ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধু মেসির দুঃসময়ে পাশে নেইমার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ জুলাই ২০১৫

বন্ধু মেসির দুঃসময়ে পাশে নেইমার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিদারুণ দুঃসময়ের মধ্যে আছেন লিওনেল মেসি। তারকা এই ফুটবলার বার্সিলোনার হয়ে রেকর্ড শিরোপা জয় করলেও নিজ দেশ আর্জেন্টিনার জার্সিতে ম্রিয়মাণ। এখন পর্যন্ত জিততে পারেননি কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ও সদ্যই কোপা আমেরিকা কাপে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছে। দুটি আসরেই মেসির আর্জেন্টিনা ফাইনালে হারের জ্বালায় জ্বলেছে, যে কারণে সাবেক রেকর্ড টানা চারবারের ফিফা সেরা ফুটবলার এখন সমালোচনায় জর্জরিত। এই দুঃসময়ে অনেকেই মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার তাঁর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্লাব সতীর্থ নেইমার। ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নিজেও দুঃসময়ের মধ্যে আছেন। কোপার মাঝপথ থেকে অকারণে ঝামেলা পাকিয়ে নিষিদ্ধ হন। মেসির কষ্টটা তাই নেইমারের চেয়ে কারও বেশি বোঝার কথা নয়! কষ্টের এই সময়ে তাই আরেকবার মেসিকে সবার সেরা বলেছেন নেইমার। ব্রাজিল অধিনায়ক বলেন, আমরা যারা পুরো মৌসুমটা একসঙ্গে কাটিয়েছি, তারা তো বটেই, আমাদের সমর্থকরাও জানে মেসিই সেরা। সে-ই এক নম্বর। তিনি আরও বলেন, ফাইনালে হারাটা খুব কষ্টের। মেসির জন্য বিষয়টি আরও কষ্টের। সে এক বছরের মধ্যে দু’বার এই কষ্ট পেয়েছে। তবে এতে মেসির শ্রেষ্ঠত্ব শেষ হয়ে যায়নি। কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হার মানে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে এই আসরের শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালেও জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে মেসি ও আর্জেন্টিনার শিরোপা স্বপ্ন ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। টানা দুই আসরের ফাইনাল থেকে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দিতে না পারার কষ্টে মেসি নিজেই বলেছিলেন, ফাইনালে হারের মতো কষ্ট আর হয় না। তারপরও সমালোচকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তিনি। স্বয়ং তাঁর পরিবারের মানুষও সমালোচনায় শামিল হয়েছেন। ট্রফিটাই শুধু জিততে পারেননি কোপায়। কিন্তু চার ম্যাচে সেরা হয়েছেন। সেমিফাইনালে তাঁর জাদুতেই প্যারাগুয়ের জালে হাফডজন গোল দেয় আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েও নাকি প্রত্যাখ্যান করেছেন পুরস্কার। তারপরও নাকি মেসির খেলায় মন ভরেনি নানার। বরং এমন অভিযোগ করে বসেছেন, কোপা আমেরিকার শেষ তিন ম্যাচে মেসি নাকি গা বাঁচিয়ে খেলেছেন! সম্পর্কে তিনি মেসির নানা। সেই এ্যান্টোনিও কুচ্চিটিনি এক রেডিও সাক্ষাতকারে বলেন, ও (মেসি) ওর পুরোটা খেলেনি। ওর কিছু জাদু দেখা গেছে, পুরোটা নয়। জয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে ও একেবারেই বাজে খেলেছে। খুব ঢিলেমি করেছে, আলসেমি নিয়ে খেলেছে। এবারের কোপার ৪৪তম আসরে কুচ্চিটিনির নাতি করেছেন মাত্র একটি গোল। সেটিও প্রথম ম্যাচে, পেনাল্টি থেকে। পরের পাঁচ ম্যাচেই গোল নেই। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে পেনাল্টি বাদে প্রায় এক হাজার মিনিট গোলবঞ্চিত মেসি। অথচ এই মেসিই গোল আর এ্যাসিস্টের বন্যায় ভাসিয়ে বার্সিলোনাকে এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক ট্রেবল। এসব কারণেই সমালোচনায় জর্জরিত এখন মেসি। যে কারণে অনেকেই শঙ্কা করছেন- রাগে, ক্ষোভে না আবার জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নেন বার্সিলোনা তারকা। ক্লাবের হয়ে চারটা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি জিতেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ লীগ লা লীগার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। লা লীগার সর্বোচ্চ গোলের যোগানদাতাও। চারবারের ফিফা বর্ষসেরা। সব মিলিয়ে বার্সিলোনায় জেতা গুরুত্বপূর্ণ ট্রফির সংখ্যা ২৪টি! ইউরোপের শীর্ষ ফুটবলে খেলে ৫১৪ ম্যাচে ৪২৩ গোল। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে ঝুলি একেবারেই ফাঁকা। অলিম্পিক ফুটবল ও যুব বিশ্বকাপ বাদে দেশের হয়ে কিছুই জিততে পারেননি। এ কারণে অনেকেই মনে করছেন, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেই হয়ত ভুল করেছেন মেসি! যদি ২০০৪ সালে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রস্তাবে সাড়া দিতেন তাহলে হয়ত এতদিনে স্পেনের নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন। পেয়ে যেতেন হয়ত স্বপ্নের বিশ্বকাপও। মেসিকে ২০০৪ সালে স্পেনের যুব দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। বয়স তখন সতেরোও পূর্ণ হয়নি। এত কম বয়সে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। মেসি জানেন, জীবনের সিংহভাগ সময় তাঁর কাটবে স্পেনেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এখানে চলে এসেছেন। আর্জেন্টাইন স্প্যানিশের চেয়ে আসল স্প্যানিশ ভাষাটাই নাকি ভাল বলেন। আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত জানেন কি-না, এই সংশয় এখনও কাটেনি অনেকের! এসব কারণেই এখন প্রশ্ন উঠেছে, মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে না খেলে স্পেনের নাগরিকত্ব বেছে নিলে হয়ত আপসোসে পুড়তেন না।
×