ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘এই দেশ ছেড়ে ওই দেশে গিয়ে পরিবার নিয়ে হাবুডুবু খেতে চাই না’

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১০ জুলাই ২০১৫

‘এই দেশ ছেড়ে ওই দেশে গিয়ে পরিবার নিয়ে হাবুডুবু খেতে চাই না’

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কী কী সুযোগ-সুবিধা ভারত সরকার দেবে, তা আগে জানতে চাই। কিছু না জেনে, না শুনে হুট করে ভারতের নাগরিক হতে নিবন্ধন করব না। এই দেশ (বাংলাদেশ) ছেড়ে ওই দেশে (ভারত) গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাবুডুবু খাব কেন। তার আগে সবকিছু জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ভারতীয় ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ী ছিটমহলের চার হিন্দু পরিবার বৃহস্পতিবার জনগণনায় অংশ নিতে এসে এমন প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। ভারত সরকারের সুযোগ-সুবিধার কথা তাঁদের জানান সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা সেটি শুনে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান। এই পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে মৃত অতুল চন্দ্র রায়ের তিন ছেলে ভরত চন্দ্র রায় (৪৭) ও তাঁর স্ত্রী গীতারানীসহ তিন সন্তান, রঞ্জিত কুমার রায় (৪০) ও তাঁর স্ত্রী জয়ীতন রানীসহ দুই সন্তান, সনাতন রায় (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মিনতি রানীসহ এক সন্তান এবং মৃত বীরেন চন্দ্র রায়ের ছেলে অতুল চন্দ্র রায় (৪০) ও তাঁর স্ত্রী কবিতা রানী রায়সহ দুই সন্তান। জনগণনার ক্যাম্প থেকে ফিরে যাওয়ার সময় এই চার পরিবার সাংবাদিকদের বলেন, পরিবারের সকলে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধন করব। বাংলাদেশে থাকব, না ভারতে চলে যাব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তবে ভরত চন্দ্র রায় ও সনাতন রায় বলেন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারি। আমরা শেখ মুজিবের দেশের নাগরিক হয়ে থাকব। তবে তাদের অপর ভাই রঞ্জিত কুমার রায় বলেন, আমার ভারতের নাগরিক হওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু এরপরেও চিন্তার বিষয় আছে। এদিকে অপর পরিবারটির অতুল চন্দ্র রায় বলেন, কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। বৃহস্পতিবার ডিমলার চারটি ছিটমহলের মধ্যে একটি ছিটমহলের জনগণনা সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। ৩০ নম্বর বড়খানকী গীতালদহ ছিটমহলে ৮ পরিবারের বসবাস। তাঁরা কেউ ওপারে (ভারতে) যেতে চাননি। সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। এ ছাড়া ২৯ নম্বর বড়খানকী খারিজা গীতালদহ ছিটমহলে এদিন নিবন্ধন করেন ১৩ পরিবার ও ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলের সাত পরিবার। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হতে চেয়ে ফরম পূরণ করেন। নীলফামারীর ছিটমহলে এখন পর্যন্ত কেউ ভারতীয় নাগরিক হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেননি। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপর তিন জেলায় ১৩০ জন ভারতের নাগরিক হতে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জরিপকারীদের সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে ৮৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩৪ ও কুড়িগ্রামে সাতজন। তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একীভূত হতে ভারত যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। এদিকে আগামীকাল ১১ জুলাই সকালে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরনের জনগণনার জরিপ কাজ পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার তার পরিদর্শনের কথা ছিটমহল এলাকার সংশ্লিষ্ট নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামের জেলাপ্রশাসককে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম। লালমনিরহাট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার দু’টি ছিটমহলে বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৭৩ নারী পুরুষ ও শিশু ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে নিবন্ধন করেছে। তাদের নাগরিকত্ব চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে ছবিও তোলা হয়েছে। নাগরিকত্বের নিবন্ধন ফরম পূরণ করে তাঁরা স্বাক্ষর করেছেন। চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা হতে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যৌথ সমীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। এ জরিপ চলবে ১৬ জুলাই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। শুক্র ও শনিবার সরকারী ছুটির দিনেও উভয় দেশের যৌথ সমীক্ষার কাজ চলবে। ভারতে যেতে ইচ্ছুক পরিবারের অনেকের নিকটাত্মীয়রা ভারতে বসবাস করছে। তাই তাঁরা স্বজনদের সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করতে আগ্রহী। এছাড়াও এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতপ্রীতিও কাজ করছে। এদিকে বিএনপি-জামায়াত চক্র সুকৌশলে ছিটমহলে গোপনে হিন্দু পরিবারগুলোকে উৎসাহী করছে ভারত যেতে। পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহলে ৮৫ জন ভারতে যেতে আগ্রহী ॥ শুরুতে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের নাগরিকরা বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দিন যতই যাচ্ছে ততই ভারতে যাওয়ার আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮৫ জনের ভারতে যাওয়ার আবেদন পাওয়া গেছে। তবে পরিবারের সংখ্যা কত তা জানা যায়নি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জনগণনার প্রথমদিন ভারতে যাওয়ার আবেদন করেন ৪০ জন, দ্বিতীয় দিন ২৬ জন এবং তৃতীয় দিন ১৯ জন। এদিকে ২০১১ সালের জনগণনার তালিকার সঙ্গে এখন পর্যন্ত আরও নতুন করে ৮৩৫ জন নতুন করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দল ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে চতুর্থ দিনের মতো গণনার কাজ শেষ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভারতের নাগরিক হতে সাতটি পরিবারের ৩২ নারী-পুরুষ ও শিশু নিবন্ধিত হয়েছে।
×