ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার

সোহ্ রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর- শোকার্ত মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩১ আগস্ট ২০১৫

সোহ্ রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর- শোকার্ত মানুষের ঢল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বর স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধুর বাসভবন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথই যেন পরিণত হয়েছিল শোক মিছিলে। হাতে কালো পতাকা, পরনে কালো গেঞ্জি, মাথা ও হাতে কালো ব্যান্ড আর হাতে কালো ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সম্পূর্ণ শোকের আবহে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে রবিবার রাজধানীতে বিশাল শোক মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ৪০ দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর ধানম-ি পর্যন্ত এই শোক শোভাযাত্রাটি হয়। সুদীর্ঘ পথ হেঁটেই দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী শোক মিছিলে অংশ নিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সুবিশাল এই শোক মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বিশাল এই শোক মিছিলের উদ্বোধনকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, রায়ও কার্যকর হয়েছে। কিন্তু সব ঘাতকের বিচারের রায় এখনও কার্যকর হয়নি। খুনীদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতিকে কেউ খুন করে যদি বাংলাদেশে আশ্রয় নিত তখন আপনারা কী করতেন? ড্রোন পাঠিয়ে সবকিছু সাফ করে দিতেন। আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন আবার খুনীদের আশ্রয় দেন। আপনারা ‘ডাবল স্টান্ডার্ড’। দুপুরের আগেই ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দুটি ট্রাক জোড়া লাগিয়ে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। বিকেল তিনটায় শোক মিছিলপূর্ব সমাবেশের সময় নির্ধারণ করা হলেও দুপুর আড়াইটা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন থেকে আসতে থেকে শোক মিছিল। জনসভা শুরুর আগেই মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত দীর্ঘপথ লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার কেউ ট্রাক নিয়ে শোক মিছিলে অংশ নেননি। সম্পূর্ণ শোকের আবহে হাতে কালো পতাকা, বুকে কালো ব্যাজ, বঙ্গবন্ধুর বিশাল বিশাল ডিজিটাল ছবি আর ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য মিছিল মিলতে থাকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে। তিনটার পর থেকেই ঢাকা মহানগরীর ৪৯ থানা, এক শ’টি ওয়ার্ড, ১৭ ইউনিয়ন এবং ১৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে একযোগে শোক মিছিল সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাত্রা শুরু করলে কার্যত পুরো ঢাকায় যেন কিছু সময়ের জন্য থমকে যায়। হেঁটে হাজার হাজার মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে সোহরাওয়ার্দীর সামনে। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শোক মিছিলটি শুরু হয়, তখন মিছিলের অগ্রভাগ সায়েন্স ল্যাবরেটরি পার হয়ে কলাবাগান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুরো মিছিল শেষ হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা মহানগরী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও বিশাল বিশাল শোক মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। বিশেষ করে সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে তৈরি গেঞ্জি পরিধান করে বিশাল একটি শোক মিছিল সবার দৃষ্টি কাড়ে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে থেকে শোক মিছিলটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, রাসেল স্কোয়ার হয়ে ধানম-ির ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোক র‌্যালি শেষে নেতাকর্মীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শোকর‌্যালিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম হলেও শৃঙ্খলার অভাব ছিল লক্ষণীয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে ও আবদুল হক সবুজের পরিচালনায় শোক মিছিলপূর্ব সমাবেশে মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, নগর নেতা খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মুুকুল চৌধুরী, ফয়েজউদ্দিন মিয়া, শেখ বজলুর রহমান, শাহে আলম মুরাদ, ডাঃ দিলীপ রায়, মকবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘ন্যায় বিচার’ এটা সকল দেশের জন্য। সবার জন্য সমান। আমরা দেশের জন্য এই ন্যায় বিচার চাই। এই ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে কিন্তু তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আপনার আত্মা কোথায় আছে জানি না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আপনার আত্মা এসে দেখে যাকÑ আপনার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাচ্ছে, পরিধেয় বস্ত্র পরছে, মানুষের মতো জীবন-ধারণ করছে। তিনি বলেন, আমরা যে যত কথাই বলি না কেন ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার আগমন না হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পেতাম না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ১৯৭৫-পরবর্তী এমন কেউ ছিল না! এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনের পথে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের এই উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াতের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, যারা দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ধ্বংস করতে চায়, সেসব পাকিস্তানী এজেন্টের যতদিন পর্যন্ত নিঃশ্বেষ করা না যাবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রকৃত সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। অতি দ্রুত বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রবিরোধী জঙ্গীবাদী বিএনপি-জামায়াত অপশক্তিকে চিরতরে উৎখাত করাই হোক আজকের শপথ। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন, গণতন্ত্র-আইনের শাসনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই এখন থেকেই এসব অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
×