ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই সংস্থার নীতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতকে মাসুল দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৬ জুলাই ২০১৫

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতকে মাসুল দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছ থেকে আসিয়ান অথবা ডাব্লিউটিওর নিয়ম অনুযায়ী মাসুল নির্ধারণ করতে চায় বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে ওই দুটি সংস্থার নিয়মনীতি এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই এই দুই সংস্থার মধ্য থেকে একটি কাঠামো বেছে নিয়ে মাসুল নির্ধারণ করতে চায় ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বলা হয় চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর থেকে ভারত ত্রিপুরার আগরতলা, মেঘালয়ের ডাউকি ও অসমের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে পণ্য আনানেয়া করতে পারবে। এছাড়া দুই বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে এসব রুটে পণ্য আনানেয়ার জন্য জলপথ, রেলপথ ও স্থলপথ ব্যবহার করতে পারবে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের জন্য দুই দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হলেও সেই সমঝোতায় মাসুল এখনও নির্ধারণ হয়নি। খুব শিঘ্রই দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাসুল নির্ধারণ করবে। তবে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠকের আগে কোন কাঠামো অনুযায়ী মাসুল নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে এখন পর্যালোচনা করছে ঢাকা। কেননা এই মাসুল নির্ধারণে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কাঠামো রয়েছে। মাসুল নির্ধারণের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জাতি সংস্থা আসিয়ানের একটি কাঠামো রয়েছে। এছাড়া আরেকটি কাঠামো রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও)। এই দুই সংস্থার কাঠামোর মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিয়ে মাসুল নির্ধারণ করতে চায় বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, এক দেশের মধ্য দিয়ে অন্য দেশের পণ্য আনানেয়ার ফি আন্তর্জাতিক একটি স্বীকৃত বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একে অপরের মধ্যে দিয়ে পণ্য আনানেয়া করছে। তাই ফি নির্ধারণের বিষয়টিও স্বীকৃত। তবে এই ফি নির্ধারণে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন নিয়ম পালন করে থাকে। প্রতিটি দেশই নিজ নিজ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে এই ফি নির্ধারণ করে থাকে। ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে ফি নির্ধারণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের মাসুল নির্ধারণ করতে হবে অনেক ভেবে চিন্তে। দুই পক্ষেরই যেন লাভ হয়, সেভাবেই মাসুল নির্ধারণ করতে হবে। তিনি জানান, মাসুল নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক অনেক নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে আসিয়ান ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থারও নিয়ম রয়েছে। সেসব অনুসরণ করা যেতে পারে। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না আসায় তিস্তা চুক্তির সঙ্গে থেমে যায় আরও একটি চুক্তি। সেটি হলো চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে অনুমতি বিষয়ক সম্মতিপত্র। সে সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় এই চুক্তিও থেমে যায়। তবে এবার মোদির সফরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তি হওয়ায় বিভিন্ন চুক্তি সম্পন্নে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। সে কারণে এবার বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত সমঝোতাও সই হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে দিল্লি সফরকালে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হন। সে সফরেই তিনি ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা ভারতকে জানান। সে সময় চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হয়। তার এক বছর পরে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না আসায় সে সময়ে ওই চুক্তিটি হয়নি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আন্তঃযোগাযোগ বিষয়কে বিশেষভাবে জোর দিয়ে আসছে। ভারতকে এই দুই বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পরে এশিয়ার অন্যান্য দেশও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করবে। যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৬-৭ জুন ঢাকা সফর করেন। সে সময় ২২টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির মধ্যে অন্যতম ছিল চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহার।
×