ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাচ্্ কোচের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ডাচ্্ কোচের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রুমেল খান ॥ ‘আমি বুঝি না একজন কোচ যখন তার দল নিয়ে একটি এ্যাসাইনমেন্টে থাকেন, তখন যাদের দেশে যাদের বিপক্ষে খেলা, তখন তিনি কি করে সেই দেশের গণমাধ্যমকে জানান- আমি তোমাদের দেশের যে কোন লেভেলের ফুটবলের কোচ হতে চাই! ক্রুইফ কোনভাবেই এটা বলতে পারেন না। আমি মনে করি বাফুফের উচিত তাকে শো-কজ করা এবং শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’ সোমবার বিকেলে দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে যিনি এমন চাঞ্চল্যকর ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তিনি আমিুনল হক। অনেকের মতেই বাংলাদেশের সর্বশেষ তারকা ফুটবলার হচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর (ম্যাচ-৫৫, সময়কাল: ১৯৯৮-২০১০) বছর দুয়েক ধরে ঘরোয়া ফুটবল না খেললেও (মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে) এখনও আনুষ্ঠানিক অবসর নেননি। ফুটবলার, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্পোর্টস এ্যাম্বাসেডর, স্পোর্টস এ্যাডভাইজার এবং একটি রাজনৈতিক দলে গত বছর যোগ দেয়া এই ফুটবল জ্যোতিস্কটি হচ্ছেন আমিনুল। ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব এবং এএফসি এশিয়ান কাপের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সফর করছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর তারা ‘এ্যাওয়ে’ ম্যাচটি খেলবে। ইন্টারনেটে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পত্রিকা ঘেঁটে জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের হেড কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ ক’দিন আগেই সেখানকার ‘ফুটবল অস্ট্রেলিয়া ডটকম ডট এইউর এশিয়ান ফুটবল বিশেষজ্ঞ জন দিয়েরডেনকে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ‘টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এটা (কোচের চাকরি) কঠিন সংগ্রামের বিষয়। তবে আমি বিষয়টি উপভোগ করি। আমি অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী। আমার অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং অতীত ইতিহাসের কারণে মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ান সিস্টেমের সঙ্গে সফলভাবে মিশে যেতে পারব।’ ক্র্ইুফের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমিনুল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আছেন বলেই ক্রুইফ আজ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। আর সে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সেখানকারই ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাইছেন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে! এটা অবশ্যই অনুচিত।’ টিভিতে দেখা গেলেও ইন্টারনেটে যেসব বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমী গত ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া ফিফা প্রীতি ম্যাচ দেখেছেন, তাদের অনেকেই বলেছেন, মালয়েশিয়ার মতো সমশক্তির প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যদি বাংলাদেশ এভাবে চরম রক্ষণাত্মক পদ্ধতিতে খেলে ড্র করে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের অবস্থা কি হবে! এ প্রসঙ্গে আমিনুলের ভাষ্য, ‘আমারও একই প্রশ্ন, কোচ ক্রুইফ কেন ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলালেন দলকে। এটা ঠিক অস্ট্রেলিয়া এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন দল। খুবই শক্তিশালী। তাদের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক খেলবে বাংলাদেশ, এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই সঙ্গে লক্ষ্য থাকবে তাদের কম জায়গা দিয়ে খেলানো। আমার অভিমত হচ্ছে এখন মালয়েশিয়াকে যদি অস্ট্রেলিয়া দল ভেবে এভাবে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলানো হয়ে থাকে, তাহলে এটা চরম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যে ফর্মেশনে খেলানো হবে, সেই একই ফর্মেশনে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে কেন খেলানো হবে, যেখানে ওরা আমাদের সমমানের দল! ওই ম্যাচটি ড্র হলেও মালয় ফুটবলাররা যেভাবে আমাদের রক্ষণভাগকে তছনছ করে ফেলছিল, তা ছিল ভীষণ দুষ্টিকটু, পীড়াদায়ক এবং উদ্বেগের। এখন দেখার বিষয়, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচে কোচ বাংলাদেশকে কোন স্টাইলে খেলান।’ গত বছরের ২৭ অক্টোবর রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বসে আমিনুল উপভোগ করেছিলেন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি সিরিজ ম্যাচ। সে ম্যাচে ১-০ গোলে জয় পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ক্রুইফের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় ওই ম্যাচে ভারপ্রাপ্ত কোচ ছিলেন সাইফুল বারী টিটু। ওই ম্যাচের তিনদিন পর আমিনুল জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে বলেছিলেন, ‘বাফুফের এখন কোন দেশী কোচ নিয়োগ দেয়া উচিত। বিদেশী কোচ আনলে বেশি খরচ। বাফুফেরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। খেলোয়াড়দের চিনতে চিনতে অনেক সময় লেগে যায় তাদের। এ জন্য বলব বাংলাদেশী কোচই নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ তারা প্লেয়ারদের ভালমতো চেনেন। এমন মানসম্পন্ন কোচদের মধ্যে আছেনÑ সাইফুল বারী টিটু, শফিকুল ইসলাম মানিক এবং মারুফুল হক। জাতীয় দলকে হ্যান্ডেল করার মতো সক্ষমতা ও যোগ্যতা তাদের ভালমতোই আছে।’ অস্ট্রেলিয়ার তিন তারকা ফুটবলার খেলতে পারবেন না বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে। তবে এ নিয়ে উল্লিসিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান আমিনুল, ‘ওদের তিন খেলোয়াড় নেই বলে আমাদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। এতে হয়তো তাদের শক্তিমত্তা বিশ থেকে উনিশে নামবে। ওই তিন জনের বিকল্প হিসেবে যারা খেলবেন, তারাও টপ ক্লাস খেলোয়াড়।’ বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই, তাই তাদের ওপর কোন চাপও নেই বলে মনে করেন আমিনুল, ‘তবে অস্ট্রেলিয়াও চাপে থাকবে না। কারণ তাদের ফুটবল অনেক পরিকল্পিত ও উন্নত। ওদের লেভেলে যেতে আমাদের অনেক সময় লাগবে। ওরাই ফেবারিট। কিন্তু আমাদের হারানোর কিছু নেই, ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। ওদের মতো বিশ্বকাপ খেলা দলের সঙ্গে খেলে আমাদের খেলোয়াড়দের প্রাপ্তিই হবে বেশি। ফল যাই হোক, তাদের সঙ্গে খেলে মামুনুলরা যা শিখবে, সেটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অনেক কাজে লাগবে।’
×