ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজন হত্যাকা-ের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদকে পুলিশের হাতে সোপর্দ;###;মুহিতের স্বীকারোক্তিতে ছয় আসামিই নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত

একে একে সব আসামি আটক হলো জনতার হাতে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৭ জুলাই ২০১৫

একে একে সব আসামি আটক হলো জনতার হাতে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ শাবাশ জনতা শাবাশ। জনগণ এগিয়ে এলে কিনা হয়, এমনটি প্রমাণিত হয়েছে শিশু রাজন হত্যাকারীদের আটকের বেলায়। শিশু রাজন হত্যাকারী সকল আসামিই একে একে আটক হয়েছে জনতার হাতে। পুলিশ খুনীদের ধরতে ‘ব্যর্থ’ হচ্ছে। টাকা নিয়ে আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠছে। মামলা নিতে টালবাহানা। এমন সময় জনগণই এগিয়ে এসেছে। জনগণ জেগে উঠেছে। খুনীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে জনতা। সর্বশেষ বুধবার রাতে রাজনকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর আহমদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে জনতা। রাজন হত্যার আসামি মুহিত ও চৌকিদার ময়না হত্যার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছয়জন সরাসরি জড়িত ছিল। মুহিত আলম, তার তিন ভাই আলী মিয়া, শামীম, সৌদি প্রবাসী কামরুল এবং মার্কেটের চৌকিদার ময়না মিয়া ও দুলাল। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মুহিত এসব তথ্য দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চৌকিদার ময়না ও একই রকম বক্তব্য দিয়েছে পুলিশের কাছে। বুধবার রাতে গ্রেফতার হওয়া নূর মিয়া ও দুলাল কে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এদিকে রাজন হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। রাজন হত্যাকা-ের পর স্থানীয় জনতার সাহসী উদ্যোগ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন নৃশংসতা যখন মানবতাবোধকে নাড়া দিয়েছে তখন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে- টাকা নিয়ে খুনীদের বিদেশ পালিয়ে যেতে সাহায্য করার। অভিযোগ ওঠে, মামলা করতে যাওয়া নিহত রাজনের পিতা আজিজুর রহমানের সঙ্গে থানায় দুর্ব্যবহারের। তাকে ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়। ঘটনার পরদিনই খুনীদের ধরতে থানাও ঘেরাও করে এলাকাবাসী, তাতেও টনক নড়েনি পুলিশের। এমন নৃশংস, পৈশাচিক ঘটনার পর পুলিশের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মানুষ। অসহায়, মর্মাহত, মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। কেবল মানববন্ধন, সমাবেশের মাধ্যমে খুনীদের হত্যার বিচার দাবি নিয়ে বসে থাকেনি। খুনীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযানের দিকে চেয়ে বসে থাকেনি। নিজেরাই খুনীদের সনাক্ত ও আটক করতে এগিয়ে আসে। জনতার এই প্রতিবাদী জোয়ার দেখে রাজনের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের পরিবারের সদস্যরাও সাহসী ভূমিকা নিয়ে জনগণের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে এগিয়ে আসেন। ঘাতক দুলালকে জনতার সহযোগিতায় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন খোদ তার মা। পুলিশের হাতে ছেলেকে তুলে দেয়ার সময় মা রাজিবুন বলেন, ‘আমার ছেলে দোষি হলে, তার ফাঁসি দিন। আমার কোন দুঃখ নেই। রাজনের মায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ঐ মায়ের বুক খালি হইছে, ছোট একটা ছেলে মরছে, এতে আমার দুঃখ লাগছে। আমার বাচ্চাও আমি কুরবানি দিলাম।’ নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর আহমদ পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে। নুর মিয়ার বাবা নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, যদি আমার ছেলে অপরাধী হয়, তবে অবশ্যই যেন তার বিচার হয়। জনগণ রাষ্ট্র, আইনসমাজ ব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল। প্রতিহিংসার আচরণ থেকেও নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন। খুনীদের আটক করলেও নিজেরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশের হাতেই তুলে দিয়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ, খুনিদের প্রতি ঘৃণা, খুনীদের আটক করা ও আইন নিজের হাতে আইন তুলে না নিয়ে পুলিশের হাতে আসামিদের হস্তান্তর করার এই মানসিকতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনেরা। সাধারণ মানুষ অপরাধ ও অপরাধীদের প্রতি সবসময় এমন মনোভাব পোষণ করলে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন তারা। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি খুবই ভালো লক্ষণ। ঢাকায় বর্ষবরণেও দায়ীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল জনতা। রাজনের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি দেখতে পাচ্ছি। যারা অপরাধীদের ধরে পুলিশের হাতে দিচ্ছেন তারা প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, এই প্রবণতা যত বাড়ব ততই মঙ্গল। এই উদাহরণ মানুষের মনে সাহস সঞ্চার করতে সাহায্য করবে। যে কোন জায়গায় অন্যায় প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে সাহস যোগাবে। রাজন হত্যার ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে ফারুক মাহমুদ বলেন, পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে বলেই জনগণকে খুনীদের ধরে ধরে দিতে হচ্ছে। যে কাজটি পুলিশের করার কথা ছিল, তা জনগণ করছে। তিনি এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করে বলেন, যাদের গাফিলতি ও অপকর্মে এমন ঘটনা ঘটেছে ও খুনীরা পালিয়ে গেছে সেইসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয় প্রয়োজন। নগরীর কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউরকে খুন করা হয় ৭ জুলাই। ৮ জুলাই লাশ গুমের সময় আটক করা হয় মুহিত হোসেনকে। ১৩ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায় সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা ঘাতক কামরুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ১৪ জুলাই রাতে পুকেরবাজারের পীরবাজার এলাকাবাসী চৌকিদার ময়নাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। ১৫ জুলাই দুপুরে কুমারগাঁও থেকে দুলালকে আটক কওে ও সর্বশেষ ১৫ জুলাই রাতে রাজনকে নির্যাতনের সময় ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্য আসামিরা হলো মুহিত আলমের স্ত্রী লিপি বেগম, শ্যালক আবুল এবং এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফিরোজ আলী ও আসমত উল্লাহ। পুলিশ এদের গ্রেফতার করে। আসামি মুহিতের স্বীকারোক্তি ॥ সিলেটের কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজন (১৩) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছয়জন সরাসরি জড়িত ছিল। মামলার অন্যতম আসামি মুহিত আলম, তার তিন ভাই আলী মিয়া, শামীম, সৌদি প্রবাসী কামরুল এবং মার্কেটের চৌকিদার ময়না মিয়া ও দুলাল। তাদের নির্যাতনেই রাজনের মৃত্যু ঘটে । রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মুহিত এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার গ্রেফতার চৌকিদার ময়না মিয়াকেও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সেও জিজ্ঞাসাবাদে একই রকম বক্তব্য দিয়েছে পুলিশের কাছে। জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, মুহিত ঘটনার ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এখন বলা সম্ভব নয়। মুহিতের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মুহিতকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি না দিলে তাকে ফের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুহিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার এবং তার ভাইদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। মুহিত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেছে, সে নিজে এবং তার বড় ভাই আলী মিয়া, ছোট ভাই কামরুল ও শামীম রাজনের ওপর নির্যাতন চালায়। এ ছাড়া নির্যাতনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় মার্কেটের চৌকিদার ময়না মিয়া ও স্থানীয় শেখপাড়া গ্রামের তাদের আত্মীয় দুলাল মিয়া। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাজন মারা গেলে আলী মিয়ার নির্দেশে মুহিত নিজে, কামরুল, শামীম ও চৌকিদার ময়না লাশ গুম করতে একটি মাইক্রোবাসে করে কুমারগাঁও আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায়। এ সময় জনতার হাতে সে ধরা পড়ে, অন্যরা পালিয়ে যায়। এদিকে বুধবার রাতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ময়না রাজনের ওপর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানান ওসি আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ময়না তার গ্রামের বাড়ি কুমারগাঁও সংলগ্ন পীরপুরে একটি বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিল। মঙ্গলবার তারাবির নামাজের পর গ্রামের লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ময়না মিয়া জানিয়েছে, ঘটনার দিন ভোরবেলা সে রাজনকে আটক করে। এ সময় একটি লোহার খুঁটির সঙ্গে রাজনকে বেঁধে কামরুলকে খবর দেয়। কামরুল আসার পর রাজনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে কামরুলের অন্য ভাইয়েরাও এতে অংশ নেয়। একপর্যায়ে রাজন মারা গেলে সে মুহিত, শামীম, আলী ও দুলাল লাশ নিয়ে কুমারগাঁও আবাসিক এলাকায় যায়। কিন্তু জনতা সেখানে তাদের ঘেরাও করে ফেললে মুহিত ধরা পড়ে যায়। তবে অন্যরা পালিয়ে যায়। ইন্টারপোলের চিঠি জেদ্দা পুলিশের কাছে ॥ এ হত্যাকান্ডে জড়িত সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামকে দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ পুলিশের চিঠি ইন্টারপোলের মাধ্যমে জেদ্দা পুলিশের কাছে পৌঁছেছে। জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল মোকাম্মেল হোসেন বলেন, কামরুল ইসলামকে দেশে ফেরত নেয়া সংক্রান্ত ইন্টারপোলের চিঠি কনসুলেটের মাধ্যমে জেদ্দার পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বুধবার কামরুল ইসলামকে স্থানীয় নাজলা থানা থেকে ব্রাইমান জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কামরুলকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারপোলের চিঠি সৌদি পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি বাদশার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সৌদি বাদশার সম্মতি পাওয়ার পর কামরুলকে দেশে পাঠানো হবে। রিমান্ডে ২ জন ॥ নির্মম পৈশাচিক নির্যাতনে খুন হওয়ার ঘটনায় আটক দুই পাষ- দুলাল ও নুর মিয়ার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রঞ্জিত মহানগর হাকিম আদালত-৩ এ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বুধবার মামলাটি জালালাবাদ থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার দুপুরে দুলালকে জনতা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজনকে নির্যাতনকারী নুর মিয়াকেও জনতা আটক করে পরবর্তীতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সে নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছিল। রিকশা ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে গত ৮ জুলাই জালালাবাদের কুমারগাঁওয়ের যে স্থানে রাজনকে বেঁধে পেটানো হয়েছিল, সেখানকার একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন নুর মিয়া। সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামের কথায় মোবাইল ফোনে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেছিলেন বলে নুর মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে জানান ওসি আক্তার হোসেন। বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন ॥ হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে সোচ্চার সিলেটবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনটি সংগঠন মানববন্ধন করে। এছাড়া জিন্দাবাজারে রাজাম্যানশন ব্যবসায়ী সমিতি খুনীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে। সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ তানুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হোসেন খানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন রাজা ম্যানসন ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা মোঃ আবুল বশর, আবুল কাশেম আহমদ, তৈয়বুর রহমান নান্নু, আব্দুল আলীম, গুলজার আহমদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, একেএম চৌধুরী, জাবেদ, কমল আনছারী, খন্দকার মাহমুদুল হাসান বাবু, আব্দুল আলী, সুমন আব্দুল কাদির প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা রাজন হত্যাকারীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের দাবি জানান। কামরুলকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনা হচ্ছে আইজিপি ॥ সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক রাজন হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি কামরুলকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি বলেন, রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি কামরুল ইসলামকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেটের সিএমপি কমিশনারকে আমরা চাপ দিচ্ছি যাতে তারা দ্রুততার সঙ্গে এ ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন করেন। বৃহস্পতিবার গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা পরিদর্শন করার সময় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। এ ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজন হত্যার ঘটনাটি সব মহলে, এমনকি পুলিশ মহলেও বেশ আলোচিত। এর সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততার থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। “জাস্টিস ফর রাজন-সিলেট” অনলাইনে ফান্ডরাইজিং ॥ সিলেটের বহুল আলোচিত ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের পরিবারকে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। “জাস্টিস ফর রাজন-সিলেট” নামে অনলাইনে চলছে ফান্ডরাইজিং। মাসব্যাপী এই কালেকশনে ইতোমধ্যে দুই হাজার ৮১৮ পাউন্ড সংগ্রহ হয়েছে। দিন দিন এই অঙ্কটা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে রাজন হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত ও উদ্যোগকে কাজে লাগাতে নানামুখী কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। রাজনের জন্যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগ নিয়েছেন লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটসের সাবেক ডেপুটি মেয়র, কাউন্সিলর ওলিউর রহমান। তার সঙ্গে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ বিশ্ববাঙালীরা। লন্ডন থেকে এই তথ্য জানিয়েছেন ওলিউর রহমানের ভাই মনসুর আহমদ। মনসুর আহমদ জানান, রাজনের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত ও উদ্যোগের জন্যে জাস্টিস ফর রাজন-এর পক্ষে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বরাবরে ই-পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশী বংশদ্ভূত ব্রিটেনের এমপি রোশনারা আলীর কাছে। রাজনের বাড়িতে পীর সাহেব চরমোনাই-এর প্রতিনিধি দল ॥ শিশু রাজনের বাড়িতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই-এর প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে নিহতের রুহের মাগফেরাত কামনা করে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পীর সাহেব চরমোনাইয়ের পক্ষ থেকে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল নিহত রাজনের বাড়িতে যান। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ রাজনের পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করেন ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। প্রতিনিধি দলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর সেক্রেটারি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, ইসলাম শ্রমিক আন্দোলন জেলা সভাপতি আলহাজ ফজলুল হক, ইসলামী আন্দোলন মহানগর সহ-সভাপতি হযরত মাওলানা আব্বাস উদ্দিন, হযরত মাওলানা আব্দুস শহীদ, কোতোয়ালি থানা সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, শ্রমিক আন্দোলন জেলা জয়েন্ট সেক্রেটারি নুরে আলম, মোঃ মঈন আহমদ, মোঃ মাইন উদ্দিন প্রমুখ। বিয়ানীবাজারবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা ॥ শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার প্রতিবাদে সচেতন বিয়ানীবাজারবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা নিউমার্কেটের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রনেতা মফিকুল ইসলাম কাননের পরিচালনায় ও নাসির উদ্দিন রাসেলের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ছাত্রনেতা পুলক মালাকার, শামিম আহমদ, মাজেদ দিপু, ছাব্বির আহমদ, মিজান আহমদ, জাফর আহমদ, আলী শাহান, কাশেম আহমদ, কামরুল হাসান, শাহী, যুবনেতা সুমন আহমদ, জিয়াউর রহমান, মুমিনুল ইসলাম রুমন, রেজাউল ইসলাম শিপলু, মুনিরুল ইসলাম রুবেল। বক্তারা এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান ও খুনীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। মুন্সীগঞ্জে মানববন্ধন ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, রাজন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে লাইব্রেরি ফর দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে মুন্সীগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। শহরের শিল্পকলা একাডেমির রাস্তায় শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশ নেয়। এই আয়োজনের স্লোগান ছিল “প্রতিটি শিশুর জীবন হোক নিরাপদ ও সুন্দর”। এতে সরকারী হরগঙ্গা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুখেন চন্দ্র ব্যানার্জি, কে কে গভঃ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক মোঃ জালাল উদ্দিন, সাংস্কৃতিককর্মী জাহাঙ্গীর আলম ঢালী ও সাব্বির হোসেন জাকির ছাড়াও লাইব্রেরি ফর দ্য চিলড্রেনের সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে আরও অংশ নেন শিশু সাগর, জামাল, জিতু, তাবরিজ, দীপঙ্কর, অঙ্কন, ফার্দিন, সুশান্ত, হৃদয়, আসেফ প্রমুখ।
×