ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পায়রা বন্দরের কাছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জুলাই ২০১৫

পায়রা বন্দরের কাছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ গ্যাস সঙ্কট সমাধানে আরও একটি এলএনজি টর্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার আগ্রহী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। প্রকল্পটি জ্বালানি বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হবে। এ টার্মিনালটি দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হবে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে বিদ্যুত বিভাগের একটি এবং জ্বালানি বিভাগের আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। এটা হবে দেশের তৃতীয় এলএনজি টামিনাল। আগের দুটি টামিনাল সরকারী উদ্যোগে নির্মাণ করা হলেও তৃতীয় এ টার্মিনালটি হবে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের। গ্যাসের বর্তমান অবস্থা বলছে ২০১৭ সালের পর থেকে গ্যাসের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। তখন দেশের গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এলএনজির কোন বিকল্প থাকবে না। এজন্য সরকার বিভিন্ন স্থানে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার ওপর জোর দিচ্ছে। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলা করার উদ্যোগ এখন থেকেই নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে জ্বালানি সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করবে। আমরা এখনও আমদের সমুদ্রে অনুসন্ধান শুরু করতে পারিনি। এছাড়া স্থলভাগে বড় কোন গ্যাস আধারও পাওয়া যায়নি। সবকিছু মিলিয়ে জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে আগ্রহী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। টার্মিনালটি বেসরকারী উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরকে ঘিরে ওই এলাকার শিল্প বিকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ অংশ এখনও শিল্প-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পটুয়াখালীতে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। চীনা একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এ এলাকায় নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে দেশের খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলের শিল্প বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এলএনজি টার্মিনাল হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। অন্যদিকে জ্বালানি বিভাগ ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার টার্ম শিট স্বাক্ষর হয়েছে। এবছরই ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য (এফএসআরইউ) জন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের মধ্যে টার্ম শিট স্বাক্ষরিত হয়। বছরের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত চুক্তি হবে কোম্পানিটির সঙ্গে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা জরিপ করে পেট্রোবাংলার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কোম্পানিটি। চূড়ান্ত চুক্তির পর টার্মিনালটি নির্মাণে ১৬ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যদিয়ে আমদানি করা গ্যাস ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হলো। এখন প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন-শিল্প এবং অন্য খাতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে মহেশখালিতে। চুক্তির পর এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের ডিরেক্টর প্রজেক্ট শ্যাম্পু সুভেসারী জনকণ্ঠকে বলেন, চুক্তি পরবর্তী নয় মাস তারা সমীক্ষা এবং নক্সা প্রণয়ন করবে। পরবর্তী ২৫ মাসে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। মোট ২৫ মাসের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় তারা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে টার্মিনালটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। পেট্রোবাংলা জানায়, চুক্তি পরবর্তী নয় মাস তারা সমীক্ষা এবং নক্সা প্রণয়ন করবে। পরবর্তী ১৬ মাসে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। মোট ২৫ মাসের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় তারা। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে এ টার্মিনালটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম রয়েছে সাত ডলারের মতো। এর বাইরে বিদ্যুত বিভাগ আরও একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পাওয়ারসেল এ টামিনাল নির্মাণ কারার জন্য আগ্রহ পত্র চায়। এ টার্মিনালটি দিয়ে বছরে ৩৫ লাখ টন এলএনজি আমদানি করা যাবে। বিল্ড ওন অপারেট ট্রান্সফার ভিত্তিতে টার্মিনালটি স্থাপনের জন্য আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। আগ্রহপত্র জামা দেয়া ১৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটিকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এগুলো হলোÑ ভারতের সর্ববৃহৎ এলএনজি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পেট্রোনেট এলএনজি, অ্যাংলো-ডাচ সুপার মেজর শেল, চীনা হুয়াংকিউ কনট্রাকটিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বেলজিয়ামের ট্র্যাক্টেবেল ইঞ্জিনিয়ারিং ও জাপানের মিত্সুই। প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদনের অপক্ষোয় রয়েছে।
×