ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খপ্পরে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হন

ঈদের সময় রাজধানীতে বাহারি নামের অপরাধী চক্র তৎপর

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৬ জুলাই ২০১৫

ঈদের সময় রাজধানীতে বাহারি নামের অপরাধী চক্র তৎপর

শংকর কুমার দে ॥ ঈদের সময়ের আলো ঝলমলে রাজধানীর কেনাকাটার ধুমধামের মধ্যে অপরাধ জগতে নেমে পড়ে বাহারি নামের অপরাধী চক্র। এক ডজনেরও বেশি বাহারি নামের অপরাধী চক্র তৎপর থাকে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, পা পাড়া পার্টি, ল্যাং মারা পার্টি, ঢিল পার্টি, হাফ প্যান্ট পার্টি, টানা পার্টি, ছোঁ মারা পার্টি, ডলার পার্টি, লাগেজ পার্টি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হওয়ার তালিকা থেকে এই ধরনের অপরাধী চক্রের নাম পাওয়া গেছে। ঈদের সময়ে বাহারি নামের এই ধরনের অপরাধী চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকেই রিক্ত, নিঃস্ব, আহত, নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে বেড়ায় বাহারি নামের এই ধরনের অপরাধী চক্র। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। লঞ্চ টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনালের মতো স্থানে টানা পার্টি, থুথু পার্টি, ল্যাং মারা, পা পাড়া পার্টির দৌরাত্ম্য বেশি দেখা যায়। এসব অপরাধীরা গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধায়। দলবদ্ধ হয়ে কোন ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে নানা কৌশলে মানুষজনের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় তারা। এসব অপরাধী চক্র দলবদ্ধ থাকার কারণে পথচারীরা প্রতিরোধ করতে পারে না তাদের। হাফপ্যান্ট পার্টি সাধারণত রাতের বেলায় ডাকাতি করে বেড়ায়। ডলার পার্টি লোভ দেখিয়ে কম দামের ডলার বা টাকা দেয়ার নাম করে জাল নোট দিয়ে সটকে পড়ে। ডলার পার্টির কাজ হচ্ছে স্রেফ প্রতারণা। ঢিল পার্টি গাড়িতে ঢিল ছুঁড়ে গাড়ির গতিরোধ করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। ছোঁ মারা পার্টি চলন্ত রিক্সা বা হোন্ডা কিংবা বেবিট্যাক্সি আরোহীদের ছোঁ মেরে ছিনতাই করে নিয়ে দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। অপরাধ সংঘটিত করার ধরনের সঙ্গে অপরাধী চক্রের নামের সাদৃশ থাকায় এসব নামকরণ করা হয়েছে। যেমন অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির নাম ব্যাপক তৎপরতার কারণে খুবই পরিচিত লাভ করেছে অপরাধ জগতে। কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে যাওয়ার কারণে নামকরণ হয়েছে অজ্ঞান পার্টির। তেমনি চোখে মলম দিয়ে জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার অপরাধীদের নাম দেয়া হয়েছে মলম পার্টি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক টিম বাহারি নামের অপরাধ দমনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ডিবির নেতৃত্বাধীন টিমগুলো রাজধানীর এসব অপরাধীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাহারি নাম পেয়েছে। প্রতিটি অপরাধী দলে ৫ থেকে ৬ জন করে সদস্য থাকে। একজন দল নেতা তাদের নেতৃত্ব দেয়। রাজধানীতে প্রায়ই পথচারী, রিক্সা বা সিএনজি আরোহীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন এসব বাহারি নামের অপরাধী চক্রের খপ্পরে পড়ে। তবে এই সব অপরাধ খুব বড় ধরনের না হওয়ায় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা থানা পুলিশের শরণাপন্ন হন না। এ কারণে এই ধরনের অপরাধী চক্রের তৎপরতার বিষয়গুলো থানা পুলিশের খাতায় রেকর্ডও হয় কদাচিত। লাগেজ পার্টি কিভাবে কোথায় অপরাধ সংঘটিত করে তার কথা কম বেশি জানেন আকাশ পথের যাত্রীরা। অতীতে আকাশ পথের যাত্রীদের মধ্যে একাধিকবার বিদেশে গেছেন, এমন যাত্রী খুব কমই আছেন, যারা লাগেজ পার্টির খপ্পরে পড়েনি। লাগেজ কেটে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যায় লাগেজের মালামাল। লাগেজ পার্টিতে বিমান বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বেশি। অতীতের লাগেজ পার্টির তৎপরতা আকাশ পথের যাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তাদের তৎপরতা আকাশ পথের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে লঞ্চঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব স্থানের যাত্রীদের যেসব লাগেজ থাকে তা তারা কৌশলে কেটে মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, অপরাধের ধরনের সঙ্গে নামের মিল রেখে গড়ে ওঠেছে রাজধানীতে বিভিন্ন বাহারি নামের অপরাধী চক্র। এসব অপরাধী চক্র দমনের জন্য ডিবির একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। বাহারি নামের অপরাধী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করার অভিযান অব্যাহত আছে। এসব অপরাধীদের গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধী চক্রের বাহারি নাম পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, অপরাধীর চক্রের সংঘটিত অপরাধের ধরনের সঙ্গে মিল রেখে, গড়ে ওঠেছে বাহারি নামের অপরাধী চক্র। মাদকাসক্ত, ছিঁচকে, দরিদ্র শ্রেণীর অপরাধীরাই সাধারণত বাহারি নামের অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। ঈদের সময়ের বাড়ি ফেরা, কেনাকাটা, আনন্দ উৎসবের ধুমধামের ডামাডোলের মধ্যে বাহারি নামের অপরাধী চক্রের তৎপরতাও বেড়ে যেতে দেখা যায়।
×