ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গত বছরের ৩১ আগস্ট দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ২,৪১৫ রোহিঙ্গা নিতে রাজি হয় মিয়ানমার

প্রতিশ্রুতির এক বছরেও ফেরত নিতে উদ্যোগ নেই মিয়ানমারের

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩১ আগস্ট ২০১৫

প্রতিশ্রুতির এক বছরেও ফেরত নিতে উদ্যোগ নেই মিয়ানমারের

তৌহিদুর রহমান ॥ প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিলেও মিয়ানমারের কোন সাড়া নেই। দেশটি রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতির পর প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো কোন উদ্যোগ নেয়নি। গত বছর ৩১ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। তখন উভয় দেশের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে দুই মাসের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেকটাই পিছিয়ে যায়। এরপর গত বছর নবেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার থেকে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের কমিটির চূড়ান্ত তালিকা মিয়ানমার সরকারের নিকট পাঠানো হয়। বাংলাদেশ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরে মিয়ানমারের জবাবের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখনো কোন সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধি নিয়ে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ১০ সদস্যের কমিটির একটি গঠন করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে প্রধান করে বাংলাদেশ অংশের এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তালিকা মিয়ানমার সরকারের নিকট পাঠানো হয়। এরপর মিয়ানমার সরকার থেকেও একটি কমিটির তালিকা পাঠানোর কথা। মিয়ানমারের কমিটির তালিকা পাওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। দুই দেশের যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে কক্সবাজারের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। তবে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে দুইটি দেশের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই দেশের কমিটি থেকে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিই বাংলাদেশ থেকে এই আড়াই হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করবে। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিটির প্রধানকে (আরআরআরসি) নিয়ে বাংলাদেশ অংশের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তালিকা মিয়ানমারকে পাঠানোর পরে দেশটি আর কোন সাড়া দেয়নি। তাই কবেনাগাদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়ে এখনই কেউ বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক আসুদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার রাজি হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এখনো তাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়নি। তবে এসব নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কার্যক্রম চলছে বলেও তিনি জানান। সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা থেকে বাংলাদেশী নাগরিক উদ্ধারের পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ও বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে আটকের ঘটনায় মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়। মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা থেকে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক উদ্ধারের পর তাদেরও বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে অভিহিত করে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দেয় মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ সরকার থেকে বলা হয়, বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে বাংলাদেশী নাগরিকদের ফিরিয়েও আনে সরকার। এছাড়া বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে আটকের ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার। তারপর থেকে এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করেন। গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন। তবে এর সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেন, যেসব রোহিঙ্গা নিজেদের বাঙালী হিসেবে স্বীকার করে নেবেন, তাদেরই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে মিয়ানমার সরকারের ওই প্রস্তাব রোহিঙ্গারা প্রত্যাখান করেন।
×