ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদা সুবর্ণা

দুর্বার সেরেনা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ জুলাই ২০১৫

দুর্বার সেরেনা

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে ২১টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। একের পর এক রেকর্ড গড়া সেরেনা উইলিয়ামস তারপরও ছুটছেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বয়সে তেত্রিশকেও ছাড়িয়ে যাওয়া আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি কোথায় থামবেন? ভক্ত-অনুরাগীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। শনিবারও আরও একবার ‘সেরেনা সøাম’ জয় দেখার সুযোগ পেলেন টেনিস প্রেমীরা। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্প্যানিশ টেনিস তারকা গারবিন মুগুরুজাকে হারিয়ে একুশতম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেলেন সেরেনা। সেইসঙ্গে আরেকটি কীর্তিও গড়েন তিনি। টানা চারটি গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের রেকর্ড গড়লেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান এই তারকা। এক যুগ আগেও একবার টানা চারটি গ্র্যান্ডসøাম জিতেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ফরাসী ওপেন, উইম্বলডন, ইউএস ওপেন এবং ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা চারটি শিরোপা জয়ের অসামান্য কীর্তি গড়েই সেরেনার আবির্ভাব জানিয়ে দিয়েছিলেন টেনিস বিশ্বকে। একযুগেরও বেশি সময় পর আবারও সেই সেরেনাকেই দেখল টেনিস বিশ্ব। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট উইম্বলডনে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে মেজর শিরোপা জিতে আনন্দে-উদ্বেলিত সেরেনা। তবে আমেরিকার উইলিয়ামস পরিবারের ছোট মেয়ে এখনই থেমে যেতে নারাজ। তার মতে, ‘এই মুহূর্তে আমি যেভাবে খেলছি তা দারুণ উপভোগ করছি। তাই আমি আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে চাই না। এটা ঠিক যে আপনি যদি পেছনের দিকে তাকান তাহলে খুবই সহজেই মনে হবে আমি খুব সন্তুষ্ট। তবে আমি এখনই সন্তুষ্ট হতে পারব না।’ পাওয়ার টেনিসের শীর্ষ তারকা সেরেনা। দুর্দান্ত গতি আর অসম্ভব শক্তিমত্তার অধিকারী এই খেলোয়াড়ের উইম্বলডনে এটি ছয় নাম্বার শিরোপা। দীর্ঘ তিন বছর পর অল ইংল্যান্ড ক্লাবের শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। তুখোড় ফর্মে থাকা সেরেনার সামনে এবার বিরল এক রেকর্ডের হাতছানি। বছরের শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেন জিতলেই ‘ক্যালেন্ডার সøাম’ পূর্ণ হবে তার। এক পঞ্জিকাবর্ষে চার গ্র্যান্ডসøামের রেকর্ড আছে জার্মান তারকা স্টেফিগ্রাফের। তাও আবার ১৯৮৮ সালে ‘ক্যালেন্ডার সøাম’ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। দুই যুগেরও বেশি সময় পর এবার সেই রেকর্ডে ভাগ বসানোর সুযোগ আসছে সেরেনার। আমেরিকান টেনিস তারকা পারবেন কী সেই কীর্তিতে ভাগ বসাতে? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভক্ত-অনুরাগীদের মনে। তবে সেরেনা ঠিকই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। সেক্ষেত্রে ব্যাখাও টেনে এনেছেন তিনি। ইউএস ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সেরেনা। সর্বোমোট ছয়বার শিরোপার হাসি হেসেছে তার মুখ। এখানেই জিতেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট। ২০১২ থেকে ২০১৪ সালে টানা তিনবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডটিও তার দখলে। আর এটাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন তিনি। সেরেনা উইলিয়ামস বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমি টানা তিনবার শিরোপা জিতেছি। আশা করি বছরের শেষটাও আমার বাজে কাটবে না। সেখানেও (নিউইয়র্ক) ভাল করতে চাই। মনে হচ্ছে যদি সেরেনা সøাম জিততে পারি তাহলে ক্যালেন্ডার সøাম জিততেও তেমন কোন সমস্যা হবে না।’ টেনিস ইতিহাসে গ্র্যান্ডসøাম জয়ের তালিকায় সবার উপরে অবস্থান করছেন মার্গারেট কোর্ট। সুদীর্ঘ ঝলমলে ক্যারিয়ারে ২৪টি গ্র্যান্ডসøাম জিতেছিলেন তিনি। তারপর ২২টি জিতে দুইয়ে আছেন স্টেফি গ্রাফ। এরপরেই অবস্থান সেরেনার। ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ক্যালেন্ডার সøাম জয়ের পাশাপাশি স্টেফিগ্রাফকেও ছুয়ার রেকর্ড গড়বেন তিনি। আসছে সেপ্টেম্বরে ৩৪ বছরে পা দেবেন সেরেনা। টেনিস কোর্টে এখনও তরুণ-ষোড়শী বালিকার মতো লড়াই করেন তিনি। এই বয়সেও প্রতিপক্ষের জন্য হুমকির নাম সেরেনা। তাহলে খোদ-সেরেনার অনুভূতিটা কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে আমেরিকান তারকা বলেন, ‘শারিরীকভাবে আমি এখনও ফিট। কখনও মনে হয় ১০-১২ বছর আগে টেনিস কোর্টে যা করেছিলাম তার চেয়েও ভাল করার সামর্থ্য আছে।’ ফাইনালে সেরেনার প্রতিপক্ষ ছিল ২০তম বাছাই গারবিন মুগুরুজা। তবে সেরেনার বিপক্ষে কম যাননি গারবিন মুগুরুজাও। কিন্তু স্বপ্ন দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তিনি। আরান্থা সাঞ্চেজ ভিকারিওর পর প্রথম স্প্যানিশ মেয়ে হিসেবে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেই বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন মুগুরুজা। শিরোপা জয়ের লড়াইয়েও সেরাটা ঢেলে দেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রানার-আপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। তবে সেরেনার বিপক্ষে জয় না পেলেও বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার শিক্ষাটা ঠিকই পেয়েছেন তিনি। এদিকে উইম্বলডনের পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নোভাক জোকোভিচ। সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরারকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের নবম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান শীর্ষ বাছাই জোকোভিচ। সার্বিয়ান তারকা যেদিন চ্যাম্পিয়ন হন ঠিক এক বছর আগের এই দিনেই দীর্ঘদিনের বান্ধবী জেলেনা রিস্টিককে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর থেকেই যেন রঙিন হয়ে ওঠে জোকোভিচের জীবন। এই সময়ের মধ্যে চারটি গ্র্যান্ডসøামসহ মোট নয়টি শিরোপা জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেন টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান তারকা। তাহলে কী জোকোভিচের সাফল্যে বিয়ের কোন রহস্য আছে? জোকোভিচ জানালেন সে কথাও, ‘এক বছর আগে আমি উইম্বলডনের শিরোপা জিতেছিলাম। এই দিনেই আমি বিয়ে করেছিলাম, একত্রে নতুন জীবন শুরু করেছিলাম। এটা আসলেই আমার জীবনের বিস্ময়কর এক অধ্যায়, যতটুকু সম্ভব তার সবটুকুই উপভোগ করেছি আমি। এই সময়ে হারি কিংবা জিতি সে সবসময়ই আমার পাশে ছিল। যখনই বাড়ি ফিরি তখন আর টেনিস খেলোয়াড় থাকি না। একজন পিতা এবং স্বামীর ভূমিকায় রূপ নেই। আর এটাই আমাকে ভাল পারফরমেন্সে ভূমিকা রাখে।’ এবারের উইম্বলডনে চমক উপহার দিয়েছেন সানিয়া মির্জা আর মার্টিনা হিঙ্গিসও। উইম্বলডনে মেয়েদের ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এই ইন্দো-সুইস জুটি। ফাইনালে রাশিয়ান জুটি একাটেরিনা মাকারোভা এবং এলিনা ভেসলিনাকে পরাজিত করে উইম্বলডন জয়ের স্বপ্ন পূরণ করেন তারা। এর আগে তিনবার মিক্সড ডাবলস খেতাব জিতেছে এই জুটি। তবে কখনও মেয়েদের ডাবলসে খেতাব জেতেননি সানিয়া। তাই মেয়েদের ডাবলস উইম্বলডন খেতাব জিততে মরিয়া ছিলেন হায়দরাবাদী এই তারকা। এবার সেই স্বপ্নের শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত সানিয়া। তিনবার মিক্সড ডাবলস খেতাবের সঙ্গে একবার ডাবলস খেতাব যুক্ত হল তার। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সানিয়ার সঙ্গে আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন মার্টিনা হিঙ্গিসও। সুইস এই কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে মিশ্র দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।
×