ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কার্ডিফ টেস্ট দিয়ে আজ শুরু ঐতিহ্যের এ্যাশেজ

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৮ জুলাই ২০১৫

কার্ডিফ টেস্ট দিয়ে আজ শুরু ঐতিহ্যের এ্যাশেজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কার্ডিফ টেস্ট দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের ঐতিহাসিক এ্যাশেজ সিরিজ। প্রায় ইতিহাসের সমান দীর্ঘ এই দ্বৈরথ ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের রয়েছে দারুণ আগ্রহ। একদিকে তারুণ্য নির্ভর ইংলিশদের ট্রফি পুনরুদ্ধারের মিশন, অন্যদিকে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অসিদের সামনে সাফল্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। নেতৃত্বে এ্যালিস্টার কুক বনাম মাইকেল ক্লার্ক, বোলিংয়ে জেমস এ্যান্ডারসন বনাম মিচেল জনসন, ব্যাটিংয়ে লড়াইটা জো রুট ও স্টিভেন স্মিথের, সুতরাং জমবে বেশ। লর্ডস, বার্মিংহাম, নটিংহাম ও নর্দাম্পটনে চার টেস্ট শুরু যথাক্রমে ২, ৬, ১৪ ও ২০ আগস্ট। ক্লার্কের নেতৃত্বে সর্বশেষ ২০১৩-১৪ এ্যাশেজ ট্রফি জয় করে অস্ট্রেলিয়া, এরপর ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার করে এখন কার্যত আকাশে উড়ছে অসিরা। দলটিতে রয়েছে একঝাঁক বিশ্বমানের পারফর্মার। স্বাগতিক ইংলিশরা যেখানে ৬ নম্বরে সেখানে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে অস্ট্রেলিয়া। সব বিচারেই এগিয়ে থেকে মাঠে নামছে ক্লার্ক বাহিনী। সত্য স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাগতিক অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকও। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্ডারডগ হিসেবেই মাঠে নামব! কারণ অস্ট্রেলিয়া বর্তমান বিশ্বের অন্যতমসেরা দল। কিন্তু হোম কন্ডিশনের সুবিধাটা আমরাই পাব।তারুণ্যের সঙ্গে এটিই হতে পারে আমাদের বড় শক্তি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি হবে ওভালে। ওই ম্যাচ শেষে আমরা ট্রফি পুনরুদ্ধারের উল্লাস করতে চাই। সেটি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে আসন্ন এ্যাশেজ সিরিজ জয় হবে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। ইংল্যান্ডবাসী এখন সেদিকে তাকিয়ে।’ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পান কুক। এরপর ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ শেষ করে এ্যাশেজ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। আর দেশের মাটিতে ২০১৩ সালের সিরিজে মতো এ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়ে যান। প্রথমবারেই বাজিমাত করেন। ৩-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইংল্যান্ডকে ‘হ্যাটট্রিক’ এ্যাশেজ জয়ের আনন্দে ভাসান কুক। সুখটা দীর্ঘ হয়নি। সর্বশেষ এ্যাশেজে (২০১৩-১৪) অস্ট্রেলিয়া থেকে ৫-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরতে হয় ‘হ্যাটট্রিক’ শিরোপাধারীদের! এ বছর দুটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে কুকের দল। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও পরে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। দুটি সিরিজেই ভাল অবস্থায় থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্র করতে হয়েছে তাদের। এক ঝাঁক নবীন ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তিতে দলে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, যেটিকে বলা হচ্ছে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড। দুটি সিরিজ ড্র করলেও সার্বিক পারফর্মেন্স একেবারে মন্দ নয়। ব্যাটিংয়ে লড়াইটা হতে পারে ইংল্যান্ডের জো রুট ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের মধ্যে। দুজনেই অসাধারণ ক্রিকেট খেলছেন। আইসিসি র‌্যাঙ্কিয়ে সেরা দশে থাকা দু’দলের দুই ব্যাটসম্যান তারাই। সম্প্রতি অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো শীর্ষে আছেন স্মিথ, বিপরীতে রুট সাত নম্বরে। অবশ্য অভিজ্ঞতার বিচারে ব্যাট হাতে জমিয়ে তুলতে পারেন দুই অধিনায়ক কুক আর ক্লার্ক, দুজনই যে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতমসেরা ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে মূল লড়াই দুই পেসার এ্যান্ডারসন (দ্বিতীয়) ও জনসনের মধ্যে (পঞ্চম), স্টুয়ার্ট ব্রড আছেন ৬ নম্বরে। স্পিনে ইংলিশদের ভরসা হতে পারেন মঈন আলি, অস্ট্রেলিয়ার আছে অভিজ্ঞ নাথান লেয়ন। নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন ক্লার্ক। অসি সেনাপতি বলেন, ‘আমরা জানি, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট কী? কয়েক বছর হলো আমি দলটার সঙ্গে আছি, খেলেছি একাধিক এ্যাশেজ। সুতরাং আমরা নিজেদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ধারা অব্যাহত রাখব। আক্রমণের ঝাঁজটা আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন ওয়ার্নার। ক্লার্ক-সতীর্থ বলেন, ‘প্রত্যেক দলেই এমন দু-একজন প্রয়োজন আছে, যারা সেøজিং করতে পারেন। স্বীকার করছি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অনেক সময় আমিই প্ররোচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই! ইংল্যান্ডে যেমন জিমি এ্যান্ডারসন। যুদ্ধের ময়দানে আমরা সবাই সেøজিং পছন্দ করি এবং আমার মনে হয় জিমি যেহেতু বোলার তাই সেই এটা করতে পারে!’ সেøজিংই যদি না থাকল, তবে এ্যাশেজের আনন্দ কোথায়? এমন প্রশ্ন রেখে সিরিজের আকর্ষণ উস্কে দিয়েছেন এই ওপেনার। ক’দিন আগে গ্রেট শেন ওয়ার্নাও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন। যদিও সেøজিং নিয়ে দু’দলকেই সতর্ক করে দিয়েছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি (ইন্টারন্যাশানল ক্রিকেট কাউন্সিল)। অফিসিয়ালি প্রথম টেস্ট হয়েছিল ১৮৭৭ সালের ২৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মোলবোর্নে। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানে এবং দ্বিতীয়টিতে ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জয় লাভ করলে (১-১) এ নির্ধারিত হয়েছিল ফলাফল। তারও দুই বছর পর ১৮৮২ সালের আগস্টে একমাত্র টেস্টটি খেলতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়া। ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত সে ম্যাচের সঙ্গেই জড়িয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক ‘এ্যাসেজ স্মৃতি।’ এ পর্যন্ত দু’দল মোট ৩৩৬ টেস্টে অংশ নেয়, যেখানে ১৩৮ জয়ে পাল্লা ভারি অসিদের, ইংল্যান্ডের জয় ১০৫টিতে। ড্র হয় ৯৩ টেস্ট। ২০০৯-১৩ পর্যন্ত টানা তিন এ্যাশেজ জেতে ইংল্যান্ড, গতবার ঘরের মাটিতে ট্রফি পুনরুদ্ধার করে অস্ট্রেলিয়া। ৩ জানুয়ারি ২০১৪Ñ সিডনিতে শেষ দেখায় ২৮১ রানের বিশাল জয় পেয়েছিল অসিরা!
×