ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিইসির কাছে স্পীকারের চিঠি

লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য এখন নির্বাচন কমিশনে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ জুলাই ২০১৫

লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য এখন নির্বাচন কমিশনে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য এখন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। ধর্ম নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসানে নির্বাচন কমিশনে চিঠি গেছে জাতীয় সংসদ থেকে। সোমবার বিকেলে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং আগের নজিরগুলো বিবেচনায় এনে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে ইসি। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশেষ বাহক মারফত স্পীকারের চিঠি যায় নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা কিছুক্ষণ আগে চিঠিটি পাঠিয়েছে। চিঠিতে কী লেখা তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করলেও এটুকু জানান, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্পীকারের চিঠি প্রাপ্তির পর এ বিষয়ে খুব দ্রুত বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। সেখানে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আগের নজিরগুলো বিবেচনা করে লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাঁদের মতে, অতীতের রেওয়াজ অনুসরণ করলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার সুযোগ থাকতে পারে লতিফ সিদ্দিকীর। তবে দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ায় সে সুযোগও তাঁর আর নাও থাকতে পারে। এর আগে গত ৫ জুলাই দল থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের দীর্ঘ আট মাস পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি জানানো হয় স্পীকারকে। ওই সময় স্পীকার সাংবাদিকদের জানান, লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়টি আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর স্পীকার আইনজ্ঞদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠান। চিঠি চালাচালি হলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ আদৌ চলে যাবে কি না, এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সাংবিধানিক নানা প্রশ্ন। কিছু আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলছেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, নিজে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগও করেননি। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র এ কারণে লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে এখন আর পরিচয় দিতে না পারলেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকতে আইনগত কোন বাধা নেই। এ ব্যাপারে তাঁরা উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পীকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে। আবার ভিন্নমতও রয়েছে আইনাঙ্গনে। অনেক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে দল থেকে পদত্যাগ কিংবা বিপক্ষে ভোট দানের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য পদ চলে যাওয়ার বিধান থাকলেও যেহেতু লতিফ সিদ্দিকী যে দলের মনোনয়নে নির্বাচন করেছেন, সেই দল তাঁকে বহিষ্কার করলে তাঁর এমপি পদে বহাল থাকার কোন নৈতিকতা নেই। লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করেছে। কারণ তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারতেন না। আর সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে স্বতন্ত্র এমপি হতে গেলে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। নির্বাচনের আগে লতিফ সিদ্দিকী তা পালন করেননি। এ কারণে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ক্ষেত্রে আইনগত তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। উল্লেখ্য, পোড় খাওয়া রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রিসভায় তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রির দায়িত্বেও ছিলেন। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী মহানবী (সা), হজ ও তাবলীগ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে লতিফ সিদ্দিকীকে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্য পদও খারিজ করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের ২৩ নবেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। গত ২৯ জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।
×