ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বনভূমি রক্ষায় কঠোর হোন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৯ জুলাই ২০১৫

বনভূমি রক্ষায় কঠোর হোন

বনখেকোদের সরকারী গজারি বনের হাজার হাজার একর ভূমি দখল করে নেয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বাস্তবতা এমনই যে, এ ব্যাপারে যেন দেখার কেউ নেই। অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ না নেয়াটাও হতাশাজনক। এ ব্যাপারে দায়িত্ববানদের কর্তব্য পালনও প্রশ্নাতীত নয়। সহযোগী একটি দৈনিকের খবর অনুযায়ী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রায় চার হাজার একর বনভূমি প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। শুধু দখল করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, গাছ উজাড় করে জমিতে গড়ে তুলেছে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। স্থানীয় ভূমি অফিসের যোগসাজশে এ কাজটি করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। সংশ্লিষ্ট এলাকার বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এই দখলের কথা স্বীকার করেছেন। এই বনভূমিসহ বনজ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব তাদের। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় তাদের ওপরই বর্তায়। শুধু বন বিভাগেই নয়, দেশের সরকারী বিভিন্ন সেক্টরে অবকাঠামোগত ও লোকবলের সমস্যা কমবেশি বিদ্যমান। কোন দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় ও পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক এটা সর্বজনবিদিত। তবে পরিতাপের বিষয় হলো- এদেশে এই পরিমাণ বনাঞ্চল এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। যদিও সরকারী-বেসরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে বনায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। তথাপি কিছু লোভী মানুষের অপরিণামদর্শী কার্যক্রমের কারণে বনভূমি উজাড়, দখল হয়ে যাচ্ছে বলে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর দেখা যায়। এটা যেমন দেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনি বেআইনীও বটে। এসব কর্মকা-ের সঙ্গে এক শ্রেণীর সরকারী কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, যা অনভিপ্রেত। এমনও দৃষ্টান্ত আছে, বন বিভাগের সাধারণ কর্মকর্তা হয়েও অবৈধভাবে তিনি হয়ে পড়েছেন কোটিপতি। এ ধরনের ব্যক্তির নগদ টাকা বিছানার নিচে, বালিশ এমনকি চালের বস্তা ও ড্রামের মধ্য থেকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করেছে। এমন বাস্তবতা যে থেমে গেছে তা এখনও বলা যাবে না। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বিষয়টিই এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। বনাঞ্চল দেশের সম্পদ- এ কথা পুনর্ব্যক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। এই সম্পদ রক্ষায় চলমান আইন যথেষ্ট কিনা তা ভাবার অবকাশ রয়েছে। যথাযথ ও কঠোর আইন তৈরি আবশ্যক। তবে শুধু আইন তৈরিই যে যথেষ্ট নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগও জরুরী। কেননা এমন দৃষ্টান্ত আছে- আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে আরেকটি ব্যাপার ভাবা দরকারÑ বনভূমি রক্ষায় সরকারী ব্যবস্থাপনা, কঠোর আইনের যথার্থ প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন গণসচেতনতা বৃদ্ধি।
×