ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দলকে বেশি সময় দিতেই সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রীর ভারমুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১১ জুলাই ২০১৫

দলকে বেশি সময় দিতেই সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রীর ভারমুক্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘দফতরবিহীন’ করা হলেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাঁদের মতে, দলে অধিক সময় দিতেই সৈয়দ আশরাফের ভার লাঘব করা হয়েছে। আর সৈয়দ আশরাফের মতো রাজনীতিবিদের দফতরের প্রয়োজন হয় না। তিনি একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগামীতে যাতে দলকে আরও বেশি সময় দিতে পারেন, সেজন্যই সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরানো হতে পারে। এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি কোনভাবেই ক্ষুণœ হবে না। আর যারা সরকার গেল গেল বলে চিৎকার করছেন, তারা বোকার স্বর্গেই বসবাস করছেন। শুধু দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাই নন, মাঠের নেতারাও মনে করেন, সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে কথা বলেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক যদি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সরাতেন না। আর সৈয়দ আশরাফ তো কখনই মন্ত্রিত্ব এনজয় করতেন না। শুক্রবার পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারাও এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতারাও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দুঃসময়ের পরীক্ষিত, বিশ্বস্ত, বিনয়ী ও নির্লোভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী উল্লেখ করে বলেছেন, বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিত্বের বেড়াজালে আটক না রেখে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা যায়, সেটিই হবে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত। সহযোগী সংগঠনের তাঁরাও মনে করেন, প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজে ব্যবহারের উদ্দেশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতেই সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেছেন। এদিকে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং কিশোরগঞ্জের নেতাকর্মীরা বেইলি রোডের বাসভবনে গিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। দলকে সময় দিতেই সৈয়দ আশরাফ দফতরবিহীন ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যাতে দলকে আরও বেশি সময় দিতে পারেন, সেজন্যই এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরানো হতে পারে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বাবুবাজারে ব্রিজ পরিদর্শন করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কখনো বেঠিক হয়নি। আর সরকারের ভাল-খারাপ আপনারা (সাংবাদিক) ও জনগণ এই কয়েক বছর দেখেছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশেই সরকার প্রধান থাকেন, আমাদের দেশেও আছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন মনে করলে কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন, আবার প্রয়োজন না করলে সরিয়েও নেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, কাকে কোন পদে রাখা না রাখা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছু নেই। হয়ত তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেছেন যে, সৈয়দ আশরাফ অতিরিক্ত ভার বহন করছেন। দলে আরও ভাল করে বেশি সময় দেয়ার জন্য এটা (দফতরবিহীন) করা হতে পারে। সাধারণ সম্পাদককে দফতরবিহীন মন্ত্রী করায় দলের কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। তাঁর (সৈয়দ আশরাফ) মতো রাজনীতিবিদদের দফতরের প্রয়োজন হয় না। সৈয়দ আশরাফের পোর্টফলিও প্রয়োজন পড়ে না ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে মন্ত্রিত্বের পোর্টফোলিও বড় কোন ব্যাপার নয়। তিনি একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আপাদমস্তক এই রাজনীতিক যেখানেই থাকবেন সেখানেই পারিবারিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় চার নেতার একজনের সন্তান হিসেবে নিজের মেধা ও মননে একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখবেন। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে চলমান রাজনীতি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুরঞ্জিত আরও বলেন, দেশ, জাতি, দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। তাঁর মতো সৎ, বিনয়ী রাজনীতিবিদের কাছে দফতর বড় বিষয় নয়। মন্ত্রিসভায় কে অবস্থান করবেন, কে থাকবেন না থাকবেন- তা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এ নিয়ে সরকার গেল বলে চিৎকার করারও কিছু নেই। প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন সচিব মুক্তিযোদ্ধাকে চড় মেরেছেন। ওই মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও হƒদয়বিদারক স্পর্শকাতর ঘটনা। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একজন সচিবের বিচার কি যুগ্ম সচিব করতে পারেন? একজন জেলা প্রশাসকের বিচার কী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক করতে পারেন? ওই তদন্ত কমিটিতে সরকারের উচ্চ মহলের লোক থাকা প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। খালেদা জিয়ার সৌদি আরবে ওমারহ পালন বাতিল প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ইংল্যান্ডে তারেক রহমানকে বলে দেয়া হয়েছে, সৌদি আরবে ওমারহ পালন করতে যেতে পারবেন কিন্তু লন্ডনে আর ফিরে আসতে পারবেন না। আর খালেদা জিয়াকেও সৌদি আরব আগের মতো কদর করছে না। বেশি বহর নিয়ে ওমরাহ পালনের দাওয়াতও দিচ্ছেন না। হয়তো এ কারণেই উনি (খালেদা জিয়া) এবার ওমরাহ করতে যাননি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি খন্দকার ড. এমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নারায়ণ দেবনাথ, শেখ ইকবাল খোকন, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ।
×