ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এই সেবা কবে চালু করা যাবে তা বলতে পারছে না বিটিসিএল

ল্যান্ডফোনে ত্রিমুখী সেবা কয়েকদিনেই অকার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ জুলাই ২০১৫

ল্যান্ডফোনে ত্রিমুখী সেবা কয়েকদিনেই  অকার্যকর

ফিরোজ মান্না ॥ বিটিসিএল ল্যান্ডফোনে ত্রিমুখী সেবা চালু করার কয়েক দিনের মাথায় তা অকার্যকর হয়ে গেছে। গত বছরের শেষদিকে ল্যান্ডফোনে ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি দেখার সুবিধা রেখে সেবাটি চালু করেছিল বিটিসিএল। এখন বিটিসিএল বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে সেবাটি গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি। প্রাথমিক পর্যায়েএক লাখ টেলিফোন এই সেবার আওতায় আনা হয়েছিল। বিটিসিএল এই সেবার নাম দিয়েছিল ‘ট্রিপল প্লে’। এই ট্রিপল প্লে সেবা কবে নাগাদ চালু করা সম্ভব হবে তা এখন বিটিসিএল বলতে পারছে না। সূত্র জানিয়েছে, ত্রিমুখী সেবা দেয়ার জন্য বিটিসিএল রাজধানীর উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ৭ ডিজিটের ফোন নম্বরের বদলে ৮ ডিজিট করেছে। ইতোমধ্যে উত্তরা এক্সচেঞ্জের ৮৯১ এবং ৮৯২ গ্রুপের সাত হাজার পুরনো টেলিফোন নম্বর ৮ ডিজিটে উন্নীত করা হয়। শেরেবাংলা নগর ও গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় আট হাজার নম্বর পাল্টে গেছে। মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় সাত হাজার টেলিফোন ৮ ডিজিটে করা হয়েছে। বিদ্যমান নম্বরের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে সরকারী ল্যান্ডফোন অপারেটর বিটিসিএল এ কাজ করছে। আধুনিক ট্রিপল প্লে সেবা পেতে সাধারণ গ্রাহকদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকার সর্বত্র অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন হওয়ার আগে সব এলাকায় এ সেবা পাওয়া যাবে না। শুধু মিরপুর ডিওএইচএসে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক থাকায় সেখানে এই উন্নত সেবা চালু করা হয়। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান, রমনা, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় এক লাখ গ্রাহকের টেলিফোন নম্বর ৮ ডিজিটে পরিবর্তন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকরা এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবেন। তবে বেশিরভাগ গ্রাহকেরই টেলিফোন নম্বর থাকবে না। সম্পূর্ণ নতুন নম্বর পেয়েছেন। আগে বিটিটিবির বর্তমানে বিটিসিএল টেলিফোন নম্বর ছিল ছয় ডিজিটের। তখন ছিল এনালগ সিস্টেম। আর এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরের প্রয়োজনে তা ৭ ডিজিটে পাল্টে দেয়া হয়। সে সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল আগের নম্বরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শুধুমাত্র একটি ডিজিট যোগ করে। কিন্তু বর্তমানে টেলিফোন নম্বর পুরোপুরিই পাল্টে গেছে। মোবাইল ফোন অপারেটররাও তাদের এক সময়ের ১০ ডিজিটের নম্বর ১১ ডিজিটে পরিবর্তন করে। কিন্তু তা করা হয় আগের নম্বরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই। বিটিসিএল জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে আগের নম্বরের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে নম্বর পরিবর্তন হলেও পরে শেষের চার ডিজিট অপরিবর্তিত রাখা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। টেলিফোন নম্বর পরিবর্তন বিষয়ক তথ্য জানতে চাইলে গ্রাহকদের অফিস চলাকালে ৮১৪২০০০, ৯১১৮৯১৯ ও ৮১১৭৪৪৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আধুনিক ও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য ৭ ডিজিটের ওই সব নম্বর ৮ ডিজিটে পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো নম্বর ও পরিবর্তিত নতুন নম্বরের প্রথম পর্যায়ের তালিকা বিটিসিএলের অফিসিয়াল ওয়েবপেজে পাওয়া যাবে। এছাড়া নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদেরও তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন (১৭১ কেএল) প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। বিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রাহকদের আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রচলিত কপার কেবলের ব্যবহার সীমিত রেখে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার একদিকে যেমন সাশ্রয়ী অন্যদিকে ব্যান্ডউইডথ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সেবা সহজেই দেয়া যাবে। বিটিসিএল বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এই প্রকল্পে এনজিএন বেজড সফট সুইচের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়া যাবে। এফটিটিবি (ফাইবার টু দ্য বিল্ডিং) এফটিটিএইচ (ফাইবার টু দ্য হোম) এফটিটিও (ফাইবার টু দ্য অফিস) ইত্যাদি সেবা দেয়া হবে। এতে গ্রাহকরা একই সঙ্গে ভয়েস, ডিশ ও ডাটা সেবা পাবেন। অন্যদিকে, পিএসটিএন বা ফিক্সড ফোন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফিক্সড ফোন সেবা সম্প্রসারণে অপারেটরদের আধুনিকায়ন, ব্যবসাবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ফোনসহ ত্রিমুখী সেবাদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বন্ধ ফিক্সড ফোন অপারেটরদের লাইসেন্স ও তরঙ্গ বিষয়ক জটিলতা নিরসনের পরই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, ফিক্সড ফোন সেবার সম্প্রসারণে বিদ্যমান পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) নীতিমালাটি সংশোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বিটিআরসি। সংশোধিত নীতিমালায় ফিক্সড ফোন অপারেটরদের এনজিএনভিত্তিক ত্রিমুখী সেবাদানের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে একই লাইনের মাধ্যমে ভয়েস কল, ইন্টারনেট সেবা ও আইপি-টিভি সেবা পাবেন ফিক্সড ফোনের গ্রাহকরা। সেলফোন সেবার কারণে ফিক্সড ফোনের ব্যবহার কমে এলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও জনপ্রিয় পিএসটিএন অপারেটরদের সেবা। মূলত কম খরচে ভয়েস কল করার সুবিধা ও ডাটা কানেক্টিভিটি সেবার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
×