ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ আব্দুল মমিন ॥ ভাটি বাংলার গর্ব

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ জুলাই ২০১৫

একুশ শতক ॥ আব্দুল মমিন ॥ ভাটি বাংলার গর্ব

জুলাই মাসটা আমার নিজের জন্য দারুণভাবেই শোকের। ১৯৭৯ সালের এই মাসের ১৮ তারিখে আমার বাবা মারা যান। ২০১১ সালের ২১ জুলাই আমার মায়ের মৃত্যু হয়। একই তারিখে আমার প্রিয় মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে জিয়াউর রহমান ফাঁসিতে ঝুলান। এই মাসের ২০ তারিখে রয়েছে প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই মাসেরই ১৫ তারিখে আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ আব্দুল মমিনের চিরবিদায়ের দিন। কাকতালীয়ভাবে ওরা সবাই আমার নিজ জেলা নেত্রকোনার মানুষ। শুধু বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন ব্যতীত এই মাসে আমার নিজের বা দেশের মানুষের আনন্দিত হওয়ার সুযোগ নেই। এই মাসে প্রতিবছরই আমি কাউকে না কাউকে নিয়ে লিখেছি। বীর তাহের, আমার মা-বাবা সবাই আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য পেয়েছেন। আমি কেবল আব্দুল মমিনকে নিয়ে এর আগে লিখিনি। আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে যদি তাকে নিয়ে কিছু বলা না হয় তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি অকৃতজ্ঞ হয়ে যাব। প্রথমেই বলে রাখা ভাল শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আব্দুল মমিন ভাটি বাংলার মানুষ, যেমনটি তাহের ও হুমায়ূন আহমেদÑ তবে তারা বাংলাদেশের কৃতী সন্তান। আমরা যারা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পশ্চাৎপদ ও প্রাকৃতিকভাবে ভিন্নতর হাওড় অঞ্চলের মানুষ তাদের জন্য গর্ব করার মতো রাজনৈতিক নেতা একেবারে কম তেমন কথা বলা যাবে না। জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতার কথাই আমরা উল্লেখ করতে পারি। মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ হাওড়ের অন্যতম জেলা সুনামগঞ্জের হাওড়পাড়ের মানুষ ছিলেন। তিনি কেবল দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই হননি, তিনি জাতীয় নেতা হিসেবে পুরো দেশের কাছে সম্মানিত হয়ে আছেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের বাড়ি সরাসরি হাওড়ে না হলেও তিনিও হাওড়পাড়ের মানুষ ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নানার বাড়ি হাওড়ে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এ এম এস কিবরিয়ার বাড়িও হাওড়পাড়ে। হাওড়ের আরেকজন বড় রাজনীতিক বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তার বাড়িটা একেবারে হাওড়েই বিরাজ করে। হাওড়ের দুটি উপজেলাÑ শাল্লা ও দিরাই নিয়ে তার সংসদীয় আসন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নানার বাড়ি হাওড়ে। তবে মরহুম আব্দুল মমিন রাজনীতি করেছেন পুরোটাই হাওড়কেন্দ্রিক জনপদকে ঘিরে। তার নির্বাচনী এলাকা খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ ও মদনের প্রায় পুরোটাই হাওড়। মমিন সাহেবের বাড়ির উঠোনে বসে চোখে পড়ে বিখ্যাত ডিঙ্গাপোতার হাওড়। উঠোনে পায়চারি করলেই তার গায়ে লাগত হাওড়ের বাতাস। সেজন্য হাওড়ের পাড়ে হলেও তাকে রাজনীতির পুরো সময়টা একেবারে হাওড় অঞ্চল নিয়েই কাটাতে হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি তার থানার সঙ্গে বারহাট্টা পেয়েছিলেন বলে হাওড়ের বাইরের জনপদে রাজনীতি করতে পেরেছিলেন। আরও একবার দুটি আসনে নির্বাচন করার সময় তিনি নেত্রকোনা-বারহাট্টা অঞ্চলের প্রতিনিধি ছিলেন। তবে বাস্তবতা হলো, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিলেও হাওড়ের মানুষের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল ছিলেন তিনি। আমার সঙ্গে তার পরিচয়ের সূত্রও রাজনীতির সূত্রেই। ছাত্র জীবনে যখন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম তখনও তাকে চিনতাম। তবে তার পরিচয়টি তখন আমার কাছে ছিল মরহুম তাজউদ্দীন আহমদের বন্ধু এবং খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে। তিনি যে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন সেটিও জানতাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সুদীর্ঘ সময়জুড়ে রাজনীতি করেছেন এবং সেই সময়কার রাজনীতির প্রগতিশীল ধারাটির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন সেই বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট ছিল। তবে স্বাধীনতার আগে এবং পরে আমি তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হইনি। সেই সুযোগও ছিল না। ১৯৭২ সালে যখন জাসদ গঠিত হয় তখন এক ধরনের কানাঘুষা ছিল যে আওয়ামী লীগের বাম ঘেঁষা নেতৃবৃন্দ জাসদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এই সহানভূতিশীল নেতার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন মরহুম তাজউদ্দীন আহমদ। আব্দুল মমিনের নামও তখন শুনেছি। কিন্তু সরাসরি ব্যক্তিগত পরিচয় হয় তার নির্বাচনী এলাকার রাজনীতির সূত্রে। আমি আমার ছাত্রজীবনে নেত্রকোনার কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। গোলাম এরশাদুর রহমান ও হায়দার জাহান চৌধুরী জাসদ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের এমপি খালেক সাহেব ৭০ সালে নির্বাচনের সূত্র ছাড়াও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কারণে আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নেত্রকোনার আর কোন রাজনীতিবিদের সঙ্গে আমার এত ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু ৭২ সালে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগটা রাজনৈতিক কারণেই বন্ধ হয়ে যায়। আমি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ার আগের যোগাযোগের সূত্রটাতে ছেদ পড়ে। তবে খালেক সাহেবের সঙ্গে আমার বাবার সম্পর্কটা আজীবন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে আমার বাবা পীর আবদুল জব্বার তালুকদার আওয়ামী লীগের খালিয়াজুরি থানা ইউনিটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খালেক সাহেবসহ নেত্রকোনার বড় বড় রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিচিত হন। অনেকেই বাবার বন্ধু ছিলেন। মমিন সাহেব, সদরুদ্দিন সাহেব, আখলাক সাহেব এবং ফজলুর রহমান খান সাহেবের সঙ্গে বাবার ওঠাবসা ছিল নিয়মিত। বাবার মৃত্যুর পর আমার ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া জব্বার থানা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসে। ক’দিন আগেও সে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল। মমিন সাহেব খুব সঙ্গত কারণেই কিবরিয়াকে ভাল করে চিনতেন এবং একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তাকে গড়ে তুলেন। কিবরিয়াকে মমিন সাহেবের একেবারে ঘরের মানুষ বললেও ভুল হবে না। তিনি কিবরিয়াকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। বিশ্বাসও করতেন পরমভাবে। মমিন সাহেবের পারিবারিক বিষয় থেকে রাজনীতির সর্বোচ্চ বিষয়গুলো মমিন সাহেব কিবরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতেন। কিবরিয়া মমিন সাহেবকে পিতৃতুল্য সম্মান দিত। মমিন সাহেবের স্ত্রী রেবেকা মমিন এবং কন্যা জয়ার সঙ্গে কিবরিয়ার সম্পর্ক এখনও পুরোই পারিবারিক। মমিন সাহেবকে অনেকেই বদরাগী, বদমেজাজী বা বন্ধুহীন মনে করে থাকেন। এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। মমিন সাহেব কিবরিয়ার সঙ্গে যেভাবে কথা বলতেন বা যেভাবে আচরণ করতেন তাতে তাকে একজন অতি সজ্জন মানুষ হিসেবেই চেনা যেত। তার বন্ধুদের মাঝে টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান অন্যতম ছিলেন। ছোট ভাই কিবরিয়ার সূত্র ধরেই আমার সঙ্গে মমিন সাহেবের পরিচয়। আমি কিবরিয়ার মতো তার এতটা কাছের মানুষ ছিলাম না। তবে মমিন সাহেবের স্নেহ পেয়েছি আমি অবারিত। তিনি আমাকে যতটা সম্মান দিয়েছেন তার কোন তুলনা নেই। আমার মনে হয় না নেত্রকোনা অঞ্চলের ছোট-বড় কোন রাজনৈতিক নেতা মমিন সাহেবের মতো এতটা সম্মান দিয়েছে। তিনিই আমাকে এক রকম জবরদস্তি করে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে টেনে নেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত এখনও সেই রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে হতো। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি এজন্য যে, রাজনীতির প্রায় সকল কথাই তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। আমার সাধ্যমতো আমি তাকে আমার মতামত দিতাম। তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আমার মতামতকে গ্রহণ করতেন। সচরাচর যেমনটি আমাদের দেশের রাজনীতিতে হয় সেটি হচ্ছে যে এমন পর্যায়ের নেতারা তাদের কাছাকাছি কাউকে সামনে ঠেলে দেন না। আমি তাকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখেছি। তিনি কারও কারও কাছ থেকে শুনতেন যে, আমি নির্বাচনী মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারি। এক ধরনের পরিচিতি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লেখাপড়া করার ফলে আমার যে সেখানে যাওয়ার একটি সুযোগ আছে সেটি তিনি জানতেন। ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা আমাকে নির্বাচন করতে বলেছিলেন সেটিও তিনি জানতেন। তেমন অবস্থায় আমাদের দেশের রাজনীতিকরা সচরাচর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে দূরে ঠেলে দিয়ে থাকেন বা কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন। আমি মমিন সাহেবের কাছ থেকে ঠিক উল্টো ব্যবহার পেয়েছি। তিনি আমাকে সামনে এগিয়ে দিতেন বা যেখানে আমার বক্তৃতা দেয়ার কথা নয় সেখানেও আমাকে ঠেলে দিতেন। আমি তার সঙ্গে ছায়ার মতো গ্রামে গ্রামে বা বাড়িতে বাড়িতে তার দুটি নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেছি। নিজে সব সময়ে তিনি নজর রাখতেন আমার কোন অসুবিধা হলো কিনা, আবার সকলকে তটস্থ করে রাখতেন যেন আমার প্রতি যথাযথ নজর দেয়া হয়। আমি তার বাড়িতে একান্ত আপনজন হিসেবে থাকতাম। আমি ঠিক জানি না আমার বয়সী কেউ মমিন সাহেবের সঙ্গে একই ঘরে, পাশাপাশি খাটে কোন রাত কাটিয়েছেন কি-না। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মোহনগঞ্জে তার নিজের বাড়িতে তেমন একটি বিনিদ্র রাত কাটাবার। আমি সেই রাতটি কেবল কথা বলে কাটিয়েছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাজনীতির সকল বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা তাজউদ্দীনের রাজনীতি কিংবা তাজউদ্দীনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দূরত্ব সব নিয়েই কথা বলেছেন। তিনি অপেক্ষাকৃত মুখচোরা মানুষ ছিলেন। সচরাচর নিজের ঢোল নিজে পেটানো পছন্দ করতেন না। কেউ তার ঢোল পেটাক সেটাও চাইতেন না। কেউ তাকে অকারণে তোষামোদ করে পার পেত না। তার রাজনীতি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। মানুষকে তিনি তার কর্মের বিচার দিয়ে চিনতেন। খুব সহজেই বুঝে ফেলতেন কার কি উদ্দেশ্য। নীতির প্রশ্নে কোনদিন আপোস করতেন না। কখনও রাজনীতিকে নিজের, দলের বা কর্মীদের লোভ লালসার বিষয় হতে দেননি। কোন অন্যায়ের পক্ষে তিনি দাঁড়াতেন না। ন্যায়ের পক্ষে যত অপ্রিয় বিষয়ই হোক তিনি সেটি বলতেন। দেশের রাজনীতি ছাড়াও সকল বিষয়েই তিনি প-িত ছিলেন। এমন কোন বিষয় নেই যেটি সম্পর্কে তিনি ন্যূনতম জ্ঞান রাখতেন না। আমার নিজের বিবেচনায় সারা জীবনে একটি কাজের জন্য তিনি অনুশোচনা করেছেন। সেটি হলো, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি মুশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়াটাকে নিজের বিবেচনায় সঠিক কাজ মনে করেননি। তিনি মনে করতেন, অনেক চাপে পড়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার মতে সেটি যদি তাকে না করতে হতো তবে জীবনে কোন কাজের জন্য তাকে অনুশোচনা করতে হতো না। ফলে তিনি সুযোগ পেলেই এই বিষয়ে আত্মসমালোচনা করতেন। আমার জানা মতে সারা জীবনে তিনি আর কোন রাজনৈতিক ভুল করেছিলেন বলে আমি জানি না। এই ভুলের জন্য তাকে রাজনীতিতে মূল্যও দিতে হয়েছে। তিনি যে ’৯৬ সালে সরকারের অংশ হতে পারেননি তার অন্যতম কারণ ছিল ১৯৭৫ সালের সেই ঘটনা। একটি সম্পন্ন পরিবারের মানুষ হিসেবে তিনি বরাবরই সচ্ছল জীবনযাপন করেছেন। অর্থকষ্ট বলতে তার কিছু ছিল না। কিন্তু কখনও তাকে কোন বিলাসী জীবনযাপন করতে দেখিনি। প্রয়োজনের বাইরে কোন কিছুতে তার কোন আগ্রহ কেউ কোনদিন দেখেনি। আমি তার পরিবারে তেমনটা যেতাম না। মাঝে মধ্যে তার বসবাসের জায়গায় গিয়ে দেখিছি, অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত সচ্ছল পরিবারের মাঝে তিনি বাস করতেন। তিনি আর্থিক বিবেচনায় রাজনীতি করার ছকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি কখনও মনে করেনিনি যে কর্মী বা নেতাদের পক্ষে রাখার জন্য টাকা বা সুযোগ-সুবিধা উপহার দিতে হবে। তিনি নিজে কোন সুযোগ নেননি অন্যকে সুযোগ নিতে হবে সেটি পছন্দও করেননি। মমিন সাহেবের সবচেয়ে বড় গুণটি ছিল এই যে, তিনি কখনও মানুষকে ছোট করে দেখতেন না। গ্রামের অতি সাধারণ মানুষটি তার সামনে বসে যেভাবে কথা বলতে পারত, দলের একজন বড় নেতাও সেভাবেই তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। তবে আমি বরাবরই দেখেছি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও তার সঙ্গে কথা বলার সময় তটস্থ থাকত। কিন্তু যারা তাকে জানত তাদের আসলে কোন সঙ্কোচ থাকত না- যেমনটা আমার ছিল না। তিনি কখনও কোন গোপনীয়তায় বিশ্বাস করতেন না। আমি তাকে কখনও কানে কানে কোন কথা বলতে দেখিনি। রাজনীতিতে তিনি স্বচ্ছতা বজায় রাখতেন। কারও কোন ত্রুটি পেলে তিনি সেটি সরাসরি তার সামনেই বলতেন। তিনি কখনও রাজনৈতিক কোন্দল পছন্দ করতেন না। যাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার তিনি সেটি সেভাবেই করতেন। দুর্ভাগ্য যে আমাদের অনেক রাজনীতিক মমিন সাহেবের মতো নন। তারা মমিন সাহেবের মতো নীতি বা আদর্শচর্চা করেন না। যদি তেমনটি হতো তবে আমাদের দেশটা আরও দ্রুত অনেক সামনে যেতে পারত। তার মৃত্যবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানাই এবং কামনা করি তার মতো রাজনীতিকরাই দেশের নেতৃত্ব দিক। ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০১৫ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক ॥ ই-মেইল : [email protected] ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com
×