ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ রক্ষার লড়াই আজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৭ জুলাই ২০১৫

সিরিজ রক্ষার লড়াই আজ বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টি২০তে ৫২ রানে জেতায় দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার হারানোর আর কিছু নেই। সিরিজ অন্তত হার হচ্ছে না প্রোটিয়াদের। তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের সেই ভয় আছে। আজ দুই দলের মধ্যকার যে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি হবে তাতে হারলেই সিরিজ হার হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে গতবছর নবেম্বর থেকে যে নির্ধারিত ওভারের সিরিজ জিতেই চলেছে বাংলাদেশ, তাতেও ছেদ পড়বে। এখন বাংলাদেশের সিরিজ রক্ষার লড়ায়েই নামতে হবে। পারবে বাংলাদেশ সিরিজ রক্ষা করতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ম্যাচেই আমরা লড়াইয়ে ফিরব।’ সত্যিই কী তা পারবে বাংলাদেশ? অলরাউন্ডার নাসির হোসেন তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেজেত দ্বিতীয় ম্যাচেই গর্জে ওঠার ভাবনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে খারাপ সময়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ না হয়ে সঙ্গে থাকার, সমর্থন করে যাওয়ার কথাও বলেছেন। নাসির বলেছেন, ‘একটা খারাপ দিন আসতেই পারে। এটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আরও একটা টি২০ বাকি আছে। বাঘেরা আবারও গর্জে উঠবে। আর ইনশাআল্লাহ আগামী ম্যাচেই নিজেদের জাতটা তারা বোঝাতে পারবে। এই বাজে সময় আপনাদের সমর্থন আমাদের জন্য খুব জরুরী।’ বোঝাই যাচ্ছে, নাসির কতটা উদগ্রীব হয়ে আছেন দ্বিতীয় টি২০তে জিততে। অবশ্য প্রথম টি২০তে যে অবস্থা দেখা গেছে তা থেকে বের হতে না পারলে দ্বিতীয় টি২০তেও যে জেতা যাবে না, তা সবাই বোঝে। ১৪৯ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে দেশের মাটিতে সর্বনিম্ন ৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় যে দল, সেই দলটি আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কী করতে পারবে? বাংলাদেশ অধিনায়ক সবসময়ই আশাবাদী। তাই তো ব্যাটসম্যানদের দিকেই নজর দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘ওরা (দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা) যেভাবে ব্যাটিং করেছে, ওদের মাথায় চিন্তা ছিল যে রান রান রেট ৭-৮ কিংবা তার বেশি চলে গিয়েছে। নাসির যখন ব্যাটিংয়ে যায় তখন রান রেট সাড়ে আটের ওপর চলে গিয়েছিল। খারাপ বলগুলো ওরা চাচ্ছিল যে বের করতে। হ্যাঁ একটু বেশি শটস খেলেছে। আমাদের শেষ সময়ে যে সব সাফল্য ছিল সেগুলো পজিটিভ খেলেই পেয়েছি। এ জন্য খেলার ধরন পরিবর্তন করতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক। খেলার অবস্থা বুঝে খেলতে হবে এটা স্বাভাবিক। সামনে থেকে আমি আশা করব এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যাটসম্যানরা একটু চিন্তা করে খেলবে।’ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের গড়া ফাঁদেই ধরা পড়ার বিষয়টিও আছে। স্পিন দিয়ে প্রোটিয়াদের ঘায়ের করতে চেয়েছে বাংলাদেশ। উল্টোটা হয়ে গেছে। নিজেরাই ঘায়েল হয়েছে। এখন মাশরাফি বলছেন আবার বাংলাদেশের বোলারদের বল টার্ন করে না! প্রথম টি২০ শেষে সংবাদ সম্মেলনেই মাশরাফি বলেছেন, ‘আমাদের বোলারদের বল ততটা তো টার্ন করে না। আমাদের যেটা হয়, বল একটু উঁচু-নিচু হয়। একটু সেøা হয়। উইকেটে টার্ন করাতে একটা সমস্যা হয়েছে। আর ওদের বোলাররা ৮ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছে। অবশ্যই এখানে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে ১৫০ তাড়া করতে গেলে। যেটাই হোক না কেন আমরা আরেকটু চেষ্টা করতে পারতাম।’ মাশরাফির কথাতেই বোঝা গেছে চেষ্টার কমতি ছিল। তাই তো এক শ’ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম টি২০তে এক দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস যেখানে করেছেন ৭৯ রান, সেখানে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানই অর্ধশতকও করতে পারেননি। সর্বোচ্চ স্কোর ২৬। সেটি সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে এসেছে। এমনটি হলে দ্বিতীয় টি২০তেও হার যে নিয়তি হবে, তা নিশ্চিতই বলা যায়। মাশরাফি অবশ্য প্রথম টি২০ থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় টি২০তে জেতার আশা করছেন। বলেছেন, ‘অবশ্যই আমাদের (প্রথম টি২০তে) জয়ের সুযোগ ছিল। ম্যাচে নেতিবাচক দিকও থাকে, ইতিবাচক দিকও থাকে। এর আগে যেগুলো জিতেছি তার মধ্যে নেতিবাচক দিকও ছিল। নেতিবাচক দিকগুলো ভালমতো শিখে পরবর্তী ম্যাচে কাজে লাগানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর ইতিবাচক দিকগুলো সবসময় আত্মবিশ্বাস যোগাবে।’ একটা বিষয় সবার ভেতরই যেন কাজ করছে। যেটি হারের অন্যতম কারণও হতে পারে। সেটি কী? দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী দল। এ জিনিসটা ক্রিকেটাররা বোধ হয় মনের ভেতর গেঁথে নিয়েছে। তাতে করে খেলাতেও প্রভাব পড়ছে। মাশরাফি এ বিষয়টাই যেন বোঝাতে চেয়েছেন। যখন মাশরাফির সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো, মাচের আগেই পরিসংখ্যান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ভাল দল, আমরা এই ফরম্যাটে ভাল দল নয়। এটা আগে থেকেই বলে এসেছেন। এটার কি প্রভাব হতে পারে কি না? মাশরাফি বলেছেন, ‘হতে পারে। কোনটার প্রভাব যে আসলে কি। এটা বলা খুব কঠিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা যারা খেলেছি তারা জিনিসটাকে কিভাবে নিয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কারভাবে সবাই জানে দক্ষিণ আফ্রিকা কেমন ক্রিকেট খেলে। আমরা যদি এটাকে মনের মধ্যে কঠিনভাবে নিয়ে নেই, তখন আমাদের কিন্তু ওইখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে হবে তা বলেছি। যদি সুযোগ তৈরি করতে পারি আমাদের সেই সুযোগগুলো নিতে হবে। আমার বিশ্বাস একটা পর্যায় গিয়ে খেলাটা আমাদের হাতেই ছিল। আরও একটু মনোযোগী হলে আমরা খেলাটা আরও ক্লোজ করতে পারতাম। তারপরও আসলে হিসেব-নিকেশ করা যেত খেলা শেষে আসলে কি হয়। আমরা নিজেরাই সুযোগটা তৈরি নিতে পারিনি। আশা করি দ্বিতীয় ম্যাচে এমন অবস্থায় গেলে আমরা আরও চেষ্টা করব।’ সেই চেষ্টায় এখন সাফল্য মিললেই হয়। তা না হলে যে সিরিজ রক্ষার লড়াইয়ে নেমে সিরিজ হারই হবে নিয়তি।
×