ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেনাকাটা;###;চলছে লাখ টাকা দামেরও বাহারি ডিজাইনের পোশাক

অভিজাত এলাকার শপিং মলগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ জুলাই ২০১৫

অভিজাত এলাকার শপিং মলগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে

রহিম শেখ ॥ বিত্তবানদের জন্য যে কোন উৎসবই একটু আলাদা। বিশেষভাবে বলা যায় ঈদ উৎসবের কথা। বড় উৎসব তাই বিরাট আয়োজন বিত্তবানদের। কম করে হলেও লাখ টাকার কেনাকাটা করছেন নগরীর অভিজাত এলাকাখ্যাত ধানম-ি-গুলশান-বনানী-উত্তরা এলাকার ক্রেতারা। তাদের কাছে দাম কোন সমস্যাই নয়, বরং পছন্দটাই আসল। তাই ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিটি দোকানে শোভা পাচ্ছে আধুনিক রুচির লাখ টাকার পোশাক। শুধু পোশাকের মধ্যেই থেমে নেই বিত্তবানদের কেনাকাটা। আছে জুতো ও কসমেটিকসসহ নামী-দামী বিদেশী ব্রান্ডের হরেক রকম পণ্য। গুলশান-বনানী এলাকার কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, মিডিয়ার তারকা, সরকারী-বেসরকারী উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মার্কেটে আসছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি মার্কেটের সামনে ছিল গাড়ির বিশাল জটলা। ঈদের শপিংয়ের জন্য বিত্তবান ও শৌখিন ক্রেতাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশী এবং বিদেশী বিভিন্ন পোশাক ও অলঙ্কারে সাজানো হয়েছে রাজধানীর ধানম-ি, গুলশান, বনানী ও উত্তরার বিপণিবিতানগুলো। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের হাল ফ্যাশনের তৈরি পোশাক থরে থরে সাজানো হয়েছে শপিংমলগুলোতে। এসব এলাকার ক্রেতাদের কাছে দাম কোন সমস্যাই নয়, বরং পছন্দটাই আসল। নগদে কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ধনাঢ্য ক্রেতারা কিনছেন আভিজাত্য আর লেটেস্ট ফ্যাশনের বাহারি ডিজাইনের পোশাক। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাকের দোকান এবং নতুন কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতো ও কসমেটিকসের দোকানগুলোয় তুলনামূলক ক্রেতা বেশি। গুলশান ও বনানীর বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে জারা ফ্যাশন, ভাসাবি, শপার্স ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন হাউসে ভারতীয় কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। শার্ট, প্যান্ট ও ব্লেজারসহ থান কাপড়ের পুরোটাই বিদেশী। বিক্রেতারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল ও তারকাদের নামে ভারতে তৈরি থ্রি-পিস ঢাকাসহ সারাদেশের ঈদের বাজারে দেদারসে চলছে। এর ব্যাপক কাটতি দেখে প্রতি বছরই এ ধরনের পোশাকের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। এবারও এসব অভিজাত এলাকায় মার্কেটগুলোতে জায়গা দখল করেছে কিরণমালা, সারারা, পার্টি লেহেঙ্গা, ফ্লোর টাচ গাউন, আনারকলি, কোটি থ্রি-পিচ নামের পোশাক। এসব মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, ভারতীয় বলিউডের নামকরা ডিজাইনারদের তৈরি শিফন, লেইজ, নেটের কাপড়ের উপরে সুতা, স্টোন বা জাদৌজির জমকালো কাজ এসেছে নারীর পোশাকে। এসব পোশাকের জন্য দাম ৫০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষের পোশাকে এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরা ‘কোটি’ ডিজাইন সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে জানান বিক্রেতারা। এর দাম পড়বে ১৮ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। বাচ্চাদের পোশাকে বোম্বাই থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন আয়োজন এসব মার্কেটগুলোতে। গুলশান-বনানী এলাকায় দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি বিদেশী পোশাকের দোকানও রয়েছে প্রচুর। কাকলী মোড় থেকে শুরু করে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী ১১ নম্বর রোড হয়ে গুলশান-১ ও ২ নম্বরজুড়ে রয়েছে পোশাকের দোকান। এসব এলাকায় দেশীয় পোশাকের শোরুম ছাড়াও গুলশান নাভানা টাওয়ার, পিংক সিটি, শপার্স ওয়ার্ল্ড, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ভাষাবিসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শোরুমগুলোতে এখন জমজমাট বেচাকেনা। বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আনা হচ্ছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক। এবারের ঈদে লম্বা ঝুলের কামিজ, তার ওপরে কোটি নিয়ে বিশেষ পোশাকে মাত করেছে ঈদ বাজার। ‘সারা-রা’ নামে এমন পোশাকের কোটিতে নানা ধরনের সুতা, চুমকি ও জরির জমকালো কারুকাজ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, ‘সারা-রা’ পোশাকটি শুধু বড়দের জন্যই নয়। এ পোশাক থাকছে ছোটদের জন্যও। তবে ছোটদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে একটু হালকা কাপড়ে করা হয়েছে ‘সারা-রা’। ছোটদের ‘সারা-রা’ পাওয়া যাচ্ছে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। এবারের ঈদে ‘সারা-রা’ পোশাক ছাড়াও তরুণীরা ঝুঁকছেন ‘বলিউড গাউন’র দিকে। এটি ‘ফ্লোর টাচ গাউন’ ও ব্রাইডাল গাউন হিসেবেও পরিচিত। এ পোশাকটি মূলত পাশ্চাত্য ঢঙের। তবে ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন ও পোশাকের সামনের দিকে জমকালো কারুকাজ দিয়ে একে ভারতীয় ঘরানার করা হয়েছে। আর বলিউড গাউনের বড় বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- লম্বা ঝুল। অতিরিক্ত ঝুলের কারণে পোশাকের নিচের দিকের অনেকংশ মাটিতে ছড়িয়ে থাকে। এ কারণেই এর আরেক নাম ‘ফ্লোর টাচ গাউন’। এ গাউন বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সালোয়ার কামিজের স্টাইলে এবারের ঈদে বিশেষ সংযোজন ‘কোটি’র ব্যবহার। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতেই কামিজে কোটি যুক্ত করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু কামিজে কোটি থাকছে আলাদা। এক্ষেত্রে চাইলে কামিজ থেকে কোটি খুলে রেখেও কামিজ পরা যাবে। আর কামিজটা অবশ্যই লং ও স্ট্রেইট কাটের হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে বাহারি নক্সা। নতুনত্বের বাহারি ডিজাইন তো থাকছেই। গলার কাটিংয়েও স্থান পেয়েছে পরিচিত টিভি সিরিয়াল ও সুপারহিট সিনেমার নায়িকার ড্রেসকে সামনে রেখে। ঈদের বাজারে এবার ভারতীয় লং টপ, পারচি ৬ থেকে ৮ সিরিজের পোশাক ও ‘ভিনয় কোশিশ’ নামের নতুন ধরনের ড্রেসও এসেছে। এসব পোশাক ৪ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় এসব পোশাকের বাইরে এবারের ঈদে ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনছেন তরুণীরা। ওয়েস্টার্ন পোশাকের মধ্যে বেশি চলছে হালকা সিøভলেস টপস ও স্কিন টাইট প্যান্ট। অনেকে লং-স্কাটও কিনছেন। এছাড়া চলছে ম্যাক্সি গাউন নামের এক ধরনের ওয়েস্টার্ন পোশাক। এবারের ঈদে ফ্যাশন হাউস স্ট্যাসিতেও বিভিন্ন ধরনের ওয়েস্টার্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের পোশাকের সবচেয়ে বেশি কালেকশন দেখা গেছে এসব অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলোতে। গুলশান-বনানী এলাকার মার্কেটগুলোতে বেশিরভাগ শার্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা দামের শার্টও মিলছে এসব শপিংমলে। ছেলেদের পাঞ্জাবি, শেরোয়ানি, ফতুয়ার দর এক হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বাচ্চাদের পোশাকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ান গেঞ্জিসেট, হটপ্যান্ট, বার্বি ড্রেস ও বম্বে লাসা, থ্রিপিস স্যুট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকায়।
×