ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী স্থলবন্দর নিয়ে নতুন স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১২ জুলাই ২০১৫

বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী স্থলবন্দর নিয়ে নতুন স্বপ্ন

এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে স্থল বাণিজ্যসহ ইমিগ্রেশন নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে দু’দেশেরই ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। পঞ্চগড় জেলা আমদানি-রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলার দাবি, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরকে সব রকম পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগসহ ইমিগ্রেশন সুযোগ করে দেয়া হোক। বাংলাদেশের পঞ্চগড়েও যেমন বাংলাবান্ধাকে নিয়ে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে তেমনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি বাণিজ্য শহর ঘেঁষে ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর পাশাপাশি এই বন্দর দিয়ে ভারতের সব ধরনের পণ্য রফতানিতে আশাবাদী উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী মহল। তাদের দাবি, এই বন্দর পুর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে উভয় দেশের উত্তরবঙ্গের কৃষি অর্থনীতিও চাঙা হবে। ভারতের পাশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গে চ্যাংরাবান্ধা, হিলি, মহদিপুর ও ফুলবাড়ী স্থলবন্দর রয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র দুটিতে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু রয়েছে। গত কয়েক যুগ ধরে চালু থাকা চিলাহাট-হলদিবাড়ি স্থল সীমান্তটিও ২০০১ সালে ভারত সরকার নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে বাংলাদেশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষজনকে লালমনিরহাট ওপারে ভারতের পশ্চিবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলা ও নেপাল-ভুটানের লোকজনকে বুড়িমাড়ি-চ্যারাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। এতে উভয় দেশের লোকজনের সড়কপথের দূরত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিনিয়তই সীমাহীন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। দু‘দেশের ব্যবসায়ী মহলের দাবি, এদিক দিয়ে বাণিজ্য শহর শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ী আর এ পারে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী সীমান্তের খুব কাছাকাছি রয়েছে নেপাল, ভুটানের মতো দুটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত। হাতের নাগালেই রেল যোগাযোগ এমনকি খুব কাছেই রয়েছে বাগডোকরা বিমানবন্দরও। ওপারে ফুলবাড়ীর পার্শ্বে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) নামে সবচেয়ে বৃহৎ রেলওয়ে জংশন। বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত- নেপালের পণ্য পরিবহন চালু রয়েছে। কিন্তু তা খুবই সীমিতভাবে। ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, গম, সাইকেলসহ কিছু জিনিসপত্র আমদানি হচ্ছে। আর নেপাল থেকে আসে মুলত বিভিন্ন ডাল। অথচ, সম্ভাবনাময় এই বন্দর দুটিতে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু নেই। ভারতের নর্থবেঙ্গল এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রতন বনসাল জানান, ভারতের লবণ, চাল, কমলালেবু, আপেল, আঙ্গুর, আনারস আমসহ প্রসাধনী সামগ্রীর বাংলাদেশে ভাল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দুদেশের চুক্তি না থাকায় অনেক পণ্য আমরা রফতানি করতে পারছি না। তিনি বলেন, দুদেশের উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হয়ে উঠেছে ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা। তাই এই দুটি বন্দর দিয়ে সমস্ত পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ করে দেয়াসহ দ্রুতই ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু করা হোক। ভারতের উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন পোসিনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা সীমান্ত দুদেশের অন্যতম বড় এবং ভাল পরিকাঠামোযুক্ত বাণিজ্য পথ। ধীরে ধীরে তা আরও উন্নত হচ্ছে। দুদেশের উত্তরবঙ্গকে চাঙা করতে ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা দিয়ে সবধরনের পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার। শীঘ্রই এই দুটি বন্দর দিয়ে সমস্ত পণ্য পরিবহনের ছাড়পত্র দেয়ার দাবিসহ লোক পারাপার (ইমিগ্রেশন) ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান তিনি। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি পণ্য পরিবহন অবাধ করা যায় তাহলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটাই উন্নত হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে এখানকার কৃষকরা যেমন উৎপাদিত পণ্যের ভাল দাম পাবেন পাশাপাশি ব্যবসায়ী মহলও উপকৃত হবেন। প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। তিনি ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যত দ্রুতই লোক পারাপার ব্যবস্থা চালু করা হোক।
×