স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রায় ১৩ বছর আগে বগুড়ায় সামাজিক প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছিল তা ভেস্তে যেতে বসেছে। লোকবলের সঙ্কট ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর অর্ধেক বন্ধ হওয়ায় কেন্দ্রটি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। তবে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী শীঘ্রই এই অচলায়তন কেটে যাবে! সামাজিক প্রতিবন্ধী নারীদের সংশোধনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে বগুড়া শহরতলির বারবাকপুরে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারী এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত। সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানের পুলিশ ও বেসরকারী সংস্থা কর্তৃক উদ্ধারকৃত যৌনকর্মী কিশোরী মেয়েদের সংশোধন ও প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় এই কেন্দ্রে। আসন সংখ্যা একশ’। ভর্তির পর এদের পরিচিতি হয় নিবাসী। গত প্রায় এক যুগে এই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ২৩৮ জন। কাউন্সিলিং ও প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার পথ করে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের থাকতে হয়। খরচ বহন করে সরকার। এই কেন্দ্রে নিবাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য চারটি বিষয় নির্ধারণ করা আছে।
এগুলো হলো- ইলেকট্রনিক্স, বাটিক ও স্ক্যান প্রিন্টিং, সেলাই ও এমব্রয়ডারি, সবজি আবাদ ও হাঁসমুরগি পালন। লোকবলের সঙ্কটে চারটি ট্রেডের মধ্যে দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাকি দুটি টলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স মেকানিকসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠে নামলেই রোজগার। এমন একটি ট্রেড দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। চাষাবাদ ও পোলট্রি সেকশনটিও বন্ধ হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষের কথা- প্রশিক্ষকের ওই দুটি পদ শূন্য হওয়ায় এ অবস্থা। এই কেন্দ্রে চাকরি স্থায়ী হওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছুদিন কাজ করে ভাল সুযোগ পেলেই চলে যান। এভাবে এই কেন্দ্রে সৃষ্টি করা ২৯টি পদের মধ্যে বর্তমানে ১৯টি পদই শূন্য হয়ে আছে।
শুরুতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের বিপরীতে ২৯টি পদেই লোকবল নিয়োগ করে বলা হয়েছিল, প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হওয়ার সঙ্গেই অস্থায়ী পদগুলো স্থায়ী হবে। দীর্ঘ সময়েও তা হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতাশায় পড়েন। এক পর্যায়ে বেতন ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেন। এভাবে এই কেন্দ্রের কারিগরি প্রশিক্ষণ চিকিৎসক ফার্মাসিস্ট নার্স অফিস সহকারী কাউন্সিলিংয়ের চিকিৎসক ধর্মীয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদের ১৯টি শুন্য হয়ে রয়েছে। বর্তমানে ব্যবস্থাপকসহ কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। তাদের অবস্থাটি জুতা সেলাই থেকে চ-িপাঠের মতো হওয়ায় কোনটিই ঠিক মতো হচ্ছে না। নিবাসীদের কেউ অসুস্থ হলে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্তমানে নিবাসীর সংখ্যা আসনের এক-দশমাংশ। যে দুটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষকদের হতাশায় তাও প্রায় নিভুনিভু। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিবাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিতে কাজ করা হচ্ছে, এমনটি জানিয়ে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আশাবাদী হয়ে জানালেন; পদগুলো শীঘ্রই রেভিনিউ খাতে গেলে অচলায়তন কেটে যাবে।