ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যানজট সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পাঁয়তারা

বরিশালের বিতর্কিত সেই ওসি অবশেষে সাসপেন্ড, জনমনে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৭ জুলাই ২০১৫

বরিশালের বিতর্কিত সেই ওসি অবশেষে সাসপেন্ড, জনমনে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে ঈদ মৌসুমে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ গৌরনদী থানার বিতর্কিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন কিশোরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এই নির্দেশ দিয়েছেন। ডিআইজি মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, ঈদ উপলক্ষে মানুষ ঘরে ফিরবে বলে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে জেলা পুলিশকে আগেভাবেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অথচ বেলা সাড়ে এগারটার দিকে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর টরকী এলাকায় বিআরটিসির একটি বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাসটি মহাসড়কের উপরে পড়ে থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় একঘণ্টা মহাসড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টির ফলে ঈদ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘসময়ে যানজট নিরসনে গৌরনদী থানা পুলিশ কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। খবর পেয়ে তিনি বরিশাল থেকে ঘটনাস্থলে গেলেও সেখানে কোন থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন না। এজন্য দায়িত্ব অবহেলার কারণে গৌরনদী থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইসেন্স ক্লোজড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এর মধ্যদিয়ে ঈদ উপলক্ষে জনতার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে এবং তাদের নিরপাত্তা দিতে অন্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি সঠিক দায়িত্ব পালন করবে। অপরদিকে গৌরনদী থানার বিতর্কিত ঘুষখোর ওসি সাজ্জাদ হোসেন কিশোরকে সাসপেন্ড করার খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে গোটা উপজেলাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কে এই সাজ্জাদ ॥ নোয়াখালীর চাটখিলের বিএনপি পরিবারে জন্ম নেয়া সাজ্জাদ হোসেন কিশোর ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। নোয়াখালী সরকারী কলেজ ছাত্রসংসদে ছাত্রদলের ব্যানারে তিনি জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সাজ্জাদ হোসেন কিশোর নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালীর চাটখিলের বিএনপির সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন কামরানের ভাতিজা সাজ্জাদ হোসেন কিশোর ১৯৯৩ সালে বরকতউল্লাহ ভুলুর হাত ধরে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সুপারিশে ১১ মাস কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সূত্রে আরও জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই এলাকার বিএনপির সাংসদের ক্যাডার হিসেবেও সাজ্জাদ নিজেকে প্রমাণ করেন। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতাকর্মীকে চরমপন্থী আখ্যায়িত করে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করেন। এছাড়া, বিভিন্ন থানায় থাকাকালীন সাজ্জাদ হোসেনের কর্মকা- ছিল বিতর্কিত। গৌরনদী থানার ওসি হিসেবে সাজ্জাদ হোসেন যোগদানের পর তার বেপরোয়া ঘুষ বণিজ্য, সংখ্যালঘু দমন, মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নিষিদ্ধ চরমপন্থী ও জঙ্গী হিজবুত তাওহীদের কর্মকা-। ফলে শান্ত গৌরনদী ক্রমেই হয়ে ওঠে অশান্ত। একটি বিশেষ মহলের মদদে ওসির বেপরোয়া কর্মকা-ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়।
×