ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সোনার বাংলা ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৯ জুলাই ২০১৫

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সোনার বাংলা ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ‘কই আর যাব। যেখানে আছি, সেখানেই থেকে যাব। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সোনার বাংলা ছেড়ে আমি, আমার ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিনাতনিরা কোথাও যাব না। সোনার বাংলার মাটি, সোনার চেয়ে বড়ই খাঁটি। এই খাঁটির দেশেই বসবাস করব।’ জনগণনার তৃতীয় দিন বুধবার কথাগুলো বলেন ২৯ নম্বর বড়খানকি গীতালদহ ছিটমহলের বাসিন্দা মৃত হামিদুর রহমানের বিধবা স্ত্রী মনিজা বেওয়া (৭০)। এ সময় মনিজা বেওয়ার সঙ্গে থাকা পুত্র মিজানুর রহমান (৪২) ও তার স্ত্রী মাজেদা বেগম (৩৫), মমিনুর রহমান (৩৫), স্ত্রী লাইলি বেগম (২৮)। তারাও বলেন, মা মনিজা বেওয়ার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। তাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বেছে নেয়ার একই সিদ্ধান্ত জনগণনার ফর্মে লিখিয়েছি। তারা সকলেই জন্ম নিয়েছে এই বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ছিটমহলেই। তাই নাড়িপোতা স্থান ত্যাগ করবেন না তারা। একই ছিটমহলের জনগণনায় নিবন্ধন করতে আসা মৃত আফিজার রহমানের ছেলে তাইফুর রহমান (৩৪) বলেন, ছিটমহলের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়াটার আনন্দটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি। আর ৬৮ বছরের ছিটমহলের জন্মের কথা বলতেই পারব না। বৃদ্ধা মা তমিজন বেওয়া মাঝে মাঝে অনেক স্মৃতিচারণ করেন। মা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। তাই মায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জনগণনায় বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছি আমরা। তাইফুর রহমানের স্ত্রী মিনি আক্তার বলেন, ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় কোনদিন কোন নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ হয়নি। এবার ভোট দেয়ার সুযোগ পাব। তাইফুর রহমানের মা বৃদ্ধা বিধবা তমিজন বেওয়া বললেন জীবনের শেষ চাওয়াটা পেলাম এবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। এদিন জনগণনার ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ভারতীয় ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় চারটি ছিটমহলের মধ্যে বুধবার দুটিতে জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৪টি পরিবার নিবন্ধন করেছেন। তারা কেউ ভারতীয় নাগরিক হতে চাননি। লালমনিরহাটের অভ্যন্তরে থাকা ৫৯ ছিটমহলে বুধবার তৃতীয় দিনের মতো যৌথ খানা জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে থাকা ছিটমহলগুলোর ১৭টিতে কোন জনবসতি নেই বলে বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল যৌথ জরিপ দল নিশ্চিত হয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রামের ১২ ছিটমহলের অধিকাংশ পরিবার বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্য নিবন্ধন করলেও মাত্র দুটি পরিবার ভারতে যেতে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এরা হলেন ভুরুঙ্গামারীর গাওচুলকা-১ ছিটমহলের মহির উদ্দিন ও আলতাফের পরিবার। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের কুচবিহারে ৪৭ ও জলপাইগুড়ির চারটিসহ ৫১ ছিটমহলে জরিপের কাজে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ২৫টি জরিপকারী প্রতিনিধি দল। প্রতি দলে তিনজন করে বাংলাদেশী ও তিনজন করে ভারতীয় জরিপকারী এবং সুপাইভাইজার রয়েছে। তৃতীয় দিন বুধবার নীলফামারীর চারটি ছিটমহলের মধ্যে দুটি ছিটমহলে জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত জনগণনার ক্যাম্পে অংশ নিয়ে নাম নিবন্ধন করেন ২৪ পরিবার। এর মধ্যে ২৯ নম্বর বড়খানকি খারিজা গীতালদহ ছিটমহলে ১৮ পরিবারের ৭২ জন সদস্য ও ৩০ নম্বর বড়খানকি গীতালদহ ছিটমহলে ৬ পরিবারের ৩৫ জন সদস্য। গত তিন দিনে এ চার ছিটমহলে মোট ৭৭ পরিবারের ৩৬৮ সদস্য নিবন্ধন করল। চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার অপর দুটি ছিটমহলের জনগণনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় প্রশাসন। এদিকে বুধবার জনগণনার সময় নীলফামারীর চারটি ছিটমহল পরিদর্শন করেন জনগণনার তত্ত্বাবধানে থাকা ভারতীয় প্র্রতিনিধি দলের ছয় সদস্য। ভারতীয় প্রতিনিধি দল ছিটমহলের জনগণনার ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ২৩ জুলাই ॥ ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২ ছিটমহলের জনগণনা পর্ব শেষ হলেই ছিটমহল বিনিময়ে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে। এ জন্য আগামী ২৩ জুলাই ঢাকায় বৈঠকে বসবেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটি এই বৈঠকের উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে ছিটমহল লাগোয়া বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছেও বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই বৈঠকে কোচবিহারের জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আয়োজিত ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। জরিপে উঠে আসে, লালমনিরহাটে বাংলাদেশের ভিতরে থাকা ভারতীয় ১৭ ছিটমহল জনবসতিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। ছিটমহলের আশপাশের গ্রামবাসী এসব ছিটমহলের জমিতে ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। যাদের দখলে আছে, তারাই জমির মালিকানা দাবি করছে। কোন কোন ছিটমহলে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এতদিন দুই দেশের কোন আইনী হস্তক্ষেপ ছিল না ছিটমহলে। তাই পেশীশক্তি ও জোরপূর্বক অনেকে প্রকৃত মালিককে বঞ্চিত রেখে জমি ভোগদখল করে এসেছে। এই যৌথ জরিপের পর জমি বিরোধ সংক্রান্ত সব সমস্যা নিষ্পত্তি হবে বলে ছিটমহলবাসী আশা করছেন। তাই ছিটমহলের মানুষ জরিপ কাজে সহায়তা করছে বলে কর্মকর্তাগণ জানান। ছিটমহল যৌথ জরিপের সুপারভাইজার জেলা সদরের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ এনামুল কবীর জানান, তিনদিনে প্রায় ৫০ শতাংশ জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি পরিবারে খানা জরিপ চলছে। কোন কোন পরিবারের দু’একজন সদস্য বাইরে রয়েছে। তারা ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে চলে আসবে। তিনি জানান, জেলা সদরের বাঁশপচাই ভিতরকুটি ছিটমহলে কেউ ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, আশা করছি, শতভাগ নির্ভূল জরিপ হবে। জরিপে নিয়োজিতরা বাড়িবাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। ১৭ ছিটমহলে কোন জনবসতি নেই ॥ লালমনিহাটের পাটগ্রামের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১৭ ছিটমহলে কোন জনবসতি নেই। জনবসতিহীন ১৭ ছিটমহলের ভেতরে ধরলা নদী, চর, বনজঙ্গল, ফাঁকা মাঠ ও চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এই ১৭ ছিটমহলে মোট জমির পরিমাণ ১২২.১১ একর। এসব ছিটমহল জনবসতিহীন হওয়ায় শুধু যৌথ জরিপ দল ভূমি জরিপ কাজ করবেন। কুড়িগ্রাম ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দল কুড়িগ্রামের ১২ ছিটমহলে বুধবার তৃতীয় দিনের মতো শেষ করেছে গণনাকারী দল। গণনায় একজনও ভারতে যাবার জন্য নিবন্ধিত হয়নি। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, বুধবার জনগণনার তৃতীয় দিনে এক হাজার ৯৬ জনের গণনা সম্পন্ন করা হয়। ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেএম এরশাদ আহসান হাবীব জানান, এ উপজেলায় ১০টি ছিটমহল রয়েছে। এখানে তিনটি বুথ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ছিটের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণনার কাজ চলছে। তৃতীয় দিন পাঁচ ছিটে জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়।
×