভাবে সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে না। এছাড়া সেখানে রোহিঙ্গারা যেন কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সে বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
×