ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উবাচ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ জুলাই ২০১৫

উবাচ

শেয়ারবাজার পুরো মানুষ করতে আরও ৫ বছর স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারকে ফটকা ব্যবসা বলে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন আমাদের সদা হাস্যোজ্জ্বল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অধিকাংশ সময়ে অপ্রিয় হলেও সত্য কথা বলা তার স্বভাবসিদ্ধ। এবার তিনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, শেয়ারবাজারকে পুরোপুরি মানুষ করতে আরও ৫ বছর সময় লাগবে। গত সোমবার সচিবালয়ে ব্যাংক, বীমা ও পুঁজিবাজার বিষয়ে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১৫-১৭ সালের জন্য প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্র ‘প্রিভেন্টিং মানি লন্ডারিং এ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্সিং অব টেররিজম’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অর্থমন্ত্রী। আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, অর্থ সচিব এম আসলাম আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান, বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফায়েকুজ্জামান প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে কয়েক বছর আগে ফাটকাবাজার ছিল। ফাটকাবাজি চলত। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাজার এতদিনে মানুষ হয়েছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ভূমিকম্প হওয়ার পর এর সংস্কার কাজ শুরু হয়। ফাটকা থেকে শেয়ারবাজারকে মানুষ করতে ৫ বছর সময় লেগেছে। এ বাজারকে পুরোপুরি মানুষ করতে আরও ৫ বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ সংস্কার হয়েছে প্রফেসর সাহেবের হাত ধরে। শেয়ারবাজারে এখন আর কারও একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সংস্কারের ফলে বাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে এসেছে। বীমা খাতের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য আইডিআরএ গঠন করা হয়েছে। এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, খুব শীঘ্রই এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। প্রধানমন্ত্রীকে ছদ্মবেশ ধারণের আহ্বান রওশনের স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের দেয়া বক্তব্য ইতিবাচক আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। বুধবার সংসদ অধিবেশনে একে অপরের উদ্দেশে দেয়া এ বক্তব্য পাল্টাপাল্টি না হলেও সাড়া জাগিয়েছে বেশ। বিরোধীদলীয় নেত্রী কৌশলে প্রধানমন্ত্রীকে কুপোকাত করতে চাইলেও পাল্টা কৌশলের কাছে শতভাগ সফল হতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীকে দেশের সঠিক তথ্য পেতে হলে ছদ্মবেশ ধারণ করে মানুষের কাছে যেতে বলেন বিরোধী নেত্রী। আর প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে পরামর্শ দিলেন স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে একই গাড়িতে চড়ার। সংসদে প্রথমে রওশন এরশাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের লোকজন তাঁকে দেশের মানুষের সঠিক তথ্য দেন না। তাই সঠিক তথ্য পেতে হলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ছদ্মবেশ ধারণ করে মানুষের কাছে যেতে হবে। সংসদে ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে রাজধানীর যানজট, দূষণ, ভূমিকম্প ঝুঁকি, বস্তিবাসীর দুর্ভোগ, খাদ্যে ভেজাল, মাদক ও জনদুর্ভোগের নানা বিষয় তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় নেতা। এরই একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি ছদ্মবেশে সঠিক খোঁজখবর নিন। আপনার পাশে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সঠিক কথা বলেন না। আপনি রাতে বের হন, প্রয়োজনে বোরকা পরে বের হন। অনুরোধ করবÑ মানুষ কীভাবে আছে তা দেখেন। রওশন এরশাদ বলেন, চলতি সংসদে বিরোধী দল সঠিক ভূমিকা পালন করছে। এর আগে কখনও বাজেট পাস ও ধন্যবাদ আলোচনায় বিরোধী দল উপস্থিত ছিল না। আমরাই গতবার ও এবার বাজেটের পুরো কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলাম। বিরোধী দল হিসেবে আমরাই সঠিক ভূমিকা পালন করেছি। বিরোধীদলীয় নেতার ভাষণের পরই শুরু প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে তাঁর স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে একই গাড়িতে চড়ার আহ্বান জানান। রাজধানীর যানজট নিয়ে কথা বলতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। জানা গেছে, গত ৬ জুলাই যানজটের কারণে বিরোধীদলীয় নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হতে পারেননি। ওইদিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঠিকই যথাসময়ে উপস্থিত ছিলেন। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজটও বেড়েছে এমন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রসঙ্গটি টানেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রওশন এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, এই যে সেদিন আপনি উপস্থিত হতে পারলেন না তার কারণ দুটি আলাদা গাড়ি ব্যবহার। আপনিও যদি এরশাদ সাহেবের গাড়িতে করে একসঙ্গে আসতেন, তাহলে কিন্তু দুজনই পৌঁছাতে পারতেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা উল্লেখ করতে গিয়েই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, গাড়ির ব্যবহার বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে মিটিমিটি হাসতে দেখা যায়। আমি টি টুয়েন্টি খেলছিÑ শিক্ষা সচিব স্টাফ রিপোর্টার ॥ কলেজে ভর্তিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের ভোগান্তির মধ্যে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের এক বক্তব্য কদিন ধরে আলোচনার প্রধান বিষয়। রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভোগান্তির বিষয়ে শিক্ষা সচিব বলেছেন, ‘আমি টি-টুয়েন্টি খেলে ছক্কা মারার চেষ্টা করছি। ছক্কা মারতে গেলে অনেক সময় জিরোতে আউট হয়, রান আউট হয়, সেটা হতেও পারে।’ ভর্র্তি নিয়ে জটিলতার মধ্যে মন্ত্রীর আদেশ সচিবের না মানা, মন্ত্রীর চুপ থাকা, বুয়েটের ব্যর্থতা, প্রতিদিনই নানা কেলেঙ্কারির কারণে ওই সংবাদ সম্মেলনের দিকে নজর ছিল সকলের। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সচিব নজরুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দুদিন আগেই ১২ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের ২৪ লাখ অভিভাবকের ভোগান্তি ও হয়রানির কথা স্বীকার করে শিক্ষা সচিব বলেছিলেন, সমস্ত দায় আমার। আমিই সকল শিক্ষার্থীকে একবারে এভাবে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে সচিব বলে বসলেন, আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে স্পেসিফিকালি টি২০ খেলছি। শুধু টি২০ না, টি২০র লাস্ট ওভার খেলছি। লাস্ট ওভার খেললে লাস্টের দিকে... সঙ্গে পরামর্শ করে। সুতরাং পরামর্শ করে টিম স্পিরিট নিয়ে ডেফিনেটলি কাজ করছি। শিক্ষা সচিব আরও বলেন, ছক্কা মারার চেষ্টা করছি, ছক্কা মারতে গেলে অনেক সময়... আউট হয়, সেটা হতে পারে। ‘আমি টি২০ খেলছি, ছক্কা মারার চেষ্টা করছি’ সচিবের এমন বক্তব্যের পর থেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও পত্রিকা অফিসে ফোন করে কড়া সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। বিজ্ঞান কলেজে বাণিজ্যের তালিকায় নাম ঠুকে দেয়া এক ছাত্রের অভিভাবক টিপু সুলতান বলছিলেন, ১২ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের মা-বাবাকে নিয়ে এভাবে টি২০ খেলার অধিকার সচিব সাহেবকে কে দিয়েছে? ভিকারুননিসায় ভর্তি নিয়ে জটিলতার মুখে পড়া রুমানা আক্তার বলছিলেন, আমাদের নিয়ে টি২০ খেলছেন তাঁরা। এর চেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত আর হতে পারে না। ওনাদের (মন্ত্রী ও সচিব) ভাব দেখলে মনে হয় দু’এক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে সমস্যায় পড়লেও কিছু আসে যায় না। নতুন যুগের জন্য নতুন ব্যাংক ॥ ড. ইউনূস স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাংকের একচেটিয়া প্রভাব কমিয়ে বিকল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ব্রিকস ব্যাংক নিয়ে এবার নিজের মত দিলেন নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। ‘একটি নতুন যুগের জন্য একটি নতুন ব্যাংক’ শিরোনামে ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুতে তিনি লিখেছেন, নতুন এ উন্নয়ন ব্যাংক বিশ্বব্যাংকের অনুরূপ হয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নেট কার্বন নির্গমন নির্মূলের বিষয়টি ফোকাস করা উচিত এ ব্যাংকের। ড. ইউনূস তাঁর লেখায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তাঁর ভাবনাগুলো। ব্রিকস ব্যাংক (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) বিশ্বের নবীনতম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক। ড. ইউনূস বলছেন, নতুন উন্নয়ন ব্যাংক সম্পূর্ণ নতুন উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে করা উচিত। বিশ্বব্যাপী এখন প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য ‘তিন কোর’ উদ্দেশ্য উত্থাপন করা। এটি হচ্ছেÑ শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নির্গমন। প্রাথমিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ২০৫০ সালের মধ্যে তিনটি শূন্য অর্জন করা। প্রতিবছর এই উদ্দেশ্যের বিষয় ও অর্জন নিয়ে ব্রিকস ‘অগ্রগতির রিপোর্ট’ প্রকাশ করতে পারে বলেও মত ইউনূসের। নতুন উন্নয়ন ব্যাংক চারটি মৌলিক কৌশল ব্যবহার করে এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে উল্লেখ করে ইউনূস বলেছেন, প্রথম কৌশল সৃজনশীল শক্তি এবং নতুন প্রজন্মের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন। ব্রিকস যুব শক্তিকে সচল করতে পারে, এটি হলে। লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষের সমস্যার সমাধান করতে প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দেয়া। প্রযুক্তি আজ টাকা-প্রস্তুতকারকদের এবং যুদ্ধ-প্রস্তুতকারকদের কমান্ড বা তার কম বয়সী। সমাজিক দায়িত্বসম্পন্ন ড্রাইভারকেও প্রযুক্তির ভার গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত, সামাজিক ব্যবসার নির্মাণ দীর্ঘকালস্থায়ী এবং জটিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা সচল করা। প্রচলিত ব্যবসার সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন যেমন, রাষ্ট্র ও বেসরকারী দাতব্য সংস্থা অস্থিতিশীল এবং অদক্ষ হতে পারে। তবে সামাজিক ব্যবসা টেকসই দক্ষ এবং হস্তান্তরযোগ্য। বেকারত্ব সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে শূন্যে আনা যেতে পারে। বেকারত্ব মানুষের একটি ভ্রান্ত এবং তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা পণ্য বলে মনে করেন ইউনূস। নতুন ব্যাংক স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ হিসেবে দেশ-স্তর সামাজিক ব্যবসা তহবিল তৈরি করতে পারে। ব্রিকস পরিকাঠামো প্রকল্পের অনেক ধরনের কার্যভার গ্রহণ করতে পারে। অবশেষে, মানবাধিকার ও সুশাসন নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
×