ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভারতের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গ্রেট শচীন টেন্ডুলকর, দাদাবাবু সৌরভ গাঙ্গুলী, ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনিও যা পারেননি, সেটিই করে দেখালেন বিরাট কোহলি! দীর্ঘ ২২ বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। অধিনায়ক কোহলি তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজেই দারুণ এই অর্জনে নাম লেখালেন। এর আগে দ্বীপদেশ লঙ্কায় ভারত সর্বশেষ সিরিজ জিতেছিল ১৯৯৩ সালে, মোহাম্মদ আজহার উদ্দীনের নেতৃত্বে। কলম্বোয় সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্টে অতিথিদের জয় ১১৭ রানের বড় ব্যবধানে। ৩৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা কাল শেষদিনে ২৬৮ রানে অলআউট হয়, প্রথম ইনিংসে যারা গুটিয়ে গিয়েছিল ২০১ রানে। ভারতের সংগ্রহ ৩১২ ও ২৭৪। প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রানের দুরন্ত ইনিংসের সুবাদে ম্যাচসেরা অতিথি ওপেনার চেতেশ্বর পুজারা। সর্বাধিক ২১ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরার পুরস্কার পকেটে পুড়েছেন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৩ উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে মঙ্গলবার শেষদিনে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। সকালে শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন ২৭ রান করা কুশল সিলভা। যে অবস্থায় বৃষ্টি অথবা অসাধারণ কোন নৈপুণ্যই বাঁচাতে পারত স্বাগতিকদের। স্রোতের বিপরীতে সেই অসাধারণ স্বপ্নটা জাগিয়ে তুলেছিলেন এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। আফসোস জাগানিয়া সেঞ্চুরির পথে (১১০) ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কুশল পেরেরাকে (৭০) নিয়ে ১৩৫ রান যোগ করেন লঙ্কান অধিনায়ক। এক পর্যায়ে ৫ উইকেটে ২৪২ রান তুলে ভারতের সাজানো মঞ্চে আগুন জ্বালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দু’জনে! ম্যাথুসকে ফিরিয়ে পেসার ইশান্ত শর্মা এ জুটি ভাঙলে স্বাগতিকদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। শেষদিকে শ্রীলঙ্কাকে মুড়িয়ে দেয়ার কাজটি করেন ‘সিরিজের নায়ক’ অশ্বিন। প্রতিরোধ গড়া কুশল পেরেরা ছাড়া রঙ্গনা হেরাথ (১১), আর শেষ ব্যাটসম্যান নুয়ান প্রদীপকে তুলে নিয়ে কোহলিদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন তিনি। এছাড়া পেসার ইশান্ত ৩, যাদব নেন ২ উইকেট। ১ শিকার স্পিনার অমিত মিশ্রর। এর মধ্য দিয়ে অষ্টম ভারতীয় বোলার এবং চতুর্থ পেসার হিসেবে ২শ’ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান ইশান্ত শর্মা। ৬১৯ উইকেট নিয়ে এ তালিকায় সবার ওপরে লেগস্পিন কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে। ৪৩৪ শিকারে দ্বিতীয় স্থানে গ্রেট পেসার কপিল দেব। ম্যাচে ইশান্তের শিকার সংখ্যা ৮। তবে গুরুত্বের বিচারে পুজারার সেঞ্চুরির মূল্য অনেক। তার ১৪৫ রানের সৌজন্যেই প্রথম ইনিংসে ৩১২ রানের আত্মবিশ্বাসী পুঁজি পেয়েছিল ভারত। সার্বিক বিচারে তাই ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে পুজারার হাতে। অধিনায়ক কোহলির জন্য এ সাফল্য মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো! শ্রীলঙ্কার মাটিতে জয় যে কেন দলের জন্যই কঠিন। তার ওপর ধোনির কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে লঙ্কায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। মুখে বললেও বাস্তবতাটা ছিল কঠিন। কঠিন সেই কাজটাই করে দেখালেন ‘ক্রেজি’ কোহলি। ঘোচালেন দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। সঙ্গী হিসেবে পেলেন অশ্বিন, মিশ্র, ইশান্ত, রোহিত-রাহানেদের। ‘০-১এ পিছিয়ে পড়ার পর ২-১এ সিরিজ জেতাটা সহজ নয়। এমনিতে বিদেশের মাটিতে আমাদের ইতিহাস ভাল নয়, সেখানে ২২ বছর পর লঙ্কানদের হারানোর পথে কৃতিত্ব সবার। বিশেষ করে অশ্বিন, ইশান্ত, রোহিতরা অসাধারণ খেলেছে। ভাল ব্যাটিং করেছে পুজারা, লোকেশ রাহুল আর শিখর ধাওয়ানও।’ গলের প্রথম টেস্টে ৬৩ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কুমার সাঙ্গাকারার বিদয়ী ম্যাচে ২৭৮ রানের জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। সিংহলি স্পোর্টস গ্রাউন্ডের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ১১৭ রানের জয়ে সেটিকে ইতিহাসে রূপ দিলেন কোহলি।
×