ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৮ জুলাই ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ রমজানুল মোবারকের ২০ তারিখ। আজ থেকে শুরু হচ্ছে এ মাসের আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করার বিশেষ অধ্যায়টি। দিনের অবসান ঘটার আগেই মসজিদে মসজিদে মুমিন পুুরুষেরা এবং কোন কোন ঘরে মুমিন মা-বোনেরা ইতেকাফব্রত পালনের সূচনা করবেন। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। কোন বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ইতেকাফের মধ্যে নিজের সত্তাকে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ হতে বের হওয়া ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় ইতেকাফের নিয়তে পুরুষের ঐ মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় অথবা মহিলাদের নিজ ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একমাত্র ইবাদাতে মশগুল থাকা। যে মসজিদে নিয়মিতভাবে আজান, ইকামত সহকারে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় হয়, সেই মসজিদে ইতেকাফ করা সহীহ হবে। ইতেকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী এরপর মসজিদে আকসা। এরপর ঐ জুমার মসজিদ যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। এরপর সে মসজিদ যেখানে মুসল্লির সংখ্যা অধিক হয়ে থাকে। (শামী, ২য় খ- ও আলমগীরি, ১ম খ-)। ইমাম আবু হানিফা (র.) হতে বর্ণিত আছে, ইতেকাফ সহীহ হবে এমন মসজিদে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। (হিদায়া ১ম খ-)। মহিলাগণ নিজ ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গায় ইতেকাফ করবেন, নামাজের জন্য জায়গা না থাকলে ইতেকাফে বসার সময় জায়গা নির্ধারিত করলেও সহীহ হবে। মসজিদে ইতেকাফ করা তাদের জন্য মাকরুহ। (শামী ২য় খ-)। ইতেকাফের শর্তাবলী ॥ নিয়ত করা। পুরুষের জন্য এরকম মসজিদ হতে হবে, যেখানে জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করা হয়। (তবে নফল ইতেকাফ যে কোন মসজিদে হতে পারে)। মহিলাগণ নিজেদের ঘরে সালাত আদায়ের স্থানে ইতেকাফ করবেন। তারা প্রয়োজন ব্যতীত ঐ স্থান থেকে বের হবেন না। রোজা রাখা, তবে নফল ইবাদাতের জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। মুসলমান হওয়া। জ্ঞানবান হওয়া। অবশ্য ইতেকাফ সহীহ হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক বা বালিগ হওয়া শর্ত নয়। এজন্য জ্ঞানবান, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, বালিকার ইতেকাফ থাকা সহীহ, যেমনিভাবে তাদের নামাজ রোজা দুরস্ত আছে এবং শরিয়ত উৎসাহিত করে। নারী-পুরুষ সকলে জানাবাত বা গোসল ফরজ হয় এমন অপবিত্রতা থেকে এবং নারীদের হায়িজ নেফাজ থেকে পবিত্র হওয়া। (আলমগীরি ১ম খ- ও বাদায়েউস সানায়ে, ২য় খ-)। ইতেকাফের নিয়ম ॥ রমজানুল মুবারকের ২০ তারিখ আছরের পর সূর্যাস্তের পূর্বে শেষ দশকের ইতেকাফের নিয়ত করে ইতেকাফকারী মসজিদে প্রবেশ করবে। শরিয়তভাবে ঈদের চাঁদ দেখা হলে ইতেকাফ শেষ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে চার ইমামের সকলেরই একমত যে একমাস বা ১০ দিন ইতেকাফ করার ইচ্ছা থাকুক, উভয় অবস্থায়ই ইতেকাফকারী ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে আগের দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে। (মিশকাত, ৪র্থ খ-)। মহিলাগণ নিজেদের ইতেকাফের স্থানে এবং পুরুষগণ মসজিদে প্রবেশ করার সময় অথবা প্রবেশ করে মনে মনে এরূপ নিয়ত করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজানুল মুবারকের শেষ ১০ দিনের সুন্নাত ইতেকাফ শুরু করছি। ইতেকাফের কতিপয় আদব ॥ ১. অহেতুক কথা না বলা। যথাসম্ভব পুণ্যের আলোচনায় মশগুল থাকা। ২. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা। যেমন মসজিদে হারাম বা জামে মসজিদ ইত্যাদি। ৩. বেশি বেশি করে কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ পাঠ করা। ৪. যিক্র করা। ৫. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা। ৬. ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া। ৭. আম্বিয়া এবং আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী পাঠ করা। ৯. মাসলা মাসাইলের কিতাব পাঠ ও রচনা করা। ১০. যেসব কথায় গোনাহও নেই এবং সাওয়াব নেই, অর্থাৎ মোবাহ কথা প্রয়োজন ছাড়া না বলা (আলমগীরি, ১ম খ-, শামী ২য় খ- ও মারাকিল ফালাহ)।
×