ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজে ভর্তির তৃতীয় মেধা তালিকায় এক লাখ আট হাজার ৬৩৯ জন মনোনীত

গোঁজামিল দিয়ে তালিকা প্রকাশ, নামীদামী কলেজ শিক্ষার্থীশূন্য

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জুলাই ২০১৫

গোঁজামিল দিয়ে তালিকা প্রকাশ, নামীদামী কলেজ শিক্ষার্থীশূন্য

বিভাষ বাড়ৈ ॥ কলেজ ভর্তি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এবার এক লাখ আট হাজার ৬৩৯ শিক্ষার্থীকে মনোনীত করে তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল চারটায় এ তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে (িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া) প্রবেশ করে রোল নম্বর দিয়ে শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারছে। এদিকে তৃতীয় এ তালিকা প্রকাশের পরও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত এখনও প্রায় আড়াই দুইলাখ এসএসসি পাস শিক্ষার্থী। সঙ্কট তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেধা তালিকা নিয়েও। তাড়াহুড়া করে গোঁজামিল দিয়ে তালিকা প্রকাশ করায় নামীদামী অনেক কলেজ শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। বিপরীতে অনেক শিক্ষা বাণিজ্যনির্ভর প্রতিষ্ঠানে রহস্যজনকভাবে মনোনীত করা হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী। কয়েকটি নামী কলেজের অধ্যক্ষরা শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। প্রথম তালিকায় দেশজুড়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় গত ৭ জুলাই ভর্তির জন্য ১৭ হাজার ৬৪৭ শিক্ষার্থীকে মনোনীত করে দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় এ তালিকা প্রকাশের পরেও দেখা গেল, কলেজ ভর্তির বাইরে রয়ে গেছে এসএসসি পাস করা সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। ভুল তালিকার কারণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রাজধানীর সরকারী বিজ্ঞান কলেজ নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয় তা কোনভাবেই কাটছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের ভুলের খেসারত দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানে ২০০ বাণিজ্যের শিক্ষার্থীকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলেও সেই শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেই সেখানে পড়ার বিষয়ে অনিহা প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। প্রথম তালিকায় থাকা সেই ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে আজ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে মাত্র ১০০ জন। কারণ সেখানে নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, নেই বাণিজ্যের একজন শিক্ষকও। কলেজটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখানে রয়েছে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাও। তবে সবই বিজ্ঞান বিভাগ কেন্দ্রিক। মাধ্যমিকে পাস করা শিক্ষার্থীদের এ কলেজেই উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংযুক্ত স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা যায়নি। স্কুল শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি এমন কয়েক ছাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, এটা সত্যিই আজব! সরকারী বিজ্ঞান কলেজে আমরা বিজ্ঞানের ছাত্ররা ভর্তি হতে পারিনি। অথচ বাণিজ্যের ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদেরকে ২০০ বাণিজ্যের শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বলা হয়েছে। এক শ’ ছাত্র ভর্তি হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও আমাদের কলেজে বাণিজ্যের ছাত্র পড়ানোর মতো অবকাঠামো বা শিক্ষক নেই। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, ভর্তি করিয়ে নিতে। সমস্যা হবে না। পরে শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে। এদিকে মন্ত্রণালয়ের কথা অনুযায়ী কলেজ ভর্তি করাতে চাইলেও যেসব শিক্ষার্থী সেখানে সুযোগ পেয়েছে তাদের অনেকে ভর্তি হতে চাইছে না। বরং বিকল্প মাধ্যম খুঁজছে। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার আবার ভর্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এটি হচ্ছে তৃতীয় তালিকা। এ তালিকায় নাম এসেছে ভর্তির সুযোগবঞ্চিত এক লাখ আট হাজার ৬৩৯ শিক্ষার্থীর। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পরই বেরিয়ে এসেছে নতুন সঙ্কটের চিত্র। সর্বশেষ ভর্তির অবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রণালয় ও বোর্ড বলছে, এখন পর্যন্ত নয় লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ হিসাবেই এখানও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি সোয়া দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এবার নতুন পদ্ধতিতে ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৪ শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তিতে আবেদন করে। অনলাইনে এখন পর্যন্ত আবেদনই করেনি এক লাখ ২৬ হাজার ৬১৮ জন। অনলাইনে আবেদন করেও ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি আরও এক লাখ। তালিকায় অসংখ্য ভুলের খেসারত দিচ্ছে আরও কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে। এরা তালিকায় আসলেও মন্ত্রণালয়, বোর্ড ও বুয়েটের কর্তাব্যক্তিদের ভুল তথ্য দেয়ার কারণে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। এই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা তাদের সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরছেন। সঙ্কট তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেধা তালিকা নিয়েও। তাড়াহুড়া করে গোঁজামিল দিয়ে তালিকা প্রকাশ করায় নামীদামী অনেক কলেজ শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। বিপরীতে অনেক শিক্ষা বাণিজ্যনির্ভর প্রতিষ্ঠানে রহস্যজনকভাবে মনোনীত করা হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি নামী কলেজের অধ্যক্ষরা শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কলেজ সম্পর্কে বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অভিযোগ করেছেন নামীদামী অনেক কলেজের অধ্যক্ষরাও। তারা অভিযোগ করেছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকায় বিতর্কিত বাণিজ্যনির্ভর একটি কলেজে এক হাজারের ওপর শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হয়েছে। উত্তরার একটি কলেজে এক হাজারের ওপর শিক্ষার্থী পাঠালেও কমার্সের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কলেজ ও কমার্স কলেজে হাতে গোনা কয়েক শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হয়েছে। সিটি কলেজের অধ্যক্ষ বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, বাণিজ্য শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দ্বিতীয় তালিকায় মাত্র দুজন শিক্ষার্থীকে মানোনীত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। একই অবস্থা কমার্স কলেজেরও। ও কলেজের অধ্যক্ষ বোর্ডকে জানিয়েছে, এখনও তাদের এক হাজার আসন খালি। এভাবে প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে না। সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শাজাহান জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমার প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় তালিকায় মাত্র দুজনকে দেয়া হয়েছে। তৃতীয়তেও দেয়া হয়েছে না দেয়ার মতো। এভাবে চলতে থাকলে কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে হলে কলেজ চালানো যাবে না। তিনি বলেন, উত্তরার একটি কলেজের নাম মাইলস্টেন কলেজ। ওইখানে দেয়া হয়েছে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অথচ সিটি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুইজন। এটা কোন কথা হলো। এদিকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হলেও তাদের নাম ব্যবহার করে বোর্ডের কাছে কয়েকটি কলেজ তালিকা পাঠিয়েছে যে, ওই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নাম ব্যব্হার করে তারা ভর্তি হয়েছে বলে বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর ফলে ওই শিক্ষার্থীরা পছন্দের অন্য কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। এ ধরনের প্রতারণা বন্ধের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আসফাকুস সালেহীন। তিনি জানান, বোর্ডে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা কলেজগুলো চিহ্নিত করছি। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×