ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুয়া কাগজপত্রে ভারত গিয়ে বাংলাদেশের ১৯ ক্যাডেট আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ জুলাই ২০১৫

ভুয়া কাগজপত্রে ভারত গিয়ে বাংলাদেশের ১৯ ক্যাডেট আটক

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চাকরির ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ১৯ জন ক্যাডেটকে পাঠিয়েছিল ভারতের মুম্বাইয়ে ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত একটি নাবিক নিয়োগ সংস্থা। নিয়ম রয়েছে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমোদন নেয়ার। তবে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর বলছে, সমুদ্রযাত্রার অনুমোদন চেয়ে দরখাস্ত করা হলেও অনুমোদন পাওয়ার আগেই তাদের মুম্বাই পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমন্ত্রণপত্র ও যোগদান চুক্তি না থাকায় এবং ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে ভারতের মুম্বাই সংলগ্ন বেলাপোর পুলিশ ফাঁড়ি ওই ১৯ জন ক্যাডেটকে আটক করে। দেশে ফিরতে না পেরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর লয়েলস, যোগদান চুক্তি, জাহাজের বিষয়ে ও প্রেরক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খতিয়ে দেখে অনুমোদন দিয়ে থাকে। তবে অনুমোদন ছাড়া ১৯ ক্যাডেটকে মুম্বাইয়ে পাঠানো সংস্থাটির বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। সূত্র জানায়, রাজধানী উত্তরার ওয়েস্ট ওয়ে মেরিন একাডেমি (ডব্লিউএমএ) দুটি বিদেশী জাহাজের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে গত ১৬ জুন ১৯ জন ক্যাডেটকে মুম্বাই পাঠায়। চুক্তি করা জাহাজগুলো-সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি ক্যারিনা ওশেন (কারগো ভেসেল) ও পানামার পতাকাবাহী এমটি সাইপ্রাস গ্যালাক্সি (তেল/কেমিক্যাল ট্যাঙ্কার)। ডব্লিউএমএ প্রথমবার ১১ জন ও দ্বিতীয়বার ৭ জনকে কলকাতা হয়ে মুম্বাই পাঠায়। কলকাতায় ডব্লিইএমএর স্থানীয় প্রতিনিধি সঞ্জয় সাহা তাদের রিসিভ করে মুম্বাইয়ের গীতাঞ্জলী হোটেলে রাখেন। ওই হোটেলে কিছু কাগজপত্র স্বাক্ষর করিয়ে ১৮ জুন জাহাজে উঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতি ৩ হাজার ২০০ ডলার করে হাতিয়ে নেয় সঞ্জয় সাহা। ১৮ তারিখ যথারীতি মুম্বাই বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে ক্যাডেটদের কাছে এজেন্টের প্রতারণার বিষয়টি উন্মোচিত হলে তারা একাডেমিতে যোগাযোগ করে। একাডেমিকে বিষয়টি জানানোর পর ডব্লিউএমএর কর্মকর্তা মাহফুজ আলম মুম্বাইয়ে পৌঁছে যান। ব্যয় কমাতে তাদের গীতাঞ্জলী হোটেল থেকে ক্যাডেটদের লাকী হোটেলে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় ক্যাডেটদের অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ক্যাডেটদের পাসপোর্টসহ ২০টি পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে মাহফুজ আলম দিল্লীতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্দেশে রওনা করেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা দেয় পুলিশ। এদিকে দিল্লী যাওয়ার পথে বেলাপুর পুলিশ ফাঁড়ি ২০টি পার্সপোর্টসহ মাহফুজকে আটক করে। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে লাকী হোটেলে অভিযান চালিয়ে বাকিদেরও আটক করা হয়। অদ্যাবধি তারা সকলেই বেলাপুর পুলিশ হেফাজতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘটনার শিকার আশিকুর রহমান বলেন, ‘১২ লাখ টাকা কোর্স ফি, সাড়ে তিন লাখ টাকা চাকরির চুক্তিসহ নানা ধরনের খরচ করেছি ওই মেরিন একাডেমিতে। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা এখানে প্রচ- গরমে, না খেয়ে একটি ভয়ঙ্কর পরিবেশে দিনানিপাত করছি।’ বেলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা মিকাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি তাদের একাডেমি কিংবা তারা প্রতারিত হয়েছেন। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এখন আইনানুযায়ী তাদের রেহাই করে নেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপরই বর্তায়।’ এ বিষয়ে জানতে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের শিপিং মাস্টার শামীম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’ ভিকটিম ক্যাডেট আশিকুর রহমানের আত্মীয় ক্যাডেট আলতাফ চৌধুরী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া কি করে লোক পাঠায় তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বেআইনী কর্মকা- করলেও কর্তৃপক্ষ ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে নিষ্ক্রিয়। ভিকটিমদের টাকা ফেরত, দেশে ফিরিয়ে আনা ও দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জোর দেন তিনি। এদিকে এতসব কা- ঘটে গেলেও নীরব একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ওয়েস্ট ওয়ে মেরিন একাডেমি চেয়ারম্যান (সাবেক নেভী কমান্ডর) এএসএম আজিম বলেন, ক্যাডেট প্রেরণের ক্ষেত্রে আমাদের সব প্রক্রিয়াই সঠিক থাকে। কিন্তু মুম্বাইয় এজেন্ট সঞ্জয়ের প্রতারণার কারণে আমাদের সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। ক্যাডেটদের কবে নাগাদ ফিরিয়ে আনা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামনে তো ঈদ। আশা করছি ঈদের পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এজেন্ট সঞ্জয় টাকা নিয়ে ভেগে যাওয়ার পর বিশ্বস্ত এজেন্ট আয়াজ ইব্রাহীম পাঠানকে একটিভ করে ডব্লিউএমএ। তিনি ক্যাডেটদের কাগজপত্র দেখে বলেন, সব কাগজই ভুয়া।
×