ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুজরাটে নয় কলকাতায় জমি চায় বিজিএমইএ

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ৭ জুলাই ২০১৫

গুজরাটে নয় কলকাতায় জমি চায় বিজিএমইএ

এম শাহজাহান ॥ কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করা হবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পল্লী। জমি বরাদ্দ চেয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেখানে পছন্দের জায়গা হিসেবে কলকাতা উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন মোদি সরকার শেষ পর্যন্ত জমি বরাদ্দ দিলে এ রাজ্যেই প্রতিষ্ঠা করা গার্মেন্টস পল্লী। পরবর্তীতে এ পল্লী থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সরবরাহ করা হবে তৈরি পোশাক। তবে এ পল্লীতে কোম্পানি গঠন, বৃহত্তম ওয়্যার হাউস ও ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার স্থাপন এবং এক হাজার রিটেইল শপও স্থাপন করতে চায় বিজিএমইএ। এ জন্য করা হবে বড় ধরনের বিনিয়োগও। ভারতে বাজার সম্প্রসারণে আপাতত এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কলকাতা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী রাজ্য। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এ রাজ্যটির সঙ্গে। এছাড়া ভাষা ও সংস্কৃতিতেও মিল রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস পল্লী হবে কলকাতায়। রফতানি বাজার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সম্প্রতি ৫০ একর জমি দিতে রাজি হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। আর তাই ভারতীয় হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এখন আর পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএয়ের হাতে নেই। দু’দেশের সরকার-টু-সরকার বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে এ জমির ব্যাপারে আগামী তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে গুজরাটে নয়, কলকাতায় জমি বরাদ্দ প্রত্যাশা করছে বিজিএমইএ। এদিকে, কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার পর রফতানি কিছুটা বাড়লেও সেই অর্থে দেশটিতে অর্থে বাজার সম্প্রসারণ হতে পারেনি। ঠিক কেন রফতানি বাড়ছে না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন রফতানিকারকরাও। এ বাস্তবতায় ভারতে রফতানি বাড়াতে চেষ্টা করছেন এ শিল্পের মালিকরা। গত ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরে ভারতে পোশাক রফতানি হয় ৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। রফতানিতে যেসব জটিলতা রয়েছে তা দূর করা গেলে এখনই ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি সম্ভব। তবে শুল্কমুক্ত সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাবনাময় বড় বাজার হিসেবে রফতানির এ পরিমাণ নিয়ে সন্তুষ্ট নন উদ্যোক্তারা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত একটি সম্ভাবনাময় মার্কেট। তবে এখানে স্বল্প মেয়াদে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়। এ কারণে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা জমি চেয়েছি। বিজিএমইএয়ের পক্ষ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনে একটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি জি-টু-জি ভিত্তিতে তবে। তিনি বলেন, এখানে বিজিএমইএয়ের আর তেমন কিছু করার নেই। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়টি আছে। তাই দুই দেশেরই এ ব্যাপারে বৈঠকের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমলাতান্ত্রিকও তাই রাতারাতি কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। তবে ভারত যেহেতু বড় মার্কেট তাই দেশটির সঙ্গে আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিনিয়োগ বোর্ডকেও বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের শর্ত শিথিল করতে হবে। জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণা সত্ত্বেও এখনও কিছু কিছু পণ্যে ৪২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রফতানি করতে হয়। ভারতে ফুলহাতা গেঞ্জির চাহিদা ব্যাপক কিন্তু এসব পোশাক শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় নেই। ৪২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এ সব পণ্য ভারতে রফতানি করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রফতানির ওপর ভারতের আরোপিত সিভিডি কর প্রত্যাহার না হলে পোশাক রফতানি কমার আশঙ্কা রয়েছে রফতানিকারকদের। উদ্যোক্তারা বলছেন, সিভিডি বা কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপের ফলে ভারতে পোশাক রফতানি কোন কোন ক্ষেত্রে কমে গেছে। তাই রফতানিতে যেসব জটিলতা দূর হয়েছে তা দূর হওয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয় ভারতে বাজার সম্প্রসারণে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএয়ের সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ভারত সরকারের কাছে ৫০ একর জমি চাওয়া হয়েছে। এ জমি পেলে বিজিএমইএয়ের সদস্য ও অন্যরা মিলে ২৫ মিলিয়ন ডলারে ভারতে একটি কোম্পানি গঠন করবেন। বৃহত্তম ওয়্যার হাউস ও ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিজিএমইএ ভারতে ১ হাজার রিটেইল শপও স্থাপন করতে চায়। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ঘাটতি অনেকাংশে কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এ উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে চীনের দিকেও এগোতে পারবো আমরা। ওয়্যার হাউস নির্মিত হলে শুধু পোশাকই নয়, অন্যান্য পণ্যও সেখানে নিয়ে যেতে পারবো আমরা। আর এতে বাংলাদেশের রফতানি বাজার আরও সম্প্রসারণ হবে। জানা গেছে, ১২৫ কোটি জনসংখ্যার ভারত হচ্ছে বাংলাদেশী পোশাকের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার। এ বাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে লিড টাইম বা পরিবহনের সময়। মাত্র দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সেখানে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব। গত ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় ভারতে ১ কোটি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। এতে ওই বছরই কোটা পূরণ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বহু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারতের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার আওতায় পোশাক রফতানির সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এ সুবিধা থাকার পরও এখন দেশটিতে পোশাক রফতানি সেভাবে বাড়েনি। এ অবস্থায় ট্যারিফ-ননট্যারিফ ও সিভিডি কর প্রত্যাহারসহ আরও কয়েকটি বিষয়ের মীমাংসা চায় বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএয়ের সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের কাছে ৫০ একর জমি চাওয়া হয়েছে। এখন সরকার-টু-সরকার আলাপ আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে এ জমি পাওয়া যেতে পারে। তবে এ জমি যেন কলকাতায় হয়। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনকেও এ ব্যাপারে আমাদের মনোভাবের কথা জানিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, জমি পাওয়া গেলে ভারতে পোশাকের বাজার সম্প্রসারণ হবে।
×