ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাইক্রোতে লাশ নিয়ে পালানোর সময় চালক আটক

শিশুকে পিটিয়ে হত্যা ॥ ভিডিও প্রকাশে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জুলাই ২০১৫

শিশুকে পিটিয়ে হত্যা ॥ ভিডিও প্রকাশে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটে চুরির অপরাধ এনে কিশোর রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিওচিত্র প্রকাশে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিজেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য খুনীদের কাছে বার বার আকুতি জানালেও পাষ- নরপশুদের মন গলেনি। হত্যাকাণ্ডের পর তার লাশ গুমের চেষ্টা করা হলেও হাতেনাতে আটক হয় এক যুবক। পরে ইউটিউবসহ সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় শিশুটিকে নির্যাতনের নির্মম চিত্র। নিহত রাজন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। গত মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটার দিকে একটি মাইক্রোবাসযোগে (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৪-০৫১৬) ১৪ বছর বয়সী এ শিশুকে হত্যার পর তার মরদেহ গুম করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় কুমারগাঁও এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মুহিত আলমকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। আটকের পর সে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দীতে রাজন হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। এ ঘটনার পরই শিশুটিকে নির্যাতনের একটি ভিডিওচিত্র ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ভিডিওচিত্রটি এখন মোবাইলের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নীল শার্টারের একটি দোকানের সামনে ও পরবর্তীতে একটি গ্যারেজে নিয়ে রাজনকে খুঁটির সঙ্গে হাত পেছনে বেঁধে জিআই পাইপ দিয়ে পেটানো হচ্ছে। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক... লগে কারা আছিল...’ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চেয়ে মারধর করা হয়। ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময়ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত রয়েছে সময়। তখন সকাল সাড়ে সাতটা। মারধর করার সময় একদিকে রাজনের মুখে আর্তচিৎকার, আর অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের মুখে অট্টহাসি দিয়ে নানা কটূক্তি করতেও শোনা গেছে। রাজনের নখে, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করে এক সময় বাঁ-হাত ও ডান পা ধরে মোচড়াতেও দেখা যায়। কয়েক মিনিটের জন্য রাজনকে হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটতে দেয়া হয়। ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো...’ বলে রাজনের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটানো হয়। এ সময় রাজনের শরীর ও চোখ-মুখ বেশ ফোলা দেখা গেছে। পানির জন্য হাহাকার করছে রাজন। কিন্তু ঘাতকরা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছেন। উপস্থিত কেউ একজন বলছে, টাইগার এনার্জি ড্রিংস এনে খাওয়াতে। আবার অন্যজন বিয়ার আনতে বলছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মুমূর্ষু রাজন তাকে পুলিশ হেফাজতে দিতে আর্তি জানায়। তখন ঘাতকদের একজন অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘তুই আমারে চিনিস’। রাজনকে নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিও ফুটেজটির এমন দৃশ্য এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
×