ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উজ্জীবিত প্রোটিয়াদের লক্ষ্য জয়

সমতা না সিরিজ হার, কঠিন লড়াই টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১২ জুলাই ২০১৫

সমতা না সিরিজ হার, কঠিন লড়াই টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ ‘আমরা শক্তভাবেই কামব্যাক করব।’-আজ যে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দ্বিতীয় ওয়ানডে হবে তা নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তা করতে পারা মানে জয় পাওয়া। তাতে সিরিজে যে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, আসবে ১-১ সমতা। আর হারলেই এক ম্যাচ হাতে থাকতেই ০-২ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে যাবে। পারবে বাংলাদেশ সমতায় ফিরতে? সেই কাজটি করতে দিতে চান না দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক হাশিম আমলা। আজই সিরিজ নিশ্চিত করার দিকে তার দৃষ্টি রয়েছে। দলের বর্তমান সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স নেই। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে অনায়াসে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে প্রোটিয়াদের ভেতরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। দুটি টি২০তে (প্রথম টি২০তে ৫২ রানে ও দ্বিতীয় টি২০তে ৩১ রানে জিতেছে) বাংলাদেশকে হারানোর পর প্রথম ওয়ানডেতেও জয় মিলেছে। তাতে করে ভিলিয়ার্সের অভাব অনুভূত হয়নি। তা হওয়ারও কথা নয়। এক কাগিসো রাবাদাই যে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। ৮ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। এরসঙ্গে আছে হ্যাটট্রিকও। বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষেকেই বাংলাদেশের তাইজুল ইসলামের (গতবছর ডিসেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন) পর হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েছেন রাবাদা। তবে একদিক দিয়ে রাবাদা অভিষেক ওয়ানডেতে সব বোলারকেই ছাপিয়ে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিদেল এ্যাডওয়ার্ডসও অভিষেকে ৬ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এতদিন এ্যাডওয়ার্ডসই ছিলেন সবার উপরে। তবে রাবাদার চেয়ে ৬ রান বেশি দিয়েছিলেন। সেখানেই রাবাদা সবার উপরে চলে যান। অভিষেকে বিশ্বরেকর্ডও গড়েন। এ রাবাদাকে নিয়ে সে কী উচ্ছ্বাস আমলার। সঙ্গে ভিলিয়ার্সকেও মিস করছেন। বলেছেন, ‘কাগিসো (রাবাদা) অসাধারণ বোলিং করেছে। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই বাংলাদেশকে ১৬০ রানে রুখে দেয়া গেছে। আমরা কিছু ভাল খেলোয়াড় পেয়েছি। যারা পারফর্ম করতে মুখিয়ে আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এবিকে (ডি ভিলিয়ার্স) মিস করছি। তবে যারা খেলছে, তারাও ভাল করছে। আমরা প্রথম ওয়ানডেতে ভাল ব্যাটিং করেছি।’ এ ধারাবাহিকতা যদি আজও বজায় থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য আবারও বিপদ আসতে পারে। সেই বিপদ মানেই হচ্ছে হার। মাশরাফি অবশ্য প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যান ব্যর্থতায় হতাশ হয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা ২০০ রান করতে পারতাম। ২২০ রান হলে অন্যরকম ম্যাচও হতে পারত। কিন্তু দ্রুতই উইকেট হারিয়েছি। প্রতিপক্ষের এক বোলার যদি (১৭ রানের সময়ই ৩ উইকেট নেন রাবাদা) হ্যাটট্রিক করে ফেলেন তাহলে পেছনেই চলে যাওয়া হয়। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল ছিল। কোন অজুহাত দেয়ার নেই। আমরাই ভাল ব্যাটিং করতে পারিনি।’ এখন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভুল শুধরে বাংলাদেশ কামব্যাক করতে পারলেই হলো। তা না হলে সেই নবেম্বর থেকে যে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে টানা সিরিজ জয়ের মধ্যে আছে বাংলাদেশ, তিন সিরিজ জেতার পর চতুর্থ সিরিজে এসে হার হবে। জিম্বাবুইয়েকে ৫-০, পাকিস্তানকে ৩-০, ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসে সিরিজ হার হবে। বাংলাদেশ যে প্রথম ওয়ানডেতে হেরেছে, তাতে দেখা গেছে শক্তিশালী ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার ছাড়াই হার হয়েছে। বোলিংয়ে পেসার কাইল এ্যাবট, ইমরান তাহির, জেপি ডুমিনি উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। অথচ ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই রাবাদা ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন। আর ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নেমে ২ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস মরিস। আর ব্যাটিংয়ে ভিলিয়ার্স নেই। হাশিম আমলার মতো ‘রান মেশিন’, যিনি উপমহাদেশের উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন; তিনিও ১৪ রানে আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা জয় থেকে বঞ্চিত হয়নি। সেই তুলনায় ব্যাট হাতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু সাকিব আল হাসান ৪০ রানের (৪৮ রান) বেশি করতে পেরেছেন। নাসির হোসেন শেষে হাল ধরার শুধু চেষ্টা করেন। তাতে ৩১ রানে প্রশংসিত ইনিংসই খেলেন। মুশফিকুর রহীম দুর্বল শটে আউট হওয়ার আগে করেন ২৪ রান। আর শুরুতে ইনিংসটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর পরও দলের হাল ধরার সময়ই ২৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। এ চার ব্যাটসম্যানই যা রান করতে পেরেছেন। ওয়ানডে যা আবার খুব আহামরি রানও নয়। বাকিরা ২ অঙ্কের ঘরেই পৌঁছতে পারেনি। এতটা করুণদশা হয়েছে। বোলিংয়ের হিসেবে আসলে যে মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম ওয়ানডে সিরিজে ভারতের বিপক্ষে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোন উইকেটই পাননি। ক্যারিয়ারে চারটি ওয়ানডে খেলেছেন। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নেমে প্রথমবার উইকেটহীন ম্যাচ শেষ করেছেন মুস্তাফিজ। ১৬০ রান করার পর কী আর ম্যাচ জেতা যায়। সেখানে চমকই বা আর কী থাকে। এরসঙ্গে যদি দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা মাথা ঠা-া রেখে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পণ করেন, তাহলে কী আর উইকেট মিলে। তা ২টি উইকেট ফেলা গেছে। কিন্তু বড় হার থেকে রক্ষা মিলেনি। আর তাই টানা ১০ ওয়ানডে জয়ের পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে হার যে হল তা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও বজায় রইল। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টি২০সহ টানা ১১ ম্যাচ জয়ের পর টানা ৪ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হার ঠেকাতে হলে বাংলাদেশকে আজ জিততেই হবে। তা করতে পারবে বাংলাদেশ?
×