ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম টেস্ট ॥ বৃষ্টিতে ভেসে গেল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৫ জুলাই ২০১৫

চট্টগ্রাম টেস্ট ॥ বৃষ্টিতে ভেসে গেল সম্ভাবনা

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অনেক সম্ভাবনা ছিল। নাটকীয়তা, রোমাঞ্চের অপেক্ষা ছিল। উভয় দলের প্রতীক্ষা ছিল ময়দানী লড়াইয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার। কিন্তু সবকিছুরই অপমৃত্যু ঘটল। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে অঝোর বৃষ্টি ঝরল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আর তাতেই বলই মাঠে গড়াতে পারেনি। ভেসে গেল সব সম্ভাবনা। সবাই যখন কি ঘটবে চট্টগ্রাম টেস্টে সেই বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত তখন হয় তো আড়াল থেকে ভাগ্যদেবী মুচকি হেসেছিলেন। কারণ প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টির বাগড়া থাকার কথা থাকলেও টাইগার-প্রোটিয়ারা লড়াইয়ের সুযোগ পেয়েছে এবং অনেক সম্ভাবনার জন্মও দিয়েছে। সে কারণেই কে এগিয়ে সেটা নিয়ে তৃতীয় দিনশেষে উভয় শিবিরই নিজেদের পক্ষে কথা বলেছে এবং চতুর্থ দিন নিজেদের সেরাটা দিয়ে জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। কিন্তু সে সব কিছুই ঘটল না। ভাগ্যদেবী নিষ্প্রাণ একটি ড্র নির্ধারণ করে রেখেছিল। চরম অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য কিছু আজ পঞ্চম দিনে না ঘটলে সেই নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা এমনটাই বলছেন। তবে এখনও এগিয়ে আছে টাইগাররা ১৭ রানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৬১! তবে আজ শেষদিনেও কিয়ৎ পরিমাণ সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য লড়াইয়ে নামতে পারবে কি না দু’দল সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আজ পঞ্চমদিনের আবহাওয়া রিপোর্টও বলছে আজ ৯০ ভাগ আশঙ্কা আছে ঝড়ো হাওয়ারসহ বৃষ্টির। সাগরিকায় বৃষ্টি থামেনি। আগের দিন বিকেলে শুরু হওয়ার পর সন্ধ্যায় বিরতি নিলেও রাত থেকেই বৃষ্টি হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল সে কারণে মাঠেই আসেনি শুক্রবার। হোটেলে সময় কাটিয়েছে। তবে বেলা বাড়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠে আসেন এবং ইনডোরে অনুশীলন করেন। তবে স্টেডিয়াম সংলগ্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে হোটেলে ফিরে যান অনেকেই। শুধু অধিনায়ক মুশফিক এরপরও ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে গেছেন দলের চার বোলার মোহাম্মদ শহীদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেনকে নিয়ে। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড পরিস্থিতি বিবেচনা করে চতুর্থ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে বৃষ্টি। আজ পঞ্চমদিনের আবহাওয়া রিপোর্টও বলছে যে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আত্মবিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গেই ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিল। তৃতীয় দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলেছে তারা সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে। এ কারণেই উজ্জীবিত প্রোটিয়া শিবির বলেছিল, ‘বৃষ্টির কারণে অনেক সময় অপচয় হয়েছে। নয় তো এ টেস্টের চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারত। আজ শনিবার আমাদের লক্ষ্য ভাল খেলে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার।’ একই আশায় ছিল বাংলাদেশ দলও। কারণ ১৭ রানে এগিয়ে থাকার কারণে উজ্জীবিত বাংলাদেশ আশা করছিল দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলআউট করে দেয়ার। টাইগার শিবির জানিয়েছিল, ‘জয়ের লক্ষ্যটা ১৫০-২০০ রানের হলে আমাদের জন্য ভাল হয়। সে জন্য বোলারদের অনেক ভাল বোলিং করতে হবে।’ এবারেই সবচেয়ে ভাল একটা অবস্থান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করল বাংলাদেশ। যদিও শুক্রবার চতুর্থ দিনটা বৃষ্টি নিজের দখলেই নিয়েছে। কিন্তু এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬ টেস্টে এই চারদিনেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তিনদিনে বাংলাদেশ দল নতি স্বীকার করেছে দুই টেস্টে। সেদিক থেকে ইতোমধ্যেই নিজেদের টেস্ট উন্নতিটা দেখিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। কারণ বিশ্বের এক নম্বর দলের বিপক্ষে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের নয়ে থাকা বাংলাদেশ দারুণ নৈপুণ্যই দেখিয়েছে। এবার ড্র শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ পঞ্চমদিনে হারাটাও কষ্টকর বাংলাদেশের জন্য। সে জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের অস্বাভাবিক দ্রুততায় ব্যাট চালাতে হবে এবং সবচেয়ে খারাপ ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখাতে হবে টাইগারদের। কিন্তু বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন মিলে ৫০ এবং চতুর্থ দিন পুরো ৯০- সর্বমোট ১৪০ ওভার খেলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নিষ্প্রাণ ড্র দেখছে সাগরিকা টেস্ট। এর আগে বৃষ্টির কারণে ৭ টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ঘরের মাঠেই ৬। চট্টগ্রামে টেস্ট ড্র হয়েছে দুটি। ২০০৭ সালের মে মাসে ভারত এবং ২০১১ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাগরিকায় টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ। এবার বৃষ্টির কল্যাণে হয় তো প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট ড্রয়ের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়েছে টাইগারদের।
×