ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

আগামী মাসের মাঝামাঝি ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৫ জুলাই ২০১৫

আগামী মাসের মাঝামাঝি ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানির সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ১০ জিবিপিএস (১০ গিগাবাইট) ব্যান্ডউইথ রফতানির মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ব্যান্ডউইথ আমদানির পরিমাণ বাড়াবে ভারত। ভারতের পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে নেয়া ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হবে। ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বিটিসিএল কেবল স্থাপনের কাজ শেষ করছে। আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত এই কেবল চলে গেছে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ম্যানহোল। এ ম্যানহোলে আগরতলা থেকে আসা কেবল সংযুক্ত হবে। দুই দেশের মধ্যে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আরেকটি ম্যানহোল নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত এ ম্যানহোলে কেবল সংযোগ হবে। আর এটা হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যান্ডউইথ রফতানির কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, আগামী ১৫ অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ব্যান্ডউইথ রফতানি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই দিন দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী হওয়ায় দু’একদিন আগে পরে ব্যান্ডউইথ রফতানির কাজটি হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় গত ৬ জুন ব্যান্ডউইথ রফতানির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মধ্যে এ চুক্তি হয়েছে। এর আগে বিএসসিসিএলের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ ভারতে রফতানি চুক্তি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। চুক্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ ভারতে রফতানি করলে দেশে ব্যান্ডউইথের কোন সঙ্কট হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ে চুক্তি অনুযায়ী ১০ জিবিপিএস (১০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিজে সরবরাহ করা হবে। এতে বছরে বৈদেশিক মুদ্রায় ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা আয় করবে সরকার। এ চুক্তির মেয়াদ তিন বছরের জন্য করা হযেছে। চুক্তি অনুসারে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ রফতানি ৪০ জিপিবিএস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। বিএসসিসিএল একমাত্র সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৪ এর কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া হয়ে আগরতলা দিয়ে এ ব্যান্ডউইথ রফতানি হবে। ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য টেলিযোগাযোগের আন্তঃসংযোগ চালু করার চুক্তি স্বাক্ষরের পর এ সংক্রান্ত কাজ ভারতও সীমান্ত পর্যন্ত শেষ করেছে। বাংলাদেশের আখাউড়াকে কক্সবাজারের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে ফর ইন্টারনেট সার্ভিসের সঙ্গে সংযুক্ত করতেই যৌথভাবে কাজটি করবে দুই দেশ। ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং আখাউড়ার স্থলভাগ দিয়ে লিংক সাবমেরিন কেবল গিয়ে সংযুক্ত হবে ভারতের গুয়াহাটিতে। অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর ক্ষেত্রে এ বিষয়ে রেলওয়ের সঙ্গে কাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে ২০৮ গিগাবাইট অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ থেকে ৪০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ভারতে রফতানি করবে। ভারত যতটুকু ব্যান্ডউইথ চেয়েছে তার দ্বিগুণ ব্যান্ডউইথ রফতানি করা সম্ভব। দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বেড়ে চলার কারণে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হবে। বর্তমানে দেশের ভেতরেও ব্যান্ডউইথ চাহিদা বাড়ছে। দেশে সাড়ে চার কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। যাদের বড় অংশই পর্যাপ্ত গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। গতি বাড়াতে হলে তাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দিকে যেতে হবে। তাতে ব্যান্ডউইথের চাহিদাও বাড়বে। এছাড়া তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির জন্যও ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। সবকিছু মাথায় রেখেই ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত রাজ্যগুলোর জন্য ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে চায় ভারত। তারা বাংলাদেশের আখাউড়া অংশ দিয়ে ত্রিপুরা এবং বাংলাবান্ধা অংশ দিয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ নিতে চায়। তবে এসব অংশে লিংক কেবল নেই। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে লিংক লাইন স্থাপন করার কাজ শুরু করা হবে। বিএসসিসিএল জানিয়েছে, বর্তমানে ২শ’ জিবিপিএস (গিগাবাইট) ব্যান্ডউইথসহ সাবমেরিন কেবলে (সি-মি-উই-৪) সংযুক্ত আছে বাংলাদেশ। এই কেবলের মাধ্যমে আসা ব্যান্ডউইথের মধ্যে প্রায় ৩০ জিবিপিএস দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। অব্যবহৃত রয়ে গেছে ১৭০ জিবিপিএস। আগামী বছরের শেষদিকে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-উই-৫ বা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হবে দেশ। এই কেবলের মাধ্যমে দেশে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ আসবে দেশে। বাংলাদেশে বিকল্প পথে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ আনার জন্য সি-মি-উই-৫ নামের নতুন কেবল কনসোটিয়ামের সদস্যপদ নিয়েছে। বাংলাদেশ সিমিইউ-৪ এর (সাউথ এশিয়া-মিডেলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) কেবলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এর মালিক হচ্ছে ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছেÑ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। সিমিউই-৫ নতুন কনসোটিয়ামটি গঠিত হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। কনসোটিয়াম কেবলটির কাজ শুরু করেছে তিন বছর আগে থেকেই। আগামী বছরের শেষনাগাদ এই কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের কাজ শুরু হবে। তখন দেশে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ আসবে। এই ব্যান্ডউইথ দেশে ব্যবহার করেও বিদেশে রফতানি করা যাবে।
×