ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমালোচনার মুখে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

শেয়ারবাজারে ধস ॥ মর্যাদা ক্ষুণœ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ জুলাই ২০১৫

শেয়ারবাজারে ধস ॥ মর্যাদা ক্ষুণœ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির

চীনের শেয়ারবাজারের দ্রুত দরপতনে ইউ শিলিনের মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে সময় তিনি হঠাৎ করে তাঁর সাইকেল থেকে রাস্তায় উল্টে পড়ে যান। তবে এই দুর্ঘটনা তাঁর মনোযোগ সরাতে পারেনি। ভাঙ্গা গোঁড়ালি ও ঘাড়ের অস্ত্রোপচার থেকে আরোগ্যলাভের সময় বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর শেয়ারের ভাগ্য জানার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহী হয়ে উঠেন। একটি প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক বিনিময় দফতরের পরিচালক ইউ (৫৫) উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী শিয়ানের হাসপাতাল শয্যা থেকে ফোনে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের ওপর যাদের নজর রাখার কথা সেই সরকারী দফতরগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো করছে না।’ এটি আমাদের নেতাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছেন। খবর ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমসের। চীনের শেয়ারবাজারগুলো তাদের ভারসাম্যহীন পতন ঠেকাতে পারলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের সাময়িক বিরতির পর আবারও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছেÑএক সময় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকে আড়াল করে রাখা সর্বোচ্চ কর্তৃত্ববোধ পুনরুদ্ধার করতে হয়তো দীর্ঘকাল লেগে যেতে পারে। চীনজুড়ে লাখ লাখ মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীর অনেকে প্রশ্ন করছেন পার্টি ও সরকার সাম্প্রতিক ধসের আগে কেন শেয়ারবাজারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতেন এবং তারপর বিপর্যস্ত অবস্থা ঠেকানোর প্রচেষ্টায় দুর্বোধ্য কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক কেরি ব্রাউন বলেন, ‘এটি শুধু শেয়ারবাজারের পতনের প্রশ্ন নয়, এটি পতনোন্মুখ রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন।’ এ ব্যাপারে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১২ সালের শেষের দিকে কমিউনিস্ট পার্টি নেতা পদে আসীন হওয়ার পর থেকে তিনি অতি সতর্কতার সঙ্গে নিজের একটি অসীম শক্তির অধিকারী নেতার ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতি, সাইবার নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অঞ্চলগত দাবিসহ কয়েকটি প্রশ্নে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন চীনে আঘাত হানে সে সময় তিনি ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জনগণকে আশ্বস্ত করার ঘোষণা প্রচার করেন, এমনকি তাদের ধীর-শান্ত নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে বিপর্যয়স্থলে ভ্রমণও করেন। কিন্তু যখন শেয়ারবাজারের পতন শুরু হয় এবং প্রধান সাংহাই সূচকের মূল্যমান সাড়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে ৩২ শতাংশ হ্রাস পায় সে সময় দুই নেতা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাক থাকেন। এমনকি যদি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারের পতন রোধ করতে সক্ষমও হনÑযে প্রচেষ্টা বাজার শক্তিকে বিঘিœত করতে পারে, সেখানে সরকারের বিশৃঙ্খল সাড়া শি’র কর্তৃত্ব এবং বিবেচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চলতি সপ্তাহে চীনা ওয়েবসাইটগুলোতে একটি নিবন্ধ প্রচার করা হয়েছে, যার রচনাকার হিসেবে একজন বিনিয়োগকারীকে কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে, যিনি তাঁর অধিকাংশ সঞ্চয় হারিয়েছেন। ওই নিবন্ধে লেখা হয়, ‘একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা গভীরভাবে বিশ্বাস করত যে, মাতৃভূমি শক্তিশালী হবেÑসে স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’ ‘এটি শেয়ারবাজারের সম্পূর্ণ ধ্বংসসাধন, যাতে দশকব্যাপী প্রাণপণ প্রয়াসে অর্জিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সম্পদের পুরোপুরি বিনাশ সাধন করা হয়েছে। আমাদের জন্য এখন চীনা স্বপ্ন আসলে শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে।’
×