ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বৃষ্টিস্নাত সকালে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আগাম ঈদ আনন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টিস্নাত সকালে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আগাম  ঈদ আনন্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকালে তখন আষাঢ়ের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ঝরেনি বর্ষার বারিধারা। এমন সময় সুুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত লালমাটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মিলনায়তন। ছোট ছোট মানুষগুলো ভীষণ ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। চলছে হইচই আর পারস্পরিক ভাববিনিময়। এরই মাঝে শুরু হলো অঝোর বৃষ্টি। তবে সেই বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে মিলনায়তনে বয়ে গেল সুরেলা শব্দধ্বনি। অনেক কচিকণ্ঠ মিলে গেল এক সুরে। সবাই মিলে গাইলো- আমরা করবো জয়/ আমরা করবো জয়/এক দিন/বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়/আমরা করবো জয় একদিন...। গানের বাণীর ভেতর দিয়েই যেন উচ্চারিত হলো তাদের জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে এই সুরধ্বনির মধ্য দিয়েই সূচনা হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ পোশাক উপহার অনুষ্ঠানের। ছিন্নমূল এই শিশুদের বস্ত্র উপহারের পাশাপাশি দেয়া হয় ঈদের খাবারসামগ্রী এবং সন্ধ্যায় ছিল তাদের জন্য ইফতারের আয়োজন। তাই তো ঈদের আগেই যেন অগ্রিম ঈদ আনন্দের স্বাদ পেল সমাজের পিছিয়ে পড়া এই ছোট্ট সোনামণিরা। ধনী গরিব মিলে মিশে ঈদ হবে একসাথে স্লোগানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমরা সবাই ফাউন্ডেশন। কিছু তরুণের উদ্যোগে গড়া স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি গত দুই বছর ধরে রাজধানীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক বিকাশে কাজ করছে। তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার আলো। রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের পাঠশালায় ভর্তির পাশাপাশি পৃথকভাবে তাদের ক্লাসের পড়াটাকেও বুঝিয়ে দেয় সংগঠনের কর্মীরা। সেই সঙ্গে এই বঞ্চিত শিশুদের মননশীল করে গড়ে তুলতে রয়েছে সংস্কৃতিচর্চার আয়োজন। প্রতি রবিবার দেয়া হয় গানের শিক্ষা। শনি ও সোমবার অনুষ্ঠিত হয় নাচের ক্লাস। সেই চর্চার সুবাদে পয়লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসসহ নানা অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে বিত্তহীন পরিবারের এই সন্তানরা। সুযোগ পেলে তারাও যে হয়ে উঠতে পারে আলোকিত মানুষ, রেখেছে তার উদাহরণ। এছাড়াও এই অনগ্রসর শিশুদের জীবনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি তাদের নিয়ে বিভিন্ন সময় শিক্ষা সফরের আয়োজন করে সংগঠনটি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এই অগ্রিম ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরেণ্য নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, নারী উদ্যোক্তা ও আমরা সবাই ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক হেলেনা জাহাঙ্গীর। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহ্্বুবুর রহমান লিপটন। আর ছোট্ট বন্ধুদের মাঝে প্রাণের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে অনুষ্ঠানে এসে হাজির হন জাতীয় দলের ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ। শিশুদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনকণ্ঠের নগর সম্পাদক কাওসার রহমান, সমাজকর্মী ও জন্টা ক্লাবের সভাপতি হোসনে আরা ইদ্রিস, ঝংকার ললিতকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ ফাতেমা কাশেম, প্রকৌশলী শাকিল খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন অপু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে লায়লা হাসান বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এমন একটি আয়োজন মুগ্ধ করেছে আমাকে। এসব উপহারসামগ্রীর মাধ্যমে এই শিশুরা যদি আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদ্্যাপন করতে পারে সেই ভাললাগার রেশ বয়ে যাবে আমাদের হৃদয়ে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে অবহেলিত এসব শিশুর মনে সঞ্চারিত হবে অনুপ্রেরণা। একদিন তারাও হবে বড় কোন মানুষÑএই বিশ্বাস জেগে উঠবে তাদের প্রাণে। অন্য বক্তারা বলেন, সঠিক পরিচর্যা পেলে এই শিশুরাও একদিন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিলে সেটাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে জাতিকে। ধনী পরিবারের বাইরে থেকেও বিত্তহীন শিশুরা আলোকিত হয়ে ভূমিকা রাখবে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে। তবে শুধু রাজধানীর মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে ঢাকার বাইরেও ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করতে হবে। আর বিত্তবানরা একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই এ ধরনের উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখবে। সংস্কৃতি বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন ॥ শুক্রবার থেকে আরমেনিয়ার রাজধানী ইরেভানে শুরু হলো চার দিনব্যাপী সংস্কৃতি বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ‘সাংস্কৃতিক নীতি, সংস্কৃতির জন্য নীতি : ২০১৫ পরবর্তী সময়ের জন্য টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির ভূমিকা’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী ১৩ জুলাই ‘সংস্কৃতির ভবিষ্যত ও ভবিষ্যতের সংষ্কৃতি’ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র। সূত্র জানায়, ইউনেস্কোর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আরমেনিয়ার স্থানীয় ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সহযোগিতায় আরমেনিয়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস প্রতিরোধ, সাংস্কৃতিক সম্পত্তি সংরক্ষণের সমস্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাদৃশ্য সন্ধান ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র গড়ে তোলাও উল্লিখিত সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ আরমেনিয়া, মালদোভা, কাতার, পোল্যান্ড, জর্জিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, বুলগেরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, তাজিকিস্তান, রোমানিয়া, রাশিয়া ও কাজাখস্তানের সংস্কৃতিমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া রয়েছেন গবেষকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ। যাত্রাশিল্পের জাতীয় সম্মেলন আজ ॥ আজ শনিবার যাত্রামালিক-শিল্পী ও সংগঠকদের অংশগ্রহণে জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। যাত্রাশিল্পের বিভিন্ন সমস্যা-সংকট নিরসন এবং এই শিল্পকে জাতীয় পার্যায়ে উত্তরণের লক্ষ্যে ‘যাত্রাশিল্পের জন্যে চাই এক নির্মল সকাল’ সেøাগানে বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও থিয়েটার হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। বিশিষ্ট যাত্রাব্যক্তিত্ব সুলতান সেলিমের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য রাখবেন যাত্রানট মিলন কান্তি দে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সর্বস্তরের যাত্রাদলের মালিক, শিল্পী, সংগঠক ও শুভাকাক্সক্ষীদের উপস্থিতে জাতীয় এ সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে আগামী দিনে সুষ্ঠু যাত্রাশিল্পচর্চার প্রয়াসে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
×