ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় দিনও চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ জুলাই ২০১৫

দ্বিতীয় দিনও চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ প্রথমদিন গেছে অবাক বিস্ময়ে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৮ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। বোলিং সাফল্যের পরও চিন্তামুক্ত থাকতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং দ্বিতীয় দিনে কি ঘটবে সেই চিন্তাটা শুরু হয়েছিল প্রথম দিন শেষ হওয়ার পর থেকেই, পরিকল্পনাও আঁটতে হয়েছে। কারণ বিশ্বসেরা দলটি যখন বাংলাদেশের বোলিংয়ে মাথানত করেছে তখন ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল আর ভারনন ফিল্যান্ডারদের আগ্রাসন রুখে দেয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে ছিল শঙ্কা। অজানা এক ভয়ের হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই। কারণ কালো মেঘের ঘনঘটা, পরিবেশটা যেন তৈরিই হয়েছে ওই ত্রয়ী স্পিডস্টারের জন্য। তবে হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের পর আরেকবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হোঁচট খেল প্রোটিয়ারা। বোলারদের সাফল্যের পর এবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও দারুণ ভূমিকা রাখলেন। স্টেইন-মরকেল থাকলেন উইকেটশূন্য আর ফিল্যান্ডার একটি শিকার ফাঁদে আটকাতে পারলেন। ফলে দ্বিতীয় দিনশেষেও চট্টগ্রাম টেস্টের নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের কব্জায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। দিনের শেষভাগে বৃষ্টির কারণে ২৫ ওভার নষ্ট হয়েছে। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৭৯ রান তুলে স্বস্তিদায়ক অবস্থানেই আছে টাইগাররা। যদিও ৬৯ রানে পিছিয়ে থাকায় আজ তৃতীয় দিনে অনেককিছুই ঘটতে পারে। ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্যরে কথা জানিয়ে তাই যেন আগাম হুমকিটা দিয়েই রাখলেন প্রোটিয়া বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট। তবে শিকার করলেন এই মুহূর্তে ম্যাচের ৬০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের। একই দাবি বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরও। কিন্তু তিনি জানালেন আজকেও সতর্ক থেকেই ব্যাট চালিয়ে অন্তত চার শ’ রান করার লক্ষ্য নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু চেনা গেল না চিরাচরিত যে চরিত্রের ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত তামিম ইকবালকে। দারুণ ধৈর্য নিয়ে আস্থার সঙ্গে খেললেন শুরু থেকেই। ইমরুল কায়েস ক্ল্যাসিক ব্যাটিং করে তার যোগ্য সঙ্গী হয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকলেন। মেঘে ঢাকা আকাশ, আর্দ্র পরিবেশ, সিক্ত আউটফিল্ড সবই একেকজন পেসারের জন্য স্বপ্নের পরিবেশ। স্টেইন, মরকেল, ফিল্যান্ডাররা তাই শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। কিন্তু সব ঠেকিয়ে দিলেন তামিম-ইমরুল। বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে শুরু করে প্রথম এক ঘণ্টা নির্বিঘেœই পার করে দিলেন এ দু’জন। পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচের প্রতিদিনের প্রথম এক ঘণ্টা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের। সেই অগ্নিপরীক্ষায় সফল হলেও একটা ভুলে প্রথম বিপদটা বাংলাদেশকে উপহার দিলেন ইমরুল। তিনি অনিয়মিত মিডিয়াম পেসার ভ্যান জাইলকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লাইন হারিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। এরপর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য তিন নম্বর স্থানটাকে ঝলমলে আলোয় উদ্ভাসিত করে রাখা তরুণ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক এলেন। কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি চলে গেলেন অহেতুক একটি শট খেলতে গিয়ে। অফস্পিনার সাইমন হারমারের বলে বোল্ড। মুমিনুলের বিদায়টা অশনিসঙ্কেত হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। কারণ টানা ১১ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলা মুমিনুল শুধু সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লায় রান পাননি। আর চট্টগ্রামে মুমিনুল সফলতম একজন ব্যাটসম্যান। কারণ আগে সাগরিকায় যে তিন টেস্ট খেলেছেন, সবতেই হাঁকিয়েছেন শতক। টাইগার শিবির বিষন্ন ও শঙ্কিত হওয়ার জন্য তার বিদায়টা যথেষ্টই। তবে প্রথম সেশনটায় দুই উইকেটে ৭৩ রান তুলেই শেষ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনেও ৭৩ রান যোগ করে বাংলাদেশ। এবার হারাতে হয়েছে ‘লোকাল হিরো’ তামিম ইকবালকে। ১২৯ বলে ৩ চারে ৫৭ রানের দারুণ ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। অথচ তামিম বিদায় নিলেন কদাচিৎ বোলিং করা প্রোটিয়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডিন এলগার। অবশ্য প্রোটিয়া ‘জুজু’ কাটিয়েছেন তামিম। তাদের বিপক্ষে খেলা আগের ৪ টেস্টে কোন ৫০ রানের ইনিংসও খেলতে পারেননি। এবার অর্ধশতক হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়া ব্যতীত বাকি ৮ টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই হাফসেঞ্চুরি হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা তার কারণেই যেন অকেজো হয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বসেরা ‘স্টেইন গান’, মরকেল ও ফিল্যান্ডাররা। মেজাজটাও তাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের। সে কারণেই মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগের ওভারে তামিমের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বসলেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। যদিও আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে বেশিদূর যায়নি ব্যাপারটা কিন্তু ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারার আক্ষেপ কিভাবে পুড়াচ্ছিল প্রোটিয়াদের ওই ঘটনাই তার স্বাক্ষ্য দিয়ে দিল। চা বিরতির পর টিকতে পারলেন না মাহমুদুল্লাহও। ইনজুরির কারণে সর্বশেষ টেস্ট মিস করা এ ক্রিকেটার ফিরেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৭ রান করেছিলেন। তৃতীয় উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৯ রানের রেকর্ড জুটিও গড়ে তোলেন তামিমকে সঙ্গ দিয়ে। কিন্তু ত্রাসোদ্দীপক তিন পেস ত্রয়ীর একজন-ফিল্যান্ডার তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে দিলেন। মাহমুদুল্লাহ ৬ ইনিংস পর অর্ধশতক পাওয়ার পথে যেভাবে খেলেছেন এবং পরেও উইকেটে ছিলেন সাগরিকার দর্শকরা মনেপ্রাণেই চেয়েছিলেন তার শতক। কিন্তু হলো না। রোদহীন দিনেও ঝলমলে আলোকবর্তিকা দেখতে থাকা দর্শকরা মুহূর্তেই অন্ধকার দেখতে শুরু করলেন। দীর্ঘক্ষণ মেঘে ঢাকা আকাশটাও একটু পর কেঁদে উঠল। বৃষ্টির কারণে ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হলেও একটি বল হয়েছে। আর খেলাও হয়নি এবং টাইগারদের বিপদও ঘটেনি। তবে ২৫ ওভার না হওয়াতে যেন ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণটা আগেভাগে নিতে না পারার আক্ষেপ জানালেন মাহমুদুল্লাহ, ‘এই মুহূর্তে আমরা ভাল অবস্থায় আছি। প্রথম ইনিংসে বড় একটা পুঁজি করতে পারলে ওরাও বেশ চাপে থাকবে। আমার মনে হয় ৬০ ভাগ আমাদের দিকে। ৬৫-৩৫ ভাগও হতে পারে। আজ ২৫ ওভার নষ্ট না হলে হয় তো লিড নিতে পারতাম সেটা আমাদের জন্য খুব ভাল হতো।’ কিন্তু তৃতীয় দিনে এখন ব্যাটসম্যানদের ওপর দায়িত্বটা বেশি দেখছেন তিনি। তবে টাইগারদের ভরসা আছে ব্যাটিংয়ে থাকা অধিনায়ক মুশফিক ও সাকিবের ওপর। যদিও প্রোটিয়া বোলিং কোচ যুদ্ধংদেহী বার্তাটা দিয়ে দিলেন, ‘আমি মনে করি এই মুহূর্তে তাদের দিকে ৬০-৪০। আমি মনে করি আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট ভাল বোলিং করেছে এবং বাংলাদেশ ভাল ব্যাটিং করেছে। আগামীকাল (আজ) গোড়ার দিকেই দুটি উইকেট তুলে নিতে পারি, ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে।’
×