ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখন টুপি, আতর জায়নামাজের দোকানে ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ জুলাই ২০১৫

এখন টুপি, আতর জায়নামাজের দোকানে ভিড়

রহিম শেখ ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। রাজধানীসহ দেশবাসীর ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। এখন বাকি টুকিটাকি কিছু প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এর মধ্যে অন্যতম আতর, টুপি, জায়নামাজ। ঈদের নামাজের জন্য এসব অনুষঙ্গ যেমন প্রয়োজন, তেমনি এসব ছাড়া ঈদের নামাজের পরিপূর্ণতাও অনেকটা না হওয়ার মতো। আর সেজন্য ঈদের বাজারে এখন ভিড়টা বেশি দেখা যাচ্ছে টুপি, আতর, সুরমা, তসবিহ, মেসওয়াক ও জায়নামাজের দোকানগুলোতে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, জিপিও সংলগ্ন ফুটপাথ, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, চকবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দারুণ জমে উঠেছে আতর, টুপি ও জায়নামাজ বেচাকেনা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আকর্ষণীয় নকশা আর নানা কারুকার্যে সুসজ্জিত টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। দেশী টুপির পাশাপাশি বাহারি নকশা আর আকৃতির বিদেশী টুপিও পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। নকশার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, চীনা টুপি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পাকিস্তানী টুপি ১৫০ থেকে ৬০০, ভারতীয় টুপি ২০ থেকে ৬০০ এবং দেশে তৈরি টুপি ১০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানী টুপির মধ্যে আসিফ জারদারি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, চিনের ওয়ানি ৫৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানিরা। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সবচেয়ে বৃহত টুপির দোকান বরকতীয় হাউসের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দোকানে ক্রেতারা আসেন বিদেশী উন্নতমানের টুপি কিনতে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি টুপি হচ্ছে মালয়েশিয়ান মাহাথির টুপি। যার দাম পড়বে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা রউফ বলেন, রোজার শুরু থেকে টুপি বিক্রি ভালো হচ্ছে। এই সময়টায় ভাল লাভ হয়। মানুষ ঈদ ও রোজার মধ্যে তারাবির নামাজের জন্য টুপি বেশি কিনে থাকে। ঈদ বাজারে নিজের চাহিদা অনুসারে এসব পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারাও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে টুপি ও জায়নামাজ কিনতে আসা এক ক্রেতা নোমান বলেন, ভাই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। তাই ছেলেদের জন্য টুপি কিনছি। মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট থেকে আতর কিনছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমান উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের দিন বিশেষ দিন। আর ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আতর ব্যবহার করা সুন্নত। এ কারণেই আতর কেনা। এদিন সকালে বৃদ্ধ বাবার জন্য ভাল আতর কিনতে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে এসেছেন ব্যবসায়ী আহসান হাবিব। এক দোকানে সবচেয়ে ভাল মানের আতর চাইতেই সৌদি আরবের ‘উদ’ আতরের ছোট্ট শিশি হাতে তুলে দিলেন দোকানি। দাম হাঁকালেন এক তোলা ২০ হাজার টাকা। দোকানদার নাজমুল হাসানের দাবি ‘উদ’ এবারের ঈদে আসা সবচেয়ে ভাল আতর। তবে দাম শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ টাকায় এক শিশি লর্ড আতর কিনলেন সাইফুল ইসলাম। দোকানির দাবি, লর্ড আতরও সৌদি আরবের তৈরি। দোকানদার নাজমুল হাসান বলেন, এবার বিদেশী আতরের চাহিদাই বেশি। বেচা-বিক্রিও অন্যবারের চেয়ে ভাল। রাজধানীর আতরের দোকান ঘুরে দেখা যায়, ১০০ মিলিলিটারের সুলতান এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, আলফারেজ দুই হাজার টাকা, লর্ড আতর এক হাজার ২০০ টাকা, সিলভার এক হাজার ৮০০ টাকা, ওপেন এক হাজার ৫০০ টাকা, ইগুবস এক হাজার ৬০০ টাকা, বস এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ম্যাডার রোজ ব্র্যান্ডের আতর এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি শিশি সৌদির রয়্যাল ম্যারেজ ৫০ টাকা, ওয়ান ম্যান শো ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাফসাফা ২০০, দুবাইয়ের সুলতান ২২০ টাকা ভারতের কোবরা ২৫০ টাকা, বোম্বে দরবার ৩০০ টাকা, নূর ৩০০ টাকা এবং ইরানি গাউজ আতর ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০০ টাকায়। এর মধ্যে দরবারুকাঁচা ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মদিনা ৪০ এবং জান্নাতুল ফেরদাউস ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের সকালে নামাজে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ জায়নামাজ। রোজার শেষ দিনগুলোতে জায়নামাজের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যেসব জায়নামাজ পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই বিদেশে তৈরি। এসব জায়নামাজেও যুক্ত নকশা আর কারুকাজ। বিক্রেতারা বলছেন, বিদেশী তৈরি এবার পাকিস্তানে কোকার জায়নামাজ ৪৫০ থেকে ৬৫০, ন্যাশনাল ৪৫০ থেকে ৬০০, তুরস্কের আইরিন ৫০০ থেকে ৬০০, কাটারে নেওয়াজ ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশে তৈরি গ্যাভার্ডিন কাপড়ের জায়নামাজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। জরির কাজ করা তুরস্কের আইরিন জায়নামাজের দাম চাওয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। কুষ্টিয়ার তৈরি জায়নামাজগুলো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন জায়নামাজ বিক্রেতা মোঃ ইয়াছিন। তবে বিদেশী জায়নামাজই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। প্লাস্টিকের পাশাপাশি কাঠ ও পাথরে তৈরি বিভিন্ন ধরনের তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। আকার ও উপাদান ভেদে দামেও পার্থক্য রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে আকিক পাথরের তৈরি তসবিহ ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, জমরুদ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, সোলেমানি পাথরের তসবি ৩০ থেকে ১৫০ টাকা, ক্রিস্টাল পাথরের তসবিহ ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঠের তৈরি তসবিহ ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানদাররা। এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের বিক্রেতা নাঈমুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নামাজে আল্লাহর জিকির করার জন্য মানুষ তসবিহ কিনছে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে ভাল বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আরেক অনুষঙ্গ সৌদি আরবের সুরমা। প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
×