ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেনাকাটা

নতুন জুতো কিনতে ব্র্যান্ডের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ জুলাই ২০১৫

নতুন জুতো কিনতে ব্র্যান্ডের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়

রহিম শেখ ॥ ক’দিন বাদেই ঈদ। এ নিয়ে দেশব্যাপী চলছে তুমুল কেনাকাটা। পোশাকের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে ধনী-গরিব সবাই এখন মহাব্যস্ত। এর মধ্যে অন্যতম নতুন জুতো। সেটা হোক ব্র্যান্ড বা নন-ব্র্যান্ডের। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানা রঙ আর বাহারি ডিজাইনের এসব জুতো-স্যান্ডেলের খোঁজে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটছেন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলে। এবার বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় বৃষ্টি, কাদার বিষয়টি মাথায় রেখে জুতোর ডিজাইন করা হয়েছে। দামী ব্র্যান্ডের শোরুমের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও এসেছে জুতো-স্যান্ডেলের নতুন নতুন কালেকশন। রোজার ঈদকেই সবচেয়ে বড় বিক্রি মৌসুম হিসেবে গণ্য করেন জুতো ব্যবসায়ীরা। তাই সারা বছরের মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেকই হয় এ উৎসবে। এবারও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ বাজারে বড় বড় ব্র্যান্ডের জুতোর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক বেশি। তবে এবারের ঈদে দেশীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে আছে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতো-স্যান্ডেল। বড় বড় শপিংমল থেকে ছোট আকারের মার্কেটগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে এসব জুতো। আমদানিকৃত মেয়েদের জুতো-স্যান্ডেলে রয়েছে উজ্জ্বল রং, পুঁতি ও পাথরের কাজ। দাম গড়ে ৩শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে এর চেয়েও বেশি। এছাড়া পেন্সিল হিলত আছেই। সেমি হিল দাম ৯০০ টাকা, থাই ড্রিম কালেকশন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, জেন্স টমি ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, নাইট ঝুম ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা, কলেশটার ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা। চটকদার হওয়ায় এসব জুতো-স্যান্ডেলের গুণগত মান যাচাই না করেই কিনছে অনেক ক্রেতা। তবে আমদানিকৃত সাধারণ মানের ছেলেদের জুতো-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। বসুন্ধরা সিটির মেঘা সুজের বিক্রয়কর্মী ফারদিন জানান, থাইল্যান্ড এবং চায়নার জুতোই ক্রেতার চাহিদা বেশি। তবে ডিজাইন, স্থায়িত্ব, মান এবং স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে অধিকাংশ ক্রেতাই থাইল্যান্ডের জুতোর প্রতি বেশি আগ্রহী হন। বসুন্ধরা সিটিতে স্পোর্টস ও মাডাক্সি জুতোগুলো পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার ৮৫০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। চায়নার চেইনম্যাগি জুতোর দাম ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। জানা গেছে, জুতোর বাজারে প্রায় তিন হাজার কোম্পানি রয়েছে। বছরে বাজারের বিক্রি প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। বিদেশী ব্র্যান্ডের ভিড়ে দেশীয় জুতো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এপেক্স, জেনিস, বে এম্পোরিয়াম, হ্যামকো লেদারেক্স ও ওরিয়ন ফুটওয়্যার ধীরে ধীরে দেশের বাজারে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। এ প্রসঙ্গে এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর জনকণ্ঠকে বলেন, বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়া আমদানিকৃত জুতো-স্যান্ডেলের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়ছে দেশী ব্র্যান্ড। তবে দেশী ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট এক শ্রেণীর ক্রেতা তৈরি হয়েছে। নাসিম মঞ্জুর বলেন, বিদেশী পণ্য সবই যে ট্যাক্স দিয়ে আনা হচ্ছে তা নয়। মিথ্যা ঘোষণায় ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অনেক সময় কম খরচে এনে তা কম দামে বিক্রি করছে। ক্রেতারা কম দামে পাওয়ায় তা কিনছে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিলিয়ে দেশী ব্র্যান্ডের দাম আমদানিকৃত সাধারণ মানের পণ্যের চেয়ে বেশি রাখতে হচ্ছে। এতে মার খাচ্ছে দেশীয় ব্র্যান্ড। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার বলে মনে করেন তিনি। এ্যাপেক্সের জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার স্বপন শাহরিয়ার জানান, ঈদে তাদের বিক্রি বাড়ে ২৫ শতাংশ। এ্যাপেক্স ১২ ব্র্যান্ডের ৫৯০টি ডিজাইনের নতুন জুতো এনেছে এবারের ঈদে। এ্যাপেক্সের বসুন্ধরা শপিংমলের শোরুমে কথা হয় ধানম-ি থেকে আসা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা নাসরিন আরা সাথির সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, জুতো দেখতে সুন্দরের পাশাপাশি টেকসই হওয়াটা জরুরী। এ কারণে ব্র্যান্ডেই ভরসা। এবারের ঈদে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফ্যাশনেবল এবং আরামপ্রদ ৫০০টি নতুন ডিজাইনের জুতো এনেছে ওরিয়ন ফুটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোল্লা জানান, যে কোন আউটলেট থেকে মাত্র ৩ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই ক্রেতাদের জন্য থাকছে লটারিতে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা (কাপল) এয়ার টিকেট, আইফোন সিক্স, গ্যালাক্সি এস ৬ এজ, ডায়মন্ড নেকলেস ও আইপ্যাড জিতে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ধানম-ি থেকে আসা বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বে-এম্পেরিয়ামে কথা নাসিমা খানমের সঙ্গে। তিনি জানান, পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতো কিনেছি। তবে গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশিই বলে মনে হয়েছে। ওই দোকানের বিক্রিয়কর্মীরা জানালেন, উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জুতোর কাঁচামালও এখন আগের মূল্যে পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে জুতোর দাম বাড়ানো হয়েছে। এলিফ্যান্ট রোডে প্রায় দুই শতাধিক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে দেশী ও বিদেশী জুতো। এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে। এলিফ্যান্ট রোডের জুতো-স্যান্ডেলের এক দোকান থেকে থাইল্যান্ডের তৈরি স্যান্ডেল কিনেছেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক মার্কেট ঘুরে ঈদের ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে এই স্যান্ডেল পেয়েছি। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি তিনি জানান। ঢাকা কলেজের ছাত্র আরমান জানান, এখানে কম টাকায় স্টাইলিশ জুতো পাওয়া যায়। তাই দেখতে এসেছি, মার্কেটে কী ধরনের জুতো এসেছে। এলিফ্যান্ট রোডের জুতোর দোকানগুলোতে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা জুতো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এসব জুতো বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথেও পাওয়া যাচ্ছে। দাম গড়ে ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় ক্রেতারা এসব কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান দোকানীরা। ফুটপাথেও আমদানিকৃত জুতো-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট, মিরপুর, ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ এখন বেশ জমজমাট। এসব ফুটপাথের দোকানগুলোতে জুতো-স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। তবে দামের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর গুণগত মানও কিছুটা নিম্ন।
×