ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারকৃত গাড়িচালককে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ;###;ড্রাইভার ও তিন বন্ধুসহ সাক্ষী ৩৭ জন

জোড়া খুনে ডিবির চার্জশীটে রনিই একমাত্র আসামি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ জুলাই ২০১৫

জোড়া খুনে ডিবির চার্জশীটে রনিই একমাত্র আসামি

কোর্ট রিপোর্টার ॥ এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুই চালক হত্যা মামলায় বখতিয়ার আলম রনিকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দিয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশীটটি দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। চার্জশীটে রনিকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। রনির গাড়িচালক গ্রেফতারকৃত ইমরান ফকিরের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে চার্জশীটে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। রনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে। চার্জশীটে গাড়ির ড্রাইভার ইমরান ফকির ও তিন বন্ধুসহ ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। চার্জশীটের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২১টি তাজা গুলি, গুলি রাখার চার্জার, একটি রক্তমাখা গুলির অংশ বিশেষ, ভিকটিম আঃ হাকিম ও ইয়াকুব আলীর ব্যবহৃত দুটি লুঙ্গিসহ মোট ১৫টি আলামত আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল হক চার্জশীটটি স্বাক্ষর করে আগামী ১৩ আগস্ট তা আদালতে উত্থাপনের নির্দেশ দেন। অভিযোগপত্রের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় রনিকে একমাত্র আসামি করে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। ‘গুলি করার সময় রনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন’Ñ এমন কোন কিছু চার্জশীটে উল্লেখ নেই। কারণ নেশাগ্রস্ত থাকার বিষয়টি ফাইন্ড আউট করার মতো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যেই সংসদ সদস্যের গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছে’- তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারটিও চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়নি। গাড়িটি আটক করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। ডিবির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, গাড়ির চালক ইমরানকে প্রাথমিকভাবে আসামি করা হলেও তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় রনির সঙ্গে থাকা তার তিন বন্ধু টাইগার কামাল, জাহাঙ্গীর ও কামাল মাহমুদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হলেও তাদের আসামি করা হয়নি। তবে চার্জশীটে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল রাতে তিন বন্ধুসহ রনি শেলবারে মদ পান করে। রাত সাড়ে ১১টায় শেলবার বন্ধ হয়ে গেলে তারা হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে আরও ৯ হাজার ৫০০ টাকার মদ ও বিয়ার পান করে। সেখান থেকে রাত দেড়টায় তারা বাসার পথে রওয়ানা দেন। চার্জশীটে আরও বলা হয়, এমপি পুত্রের প্রাডো গাড়ি করে তারা একযোগে রওনা হয়ে বাংলামোটর হয়ে মগবাজার যায়। সেখানে জাহাঙ্গীরকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার সময় নিউ ইস্কাটন রোডে ট্রপিক্যাল হোমসের নির্মাণাধীন এলএমজি টাওয়ারের সামনে তারা জ্যামে পড়লে রনি তার পিস্তল বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলির শব্দে মুহূর্তে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেলে তারা গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। এ সময় রনির ছোড়া গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সিএনজি চালক ইয়াকুব আলী ও জনৈক রিক্সাচালক আঃ হাকিম মারা যান। এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৫ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাত আসামিদের নামে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। গত ২৪ মে মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ন্যস্ত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে রনির ব্যবহৃত গাড়িটি শনাক্ত করা হয়। গত ৩১ মে জিপ গাড়িটির চালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান ফকির পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলে রনিকে একই দিন ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সংসদ সদস্য পিনু খানের বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটিও (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬২৩৯) জব্দ করেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে তিন দফায় মোট ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে রনি তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলির কথা স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেননি। গত ৩০ জুন থেকে ১ জুলাই দু’দিন এবং ২৪ থেকে ২৭ জুন ও ৯ থেকে ১২ জুন দু’দফায় আরও চারদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এমপিপুত্র রনিকে। দু’জনকে হত্যার জন্য রনির গাড়ির চালক ইমরান ফকির রনিকেই দায়ী করে গত ১ জুন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। অন্যদিকে ঘটনার দিন রনির সঙ্গে গাড়িতে থাকা তার বন্ধু টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর গত ১৮ জুন এবং কামাল মাহমুদ ১৯ জুন আদালতে সাক্ষ্য দেন। রনি তার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটান বলে তারা তিনজনই সাক্ষ্য দেন।
×