ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ

দেশে শিক্ষার হার ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ জুলাই ২০১৫

দেশে শিক্ষার হার ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে শিক্ষার হার (১৫ বছর বা তদুর্ধ মানুষ) মোট ৬১ শতাংশ, ২০০৯ সালে ছিল ৫৮ দশমিক চার শতাংশ। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক দুই শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যদিকে মহিলার ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক আট শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫৪ দশমিক তিন শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসটিকস অব বাংলাদেশ এসভিআরএস-২০১৩ জরিপের প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসছে। মঙ্গলবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম, আবদুল মান্নান হাওলাদার, বিবিএসের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বাইতুল আমীন ভুঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কানিজ ফাতেমা বলেন, দেশের মানুষের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি চিত্র উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনটি অনেকখানি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য। তিনি বলেন, এভাবে সঠিক চিত্র পেলে সরকারের পক্ষে সমন্বিত পরিকল্পনা করা সহজ হবে। সেই সঙ্গে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মূল্যায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক মূল্যায়নে ভূমিকা রাখছে। মানুষের গড় আয়ু এখন যে বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা এখন স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার, নিয়মিত টিকা দেয়ার হারসহ নানা সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। এছাড়া মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটির কার্যক্রম বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি নিয়মিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৮০ সাল হতে আন্ত:শুমারি সময়ের জনতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে দেড় হাজার নমুনা এলাকায় এ কার্যক্রম চলছে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার পরিবার হতে নিয়মিত জনতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গড়ে খানার সদস্য সংখ্যা চার দশমিক পাঁচ জন এর ফলে প্রায় ছয় লাখ ৭৫ হাজার জন এ প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের আওতায় নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্যের গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য আরও ৫১২টি নমুনা এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এ বছর থেকেই তার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৭০ বছর ৪ মাস, যা প্রাথমিক হিসেবে ছিল ৭০ বছর ১ মাস। পুরুষের চেয়ে মহিলাদের গড় আয়ু বেশি। পুরুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৬৮ বছর ৮ মাস, ২০০৯ সালে ছিল ৬৬ বছর ১ মাস। অন্যদিকে মহিলাদের গড় আয়ু হচ্ছে, ৭০ বছর ২ মাস, যা ২০০৯ সালে ৬৮ বছর ৭ মাস। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিও হয়েছে উল্লেখযোগ্য। মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে মাতৃ মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল দুই দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। তার আগের কয়েক বছরে যথাক্রমে এ হার ছিল দুই দশমিক নয় শতাংশ, দুই দশমিক ১৬ শতাংশ এবং দুই দশমিক ৫৯ শতাংশ। গ্রামে বর্তমানে মাতৃ মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল দুই দশমিক ১০ শতাংশ। শহরে এ হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল এক দশমিক ৯০ শতাংশ। আলোর উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশে বিদ্যুত ব্যবহার করছে শতকরা ৬৬ দশমিক নয় শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ছয় শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এ হার ছিল ৬৩ দমমিক ছয় শতাংশ, ৫৪ দশমিক ছয় এবং ৫৪ দশমিক চার শতাংশ। কেরোসিনের আলো ব্যবহার করছে ৩২ দশমিক তিন শতাংশ মানুষ, যা ২০১২ সালে ছিল ৩৩ দশমিক এক শতাংশ। অন্যদিকে সৌর বিদ্যুতসহ অন্যান্য উৎস থেকে আলো ব্যবহার করছে শূন্য দশমিক আট শতাংশ মানুষ। বর্তমানে দেশের মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার বেড়েছে। ট্যাপ ও নলকূপের পানির ব্যবহার হার দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ, যা ২০১২ সালে ছিল ৯৮ দশমিক তিন শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের হার ছিল যথাক্রমে ৯৮ দশমিক দুই শতাংশ, ৯৮ দশমিক এক এবং ৯৮ দশমিক এক শতাংশ। খাবার পানির বাইরে অন্যান্য কাজে ট্যাপ ও নলকূপের পানির ব্যবহার বেড়েছে। এ হার দাঁড়িয়েছে বর্তমানে ৬৩ দশমিক সাত শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এ হার ছিল ৬০ দশমিক চার শতাংশ, ৫৫ দশমিক পাঁচ এবং ৫৪ দশমিক সাত শতাংশ। মানুষের মধ্যে টয়লেট ব্যবহারের হার বেড়েছে। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহারের হার দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক তিন শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৩ দশমিক আট শতাংশ। তার আগের তিন বছর এই হার ছিল পর্যায়ক্রমে ৬৩ দশমিক ছয় শতাংশ, ৬৩ দশমিক পাঁচ এবং ৬২ দশমিক সাত শতাংশ। স্যানিটারির ব্যবহার বাড়ায় অন্যান্য পায়খানা ব্যবহারের হার কমেছে। অন্যান্য পায়খানা ব্যবহার করে ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ। যা ২০১২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিল পর্যায়ক্রমে ৩৩ দশমিক ছয় শতাংশ, ৩৩ দশমিক সাত, ৩৪ দশমিক তিন এবং ৩০ দশমিক এক শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। এ হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক চার শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬২ দশমিক দুই শতাংশ, ২০১১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এ হার ছিল ৫৮ দশমিক তিন শতাংশ, ৫৬ দশমিক সাত এবং ৫৬ দশমিক এক শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক আট শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫৪ দশমিক চার শতাংশ। শহরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬৪ দশমিক এক শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫৮ দশমিক সাত শতাংশ। বাংলাদেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে জাতীয়ভাবে শতকরা ৫৫ জন মানুষ নির্ভরশীল (শিশু, প্রতিন্ধী, বেকার ইত্যাদি)। যা ২০১২ সালে ছিল ৫৬ শতাংশ, তার আগের তিন বছরে এ হার ছিল পর্যায়ক্রমে ৫৭ শতাংশ, ৬৫ শতাংশ এবং ৬৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে নির্ভরশীল মানুষের হার শতকরা ৬০ শতাংশ যা তার আগের বছর ২০১২ সালে ছিল ৬১ শতাংশ এবং শহর এলাকায় এ হার ৪৭ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ৪৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। এ সূচক দাঁড়িয়েছে মোট (ছেলে ও মেয়ে মিলে) হাজারে ৪১ জন, যা ২০১২ সালে ছিল সূচক হাজারে ৪২ জন। এক্ষেত্রে ছেলে শিশু মৃত্যুর হারের সূচক দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ৪২ জন, ২০১২ সালে সূচক ছিল ৪৩ জন। অন্যদিকে মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়, মৃত্যুর হারের সূচক হচ্ছে প্রতি হাজারে ৪০ জন।
×