ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃষ্টি জলজট যানজটেও মার্কেট শপিংমল ক্রেতায় ঠাসা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১১ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টি জলজট যানজটেও মার্কেট শপিংমল ক্রেতায় ঠাসা

রহিম শেখ ॥ সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি। বেলা বাড়তেই মুষলধারায় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির পানিতে রাজধানীর পথ-ঘাট তলিয়ে ছিল আধাবেলা। কোথাও কোথাও পানি জমে হাঁটু সমান। অন্য সময় হলে এমন দিনে ঘর ছেড়ে বের হওয়ার কথা ভাবতেন না অনেকেই। কিন্তু ক’দিন বাদেই যে ঈদ। তাই বৃষ্টি মাথায় করেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটায় বেরিয়েছেন নগরবাসী। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে, এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ছুটে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা। মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে বৃষ্টিতে আধাবেলা অভিমান করেছিল নগরীর ফুটপাথ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা ও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কেনাকাটায় আসা মানুষের ভিড় মার্কেট ছাড়িয়ে রাজপথে গিয়ে ঠেকে। যেখানে ভিড়, সেখানেই ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা। শুক্রবার ছুটির দিনে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কে পর্যন্ত ছিল প্রচ- যানজট। আর এই ভোগান্তি নিয়েই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে দিনভর ছুটেছেন নগরীর বাসিন্দারা। গত দু’দিন ধরে প্রায় সারাদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। সূর্যের দেখা মেলেনি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শুক্রবার সকালটা কাটলেও বেলা বাড়তেই আবার ধুম বৃষ্টি। আগের দিন থেকে শুরু করে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজধানীর অন্যান্য স্থানের মতো মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর ও আশপাশের এলাকার বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানের সামনে হাঁটুসমান পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গাউসিয়া মার্কেটের সামনের সড়কে পানি ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের নিদারুণ কষ্টে পড়তে হয়েছে। সঙ্গে ছিল অসহনীয় যানজট। শত ঝামেলা এড়িয়ে উৎসবপ্রিয় মানুষ শুক্রবার ছুটে গিয়েছিলেন বিপণিবিতানগুলোতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মার্কেট থেকে মার্কেট ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। পছন্দমতো কেনাকাটা করেছেন। এই বৃষ্টির মধ্যেও বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানে লোক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। আগের তুলনায় শুক্রবার জমজমাট বিক্রি হয়েছে। এদিকে শপিংমল, বিপণিবিতান, রাস্তা-ফুটপাথজুড়ে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠায় নগরীতে ছুটির দিনেও ছিল অতিমাত্রায় যানজট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, গুলিস্তান, মৌচাক মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানের বিপণিবিতানের সামনে যানজট ছিল অসহনীয়। নগরীর প্রধান সড়কগুলোর বাইরে অলিগলিতেও দেখা গেছে যানবাহনের লম্বা লাইন। রিক্সা, প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা স্থির হয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এদিকে মার্কেটগুলোর সামনে যানজট মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের। অনেকে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসায় চাপ পড়ছে নিয়মিত পরিবহন ব্যবস্থায়। মার্কেটগুলোতে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেকে রাস্তায়ই গাড়ি পার্ক করছেন। এতেও সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি ও থ্রি পিস থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শর্ট শার্ট ও জিন্স প্যান্টের দোকানে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ক্রেতারা শুধু পোশাকই নয়, দল বেঁধে ছুটছেন অন্য দোকানেও। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পরার জন্য চুড়ি, ইমিটেশন, ব্রেসলেট, পারফিউম, লিপস্টিক-নেল পলিশসহ নানা কসমেটিকস, স্বর্ণালঙ্কার, হাত ঘড়ি, গিফট কার্ড থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালীর সব কিছুই কিনছেন। এদিন কেনাকাটায় পিছিয়ে ছিল না শিশুরাও। শিশুদের পোশাক, খেলনাসামগ্রী ও জুতোর দোকানেও ছিল ঠাঁসা ভিড়। বাদ নেই ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইলের দোকানও। পাল্লা দিয়ে চলছে বিকিকিনিও। শুধু রাজধানী নয়, এর বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন কেনাকাটা করতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকার কারণে রোজার শুরু থেকেই ব্যবসা জমে উঠতে শুরু করেছে। যারা ঢাকায় ঈদ করবেন এবং যারা গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করবেন, তারা সবাই এখন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাদের মার্কেটে আসতে হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার শিমুল আহসান সদ্য কেনা পোশাকের কয়েকটি ব্যাগ হাতে নিয়ে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছিলেন গাউসিয়া মার্কেটের সামনে। তিনি বলেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে অনেক সকালেই মার্কেটে এসেছি। কেটাকাটা শেষ করতেই মুষলধারে বৃষ্টি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও একটি সিএনজি পাইনি। বেশি দেরি করলে বাড়ি যেতে পরিবহনের সমস্যায় পড়তে হবে। মৌচাক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, টুইন টাওয়ার শপিংমল, হোসাফ টাওয়ার শপিংমল, মগবাজারের বিশাল সেন্টার, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, ফরচুন শপিংমলসহ এলাকার প্রায় সব বিপণিবিতানের সামনে বৃষ্টির পানি জমে ছিল আধাবেলা। সড়কের নোংরা পানি মাড়িয়ে অনেকেই এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। বিক্রেতারা জানান, সকাল থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হলেও মূলত বিকেলের দিকে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়তে থাকে আরও বেশি। বৃষ্টির মধ্যেও বিদেশী পোশাকের অন্যতম বিপণনস্থল পলওয়েল সুপার মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল। যদিও মার্কেটের সামনে ছিল জলাবদ্ধতা। এর মধ্যেও তরুণ-তরুণীরা ছুটে গিয়েছেন সর্বশেষ ডিজাইনের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য। আরাফাত রাসেল নামে এক ক্রেতা বললেন, অফিস ছুটির কারণে কেনাকাটা করতে অসুবিধা হয়। তাই আগেভাগেই পলওয়েল মার্কেটে এলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তেমন একটা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারলাম না। নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনী চক মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজেই অনেকে ক্রেতা কেনাকাটা করতে এসেছেন। আবার অনেকে কেনাকাটা করে যানবাহন সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের ১২ সদস্যের সবাইকে নিয়ে নিউ মার্কেটে এসেছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আরিফুল হক। তিনি জানান, দুই-তিন রোজা থেকেই মার্কেটে-মার্কেটে ঘুরছি। কিন্তু ঈদের পোশাক-আশাক এখনও অনেক কিছুই কেনা হয়নি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। মার্কেটের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ। বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় একটি বেসরকারী কোম্পানির কর্মকর্তা নাজিম মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন অফিস সেরে ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করতে আসা হয়নি। এবার ঈদ ঢাকাতেই কাটাচ্ছি। তাই শেষ সময়ে ছুটির দিনে মার্কেটে আসলাম। বৃষ্টি ও ক্রেতাদের ভিড়ে কেনাকাটা করাই দায় বলে তিনি জানান। আজিজ সুপার মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তাহসান। তিনি বলেন, মা বাবার জন্য কেনাকাটা করে ফেলেছি। এখন নিজের ও ছোট ভাইয়ের পাঞ্জাবি কিনতে এলাম। এদিকে শুধু ফুটপাথের ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যসব স্থান দখল ছিল তরুণী এবং গৃহবধূ ক্রেতাদের দখলে। তারা পোশাক কিনতে এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ছুটেছেন। মেয়েরা ছুটেছেন ‘কিরণমালা’ ও ‘সারার’ নামের পোশাক কিনতে। এসব পোশাক তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে বেনারসি কিংবা জামদানি শাড়ির সুনাম থাকলেও শুক্রবার ঈদের বাজারে ক্রেতারা কিনেছেন বাহারি ডিজাইন ও নামের কাতান শাড়ি। এছাড়া অন্যমেলা, আড়ং, কে-ক্র্যাফট, রঙ, নিত্যউপহার, নাবিলা, অঞ্জন’স, বিবিআনা, দেশাল, নিপুণ কুমুদিনী, নগরদোলা, বাংলার মেলা, লুবনানসহ বিভিন্ন দেশী বুটিক হাউসে ফ্যাশন সচেতন ক্রেতাদের ভিড় ছিল ঠাঁই নাই ঠাঁই অবস্থা। তবে ক্রেতাদের বরাবরের মতো অভিযোগ বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। শুক্রবার ভিড়ের কারণে কেনাকাটা করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে বলে একাধিক ক্রেতা জানান। গাউসিয়া মার্কেটে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথিলার সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্রেতাদের বেশি ভিড়ের মধ্যে দামাদামি করা যায় না। এই সুযোগে বিক্রেতারা বেশি দাম নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, একই পোশাকের হরেক দাম। ফারিয়া নামের আরেক ক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, দোকানিরা ইচ্ছামতো হাঁকাচ্ছে পোশাকের দাম। স্থান ও পরিবেশের কারণে একই পোশাক কোন কোন মার্কেটে দ্বিগুণ ও তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা এহসানুল করিমের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর পলওয়েল মার্কেটের পণ্য গুলশান ও বসুন্ধরায় গিয়ে বিক্রি হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে। আবার বঙ্গবাজার থেকে একই পোশাক বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাথে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন দামে। এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় জুতোর দোকানে বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জহুরা। তিনি জানান, গতবারের তুলনায় বাচ্চাদের জুতোর দাম অনেক বেশি। বড়দের জুতোর দামও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। নিউমার্কেটে বেবি নামের এক ক্রেতা বলেন, শুধূ পোশাকই নয়, কসমেটিকস ও ইমিটেশন গহনার দাম আগের তুলনায় বেশি নিচ্ছেন ক্রেতারা। ফুটপাথের বেচাকেনা ॥ দিনের অর্ধেকটা সময় বৃষ্টির কারণে রাজধানীর সব ফুটপাথে বেচাকেনা কার্যত একেবারেই কমে যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, মৎস্য ভবন রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাথে ক্রেতার ভিড় বাড়তে থাকে। বেচাকেনাও জমজমাট হয়ে উঠে। শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাথে সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে ৫শ’ টাকা দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। প্যান্ট ২শ’ থেকে ৫শ’, জুতো ৩শ’ থেকে ৭শ’, স্যান্ডেল ১৫০-৩০০ এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৭শ’ টাকায়। এছাড়া শাড়ি, লুঙ্গি, তরুণীদের থ্রি পিস, জুতো ও কসমেটিক্স ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
×