ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ আষাঢ়ে আকাশ ভাঙ্গা বর্ষণ, জলে কাদায় একাকার

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ জুলাই ২০১৫

শেষ আষাঢ়ে আকাশ ভাঙ্গা বর্ষণ, জলে কাদায় একাকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছরের প্রথম সবচেয়ে বেশি সময় ধরে একটানা বৃষ্টি ঝরেছে রাজধানীতে। এর আগে এত সময় ধরে একটানা রাজধানীতে বৃষ্টি হয়নি। বুধবার সকাল ন’টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্যেও থামেনি। পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তার খানাখন্দে পড়ে যাওয়ার আতঙ্কে ভুগতে হয়েছে পথচারীদের। দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছে অনেকে। ব্যাহত হয় ঘরফেরা মানুষদের ঈদের কেনাকাটা। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও কাদায় নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের ভরসা ফুটপাথের ভাসমান কাপড়ের অনেক দোকান গুটিয়ে ফেলা হয়। সরকারী ছুটির দিনেও শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বাইরে বের হওয়া নগরবাসীরা বৃষ্টিতে ভিজে, জলাবদ্ধ সড়কে কাদা মেখে হয়েছে নাকাল। নগরীর অনেক জায়গায় থৈ থৈ পানি। রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। আষাঢ় শেষের দিনভর বৃষ্টিতে বুধবার এমন অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে রাজধানীবাসী। আজ বৃহস্পতিবারও দেশে বৃষ্টি থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমী বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র রয়েছে মাঝারি ধরনের। আজ বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা, বরিশালও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। চলতি বছরে অনেক বৃষ্টির দিন পেয়েছে রাজধানীবাসী। কিন্তু বুধবারের মতো সাড়ে সাত ঘণ্টার টানা বৃষ্টির অভিজ্ঞতা পায়নি। সরকারী ছুটি থাকলেও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা ছিল। দুর্ভোগে পড়তে হয় কর্মজীবীদের। সকালের আকাশ মেঘলা থাকলেও বিরামহীন বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল না। তাই অনেকেই ছাতা ছাড়াই বের হন। কিন্তু তাদের অনেকেই কর্মস্থলে পৌঁছার আগেই বৃষ্টির কবলে পড়েন। বৃষ্টির মাত্রা বেশি থাকায় খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করারও সুযোগ ছিল না। কেউ কেউ বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে থাকেন, কিন্তু থামেনি। চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিড়ম্বনায় পড়েন কর্মব্যস্ত মানুষেরা। বৃষ্টি থামার অপেক্ষার পথ দীর্ঘ হওয়ায় কেউ কেউ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গন্তব্যস্থলে রওনা দেন। রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজেই খুঁজতে থাকেন রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সার। চরমভাবে ব্যাহত হয় ঈদের কেনাকাটা। গ্রামে ফেরার আগে অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ ঈদের কাপড় কেনেন ফুটপাথের ভাসমান দোকান থেকে। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও কাদার কারণে বুধবার রাজধানীর কাপড়ের অনেক ভাসমান দোকান গুটিয়ে ফেলা হয়। বৃষ্টি ও যানজটে অনেকেই নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি। অনেককেই বৃষ্টি মাথায় হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হতে দেখা যায়। ভিজে জবজবে হয়ে তবেই তারা পৌঁছেন কর্মস্থলে। এয়ারপোর্ট থেকে কাকলী সিগন্যালে আসতেই তীব্র জটে পড়তে হয়েছে প্রতিটি যানকে। মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মগবাজার বা ফার্মগেটমুখী সব গাড়িকেই তীব্র জটের মুখোমুখী হতে হয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেসব যান ফার্মগেটমুখী হয়েছে, সেসব যানবাহনকেও জাহাঙ্গীরগেট সিগন্যালের আগে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। ২০ মিনিটের পথে ২ ঘণ্টা ব্যয় করে ফার্মগেট পৌঁছেও স্বস্তি মেলেনি কারও। ফার্মগেট-কাওরানবাজার-বাংলামোটর-শেরাটন মোড় পাড়ি দিতে চলে গেছে গাড়ি ও নাগরিকদের দম। একইভাবে মিরপুর-১০ থেকে বিজয় সরণি হয়ে মতিঝিলগামী যানগুলোকেও পড়তে হয়েছে একই বিড়ম্বনায়। মতিঝিল থেকে দৈনিক বাংলা, পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ রুটেও জট ছিল ভয়াবহ। হাতিরঝিল, বনানী, গুলশান, নিকেতন, মগবাজার, বাড্ডা, রামপুরা রোডের আশপাশেও জটমুক্ত ছিল না। যানজটের পেছনে ভূমিকা রাখে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তায় পানি জমে চিরাচরিত দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় সকালে বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। জলাবদ্ধতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিক্সা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিক্সা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিক্সা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিক্সায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা। বৃষ্টিতে উত্তরার জসিমউদ্দীন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে ভোর থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা সপরিবারে বের হওয়া চরম দুর্ভোগে পড়েন। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়। বৃষ্টিতে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। তবে পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হয়। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিক্যালের সামনে রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়। রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখী যাত্রীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে যায়। পানির কারণে প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হয়। অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
×