ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির কড়া সমালোচনা অমর্ত্য সেনের

অভুক্ত, অপুষ্ট ও অশিক্ষিতদের এড়িয়ে উন্নয়ন অসম্ভব

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১০ জুলাই ২০১৫

অভুক্ত, অপুষ্ট ও অশিক্ষিতদের এড়িয়ে উন্নয়ন অসম্ভব

শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই সরব হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মঙ্গলবার ইন্ডিয়া টুডে টিভি চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মোদিকে কার্যত তুলোধোনা করেছেন বিশ্ববরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে তাঁর অপসারণ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সোজাসাপটা বলেছেন, তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে সরিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে তাঁর অস্বস্তি তিনি কখনও গোপন করেননি। এমনকি, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেও তিনি বলেছিলেন, মোদি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হন তা তিনি চান না। নিজের সেই অবস্থান থেকে তিনি যে এতটুকুও সরে যাননি এ দিন সে কথা আরও স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন অমর্ত্য। মোদির স্বপ্নের ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়ার প্রচারে জল ঢেলে তিনি বলেন, ‘অভুক্ত, অপুষ্ট এবং অশিক্ষিত দেশবাসীকে নিয়ে বিশ্বের সামনে নিজেকে শিল্পায়নের বৃহৎ শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে ভারত। কিন্তু ভারতবর্ষের মূল সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে তা হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’ আগামী আগস্ট মাসে প্রকাশিত হতে চলা নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকসের জন্য ৪০০০ শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখেছেন অমর্ত্য। বিষয় : নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর অপসারণ। কিন্তু সেই প্রবন্ধ প্রকাশের আগেই শিক্ষায় মোদি সরকারের হস্তক্ষেপের নানা উদাহরণ তুলে ধরে তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মোদি সরকারের প্রথম ১৩ মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে যে পরিমাণ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে তা ছাপিয়ে গেছে অতীতের সমস্ত নজির। উদাহরণ হিসেবে নালন্দার পাশাপাশি টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, একের পর এক আইআইটি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস এবং আইআইএম-এর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন অমর্ত্য। তাঁর দাবি, যেভাবে বিজেপি তাদের হিন্দুত্বের কর্মসূচী এই ধরনের মেধাচর্চা কেন্দ্রগুলোর উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। নালন্দায় তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগও এনেছে বিজেপি। সে কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে অমর্ত্য বলেন, তাঁকে সরিয়ে দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের লাগাতার অসহযোগিতার পাশাপাশি এই ধরনের অভিযোগও আনা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর সেøাগানেও যে তাঁর এতটুকু আস্থা নেই তা-ও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের অধিকার সুরক্ষিত না করে প্রকৃত উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। মোদির ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনাতেও যে তিনি বিশ্বাস করেন না তা-ও খোলাখুলিই বলেছেন তিনি। অমর্ত্যর কথায়, ঘর ওয়াপসি, চার্চে হামলা বা উগ্র হিন্দুত্বের প্রচার প্রসঙ্গে বড় বেশি দিন ধরেই নীরব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছ থেকে কথার চেয়ে কাজের প্রত্যাশাই বেশি ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।’ ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কথা মনে করিয়ে দিয়ে অমর্ত্য বলেন, সেই কলঙ্কের ছাপ মুছে ফেলা মোদির পক্ষে সম্ভব নয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুজরাট মডেলের কথা ফলাও করে প্রচার করে থাকেন মোদি ও তাঁর দল। কিন্তু অমর্ত্য মনে করিয়ে দিয়েছেন অপুষ্টি বা অন্যান্য মানবিক সূচকে বিহারের মতো রাজ্য থেকেও পিছিয়ে রয়েছে গুজরাট। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুজরাটের থেকেও কেরালা মডেল অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক বলেও মনে করেন তিনি। স্বচ্ছ ভারত বা শৌচালয় নির্মাণের মতো মোদির বহুল প্রচারিত প্রকল্পের সঙ্গেও বাস্তবের মিল নেই বলে মনে করেন অমর্ত্য। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘শৌচালয় বানানো নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কিন্তু কটা শৌচালয় বানানো হয়েছে।’
×