ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার সম্মান

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১০ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধার সম্মান

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও এক মুক্তিযোদ্ধাকে যদি সেই স্বাধীন দেশের মাটিতেই অমর্যাদার কারণে আত্মহত্যা করতে হয়, এর চেয়ে গ্লানিকর আর কী হতে পারে! ব্যাপারটিকে শুধু দুঃখজনক বললে কম বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জারও বটে। কোন মুক্তিযোদ্ধার এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয় তা মেনে নেয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে সহযোগী একটি দৈনিকে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাজে তিনি কয়েকদিন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। মৃত্যুর আগে লেখা এক চিরকুটে সরকারী এক উর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার কথা উল্লেখ করে গেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ভাবতে অবাক লাগে স্বাধীনতার এত বছর পরে এখনও সমাজে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মান সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামী, বীর যোদ্ধা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াকু নেতাকর্মী এবং যে কোন জাতীয় সঙ্কটে পথপ্রদর্শকÑ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তারা পরিগণিত হন বিশেষ ও বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনও দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালিয়ে, ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় নিগ্রহের শিকার হয়েছেন এমন দৃষ্টান্তও আছে অনেক। ঢাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে এক শিবির নেতার মুক্তিযোদ্ধাকে ‘লাথি মারা’র ঘটনাটি অনেকেরই মনে ক্ষতচিহ্ন হয়ে বিরাজ করছে। এ বাস্তবতার জন্য ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনই মূলত দায়ী। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তার করে তাদের থাবা। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার যাত্রা শুরু। অবশ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি অধিষ্ঠিত ছিল খুব কম সময়। এখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ক্ষমতায়। জনসাধারণের প্রতি দেয়া অঙ্গীকার পূরণে চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম। মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক-আর্থিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে সরকার হাতে নিয়েছে কিছু কল্যাণকর পদক্ষেপ। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। ঠিক এমন মুহূর্তে এক মুক্তিযোদ্ধার আত্মহনন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সময়ের বিবর্তনে মুক্তিযোদ্ধারা এখন জ্যেষ্ঠ নাগরিক। সে হিসেবেও তিনি বাড়তি সম্মানের দাবিদার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন-পালন করে নাÑ এমন সরকার একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার দরুন নতুন প্রজন্মের অনেকেই জেনেছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস। এ প্রেক্ষাপটে সবার আগে প্রয়োজন সঠিক ইতিহাসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় ভূমিকার কথা তুলে ধরা। সামাজিক আন্দোলনও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার বীর সন্তানদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্যেরই যে প্রকাশ ঘটবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
×