ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবু বল হাতে সফল স্টেইন

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৪ জুলাই ২০১৫

তবু বল হাতে সফল স্টেইন

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ এমনটা ক্যারিয়ারেই বিরল ডেল স্টেইনের জন্য। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে তো আরও কম। কিন্তু সেই ঘটনাই ঘটল। যে ডেল স্টেইনকে নিয়ে ভয় ছিল তাকেই উইকেটশূন্য থাকতে হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টে পুরো একটা দিন বোলিং করে। প্রথম দিন ১ ওভার এবং দ্বিতীয় দিন ১২ ওভার, মোট ১৩ ওভার বল ছুড়েও বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি বিশ্বের এক নম্বর এ টেস্ট বোলার। অথচ বাংলাদেশের বিপক্ষে কখনই ১০ কিংবা তারচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য থাকতে হয়নি গতিধর এ বোলারকে। তবে সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়েছেন তৃতীয় দিন। স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে তিনি শিকার করেছেন তিন উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনিই প্রথম ইনিংসে সফলতম বোলার। তৃতীয় দিনে ৯.১ ওভারে তিন মেডেনসহ ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। ক্যারিয়ারের উইকেটসংখ্যা এখন ৩৯৯ স্টেইনের। আর একটি উইকেট শিকার করার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস পর্যন্ত, তাহলেই চার শ’ উইকেট শিকারি ক্লাবে প্রবেশ করবেন তিনি। এবার বাংলাদেশ সফর চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্টেইন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের মতো নিচু র‌্যাঙ্কিংয়ের দলের বিপক্ষে খেলতে চান না। কারণ শেষের দিকে আসতে থাকা ক্যারিয়ারে যত বল করবেন সেগুলো বড় কোন দলের বিপক্ষেই কাজে লাগাতে চান। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে না এসে কী ভুলটাই না করলেন তিনি। এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে টেস্ট সিরিজের দলে ছিলেন। খেলছেনও চট্টগ্রামে চলমান প্রথম টেস্টে। গতির জন্য এবং নিয়মিত উইকেট দখলের ক্ষমতা থাকার কারণে ‘স্টেইন গান’ খ্যাতি পাওয়া এ পেসার অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর পর লেশমাত্র আঁচড় কাটতে পারলেন না। প্রথমদিন ১ ওভার সুযোগ পেয়েছিলেন বোলিংয়ের। আর দ্বিতীয় দিন যে, ৬৫ ওভার খেলা হলো এর মধ্যে ১২ ওভারই করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ মনোরথ হতে হয়েছে তাকে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশ সাবলীল ছন্দেই তাকে মোকাবেলা করেছেন। পুরোদিনে ১২ ওভারে ৩ মেডেনসহ ২০ রান দিয়েছেন, উইকেটের দেখা পাননি। ওয়ানডে সিরিজে প্রোটিয়াদের হারিয়ে দিতে পারলেও যারা ক্রিকেট বোঝেন এবং দেখেন তারা এটা নিশ্চিতভাবেই দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছিলেন স্টেইন, মরনে মরকেল ও ভারনন ফিল্যান্ডারদের মতো ভয়ঙ্কর বোলারদের বিপক্ষে দারুণ কিছু করাটাও কঠিন। বিশেষ করে ভীতি এবং শঙ্কা দানা বেঁধেছিল স্টেইনের গতি, বাউন্স আর সুইং নিয়ে। আগে ৪ টেস্ট বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে তিনি ২২ উইকেট শিকার করেছিলেন। তাছাড়া বর্তমানে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনি এক নম্বর টেস্ট বোলার। এ কারণেই ভীতি। কিন্তু সেই ভীতি কাটিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ম্যাচগুলোয় দাপট দেখিয়েছেন এবং কখনই টানা ১০ ওভার বা তার বেশি বোলিং করে উইকেটহীন থাকেননি। এবার সেই ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে তাকে। এর আগে অবশ্য ২০০৮ সালে ৮ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আবারও সেই স্মৃতি কড়া নাড়লো স্টেইনের দরজায়। ব্যক্তিগতভাবে স্টেইনের প্রথম ইনিংসেই দারুণ এক অর্জনের সুযোগ ছিল। চার উইকেট নিতে পারলেই চার শ’ উইকেট শিকারি ক্লাবে ঢুকে যাওয়ার সুযোগ। কিন্তু তাকে নখ-দন্তহীন করে দেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। যদিও তাকে নিয়ে আশাবাদী প্রোটিয়া কোচ দ্বিতীয় দিনশেষে বলেছিলেন, ‘তার ক্যারিয়ারে এ ধরনের একটা দিন অনেক গেছে। আমি মনে করি তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। তিনি এমন একজন যিনি ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। যখন তার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তিনি সবসময়ই ভালটা বের করে আনেন।’ কোচের আত্মবিশ্বাস ও আস্থার প্রতিদান তৃতীয় দিনের শুরুতেই দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমকে এলবিডব্লিউ করে। তবে এরপর ঝড় তুলতে পারেননি তিনি। শেষ স্পেলে আবারও জ্বলে উঠে বাংলাদেশের দুই টেলএন্ডার তাইজুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে দেন সাজঘরে। এই শেষ স্পেলেই আসল স্টেইনকে দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ স্পেলে তিনি ২.১ ওভারে ৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে অধিনায়ক মুশফিককে ফিরিয়ে দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং মুস্তাফিজকে শিকার করে বাংলাদেশের ইনিংসও শেষ করে দিলেন ওই স্টেইন। সবমিলিয় তার বোলিং বিশ্লেষণ ২২.১-৫-৭৮-৩। প্রোটিয়াদের পক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার। এখন তার ক্যারিয়ার উইকেট সংখ্যা ৩৯৯! আরেকটি প্রয়োজন চার শ’ উইকেটের ক্লাবে ঢোকার জন্য। সে জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে সুযোগ পাবেন তিনি।
×