ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিকার ধরতে শুরু করেছে তরুণ বাঘ, ১৭.৪-৬-৩৭-৪

সাদা পোশাকেও দুর্দান্ত অভিষেক মুস্তাফিজের

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুলাই ২০১৫

সাদা পোশাকেও দুর্দান্ত অভিষেক মুস্তাফিজের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এখনও ক্রিকেট পরিম-লে তেমন অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন মাস আগে আগমন। ১৯ বছর বয়সী তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ওয়ানডে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত যা করেছেন তা বিস্ময়কর। এ কারণেই তাকে টেস্টেও ডাকতে বাধ্য হয়েছেন জাতীয় দলের নির্বাচকরা। ওয়ানডে অভিষেকেই রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ৩ ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। অপরিহার্য হয়ে ওঠা মুস্তাফিজ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ইতোমধ্যেই নিজের সামর্থ্য ও উপযুক্ততা প্রমাণ করেছেন। সেই উপযুক্ততার জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টের প্রথম একাদশে ঠাঁই করে নিলেন তিনি। দেশের ৭৮তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা করা বাঁহাতি মুস্তাফিজও জ্বলে উঠলেন। প্রথম থেকেই ছোট ছোট স্পেলে বোলিং করা এ তরুণ চা বিরতির পরপরই প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইনের মেরুদ-ে আঘাত করলেন। এক ওভারের প্রথম ওভারে হাশিম আমলা (১৩) দ্বিতীয় বলে জেপি ডুমিনি (০) ও চতুর্থ বলে কুইন্টন ডি কককে (০) শিকার করেন তিনি। অল্পের জন্য হ্যাটট্রিক মিস করলেও টানা চার বলে তিন উইকেট নেয়ার ঘটনা এটি টেস্ট ইতিহাসের ৩৮তম ঘটনা যা ৩৬ বোলার ঘটিয়েছেন। পরে নিয়েছেন টেমবা বাভুমার (৫৪) উইকেটও। তার এমন ধ্বংসাত্মক বোলিংটাই প্রথম দিনশেষে বাংলাদেশকে স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ার সুযোগ দিয়েছে। মুস্তাফিজ বোলিং শেষ করেছেন ১৭.৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে। কিন্তু প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল বারবারইÑ এত কম বয়সে এবং কম সময়ের মধ্যেই তিন ফরমেটে খেলানো ঠিক হবে কি না মুস্তাফিজকে? অতীতে তালহা জুবায়ের, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের ওপর অপরিহার্যতার চাপ দিতে গিয়ে হারাতে হয়েছে। মুস্তাফিজ যেভাবে এসেছেন আলোয় এত দ্রুতই টেস্ট ক্রিকেটে এসে অমানিশায় ডুবে যাবেন না তো? আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল না? কিন্তু বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, ‘সতর্কভাবে বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন? তিনি টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত।’ টেস্ট খেলার উপযুক্ত হিসেবেই মঙ্গলবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিলেন আরেক সাড়া জাগানো পেসার রুবেল হোসেন। অথচ রুবেল নিজেই এদিন থাকলেন না একাদশে। তবে তিনি যাকে ক্যাপ পরিয়ে দিলেন সেই তরুণ মুস্তাফিজ তা-ব চালালেন প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের ওপর। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে মঞ্জুরুল ইসলাম, সৈয়দ রাসেল, বিকাশ রঞ্জন দাস ও সাজেদুল ইসলামের পর পঞ্চম বাঁহাতি টেস্ট বোলার মুস্তাফিজ। তাকে অবশ্য শুরু থেকে তেমন চাপ নিতে দিলেন না অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। প্রথম স্পেলে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ৫ ওভারে ২০ রান দিয়ে শেষ করেছেন। সে সময় বাংলাদেশী বোলাররাও বিন্দুমাত্র প্রভাব খাটাতে পারছিলেন না। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে কিছুটা যেন নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করলেন মুস্তাফিজ। এবার শেষ করলেন ৩ ওভারে ১ মেডেনসহ ৯ রান দিয়ে। চতুর্থ স্পেলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন তিনি। ৪ ওভারে তিন মেডেনসহ ১ রান দিয়ে শেষ করেন। ততক্ষণে চা বিরতি শেষ হয়ে গেছে। ৩ উইকেটে ১৬৫ রান নিয়ে মোটামুটি ভাল অবস্থানেই দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিংয়ে বিশ্বের তিন নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী ব্যাটসম্যান প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলা ও তরুণ বাভুমা। কিন্তু চায়ের কাপে নয়, মাঠে খেলা ফেরার পর তৃতীয় ওভারেই ঝড় তুললেন মুস্তাফিজ। আমলাকে দারুণ এক অফকাটারে পরাস্ত করে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় মুস্তাফিজের সবচেয়ে মূল্যবান উইকেটটি নিয়ে। পরের বলেই নির্ভরযোগ্য ও অভিজ্ঞ জেপি ডুমিনির বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে অবশ্য সাড়া দেননি ফিল্ড আম্পায়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোয়েল উইলসন। কিন্তু রিভিউ আবেদন করে সফল হয় বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মুশফিক বেশ আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজান। কিন্তু এ যাত্রা মুস্তাফিজের ভয়ঙ্কর ইয়র্কার ঠেকিয়ে দেন ডি কক। কিন্তু পরের বলেই তাকে বোল্ড করে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তিনি। চার বলে তিন উইকেট নিয়ে সাগরিকা গরম করে দেন মুস্তাফিজ। এরপর শুরু হয় ইতিহাস হাতড়ানো। অভিষেক টেস্টে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ১২৯ বছরের ইতিহাসে তিনটি। ১৯২৯-৩০ সালে প্রথমটি করেছিলেন ইংলিশ পেসার মরিস এ্যালম ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ১৯৭৬-৭৭ সালে নিউজিল্যান্ড অফস্পিনার পিটার পেথেরিক অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সর্বশেষ ও তৃতীয় ঘটনার জন্ম দেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিং। তিনি ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেটা করেছিলেন। এ তালিকায় অল্পের জন্য ঢোকা হলো না মুস্তাফিজের। তবে যা করেছেন সেটাও বিরল ঘটনা। টেস্ট ইতিহাসে টানা চার বলে তিন উইকেট নেয়ার ঘটনা ৩৯তম। আর মুস্তাফিজ ইতিহাসের ৩৬তম বোলার হিসেবে এ ঘটনার জন্ম দিলেন। তবে এশিয়ার ক্রিকেটারদের মধ্যে ৩ বোলার এ কা- করে দেখিয়েছেন ৪ বার। পাক পেসার ওয়াসিম আকরাম দু’বার, ভারতের রবি শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের আবুল ফজল। সেদিক থেকে এশিয়ার ক্রিকেটে চতুর্থ বোলার হিসেবে পঞ্চম ঘটনার জন্ম দিলেন মুস্তাফিজ। এ স্পেলটি তিনি শেষ করেন ৪ ওভারে ২ মেডেনসহ ৬ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের শেষভাগে পঞ্চম স্পেলে বোলিং করতে এসে ১.৪ ওভারে ১ রান দিয়ে তুলে নিলেন সংগ্রাম করতে থাকা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বাভুমাকেও। ৩৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ করেন মুস্তাফিজ ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের বোলিং। সাগরিকা টেস্ট আরও চারদিন বাকি! দ্বিতীয় ইনিংসে এবার এ সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
×