ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালোবাজারে যাচ্ছে অগ্রিম টিকেট ॥ দালালদের কাছে জিম্মি দক্ষিণের লঞ্চযাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৭ জুলাই ২০১৫

কালোবাজারে যাচ্ছে অগ্রিম টিকেট ॥ দালালদের কাছে জিম্মি দক্ষিণের লঞ্চযাত্রীরা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে শহর থেকে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ যাত্রীদের জন্য নৌ-রুটে আগামী ১৪ জুলাই থেকে সাতটি স্টিমার এবং ১৫ জুলাই থেকে নিয়মিত ছয়টির পাশাপাশি ১৪টি বেসরকারী লঞ্চে স্পেশাল সার্ভিস শুরু করা হবে। এর মধ্যে প্রতিদিন ডবল ট্রিপে থাকবে ১০টি লঞ্চ। ঈদের পর চারদিন স্পেশাল সার্ভিস চলাকালে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের যাত্রীদের জিম্মি করার রোটেশন পদ্ধতিতে বেসরকারী নৌযানে যাত্রী পরিবহনে বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এ বছর বেসরকারী লঞ্চগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি করা না হলেও বাড়ানো হয়েছে যাত্রী ভোগান্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারী লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে আজ মঙ্গলবার। এবার ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের টিকেট বিক্রি হচ্ছে বরিশাল থেকে। ঢাকা থেকে ঈদের কোন অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়েছেন একটি লঞ্চের ইনচার্জ মোঃ আসাদ শিকদার। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে ঢাকার মতিঝিলে বা অন্য কোথাও অস্থায়ী অফিস করা হয়েছিল। এবার তা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বরিশালে বসেই অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। ঢাকা থেকে অগ্রিম টিকেট না পাওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ যাত্রীর জানা না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদের চেয়ে উল্টো ভোগান্তির এ ব্যবস্থা চালু করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। অগ্রিম টিকেট বিক্রির এ পদ্ধতিকে কৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও দালালের হাত ঘুরে টিকেট কালোবাজারে যাওয়ার পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ যাত্রীরা। সোমবার বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের অগ্রিম টিকেটের খোঁজ নিতে আসেন আরিফ মিয়া নামের একযাত্রী। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বরিশালগামী বিলাসবহুল লঞ্চ সুরভী, সুন্দরবন, কীর্তনখোলা ও পারাবত লঞ্চ ঘুরে ঈদের অগ্রিম টিকেট বুকিংয়ের কথা জানতে চাইলে তাকে বরিশাল অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে বরিশালে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়। ঢাকা থেকে কোন অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে না বলেও লঞ্চের স্টাফরা তাকে জানিয়েছেন। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যাত্রী নাসরিন জাহান জনকণ্ঠকে জানান, এটা লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। তারা বেশি দামে টিকেট বিক্রির জন্য যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি না করে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে দালালের মাধ্যমে কালোবাজারে টিকেট ছাড়ার ফন্দি করেছেন। ১৪ জুলাই থেকে স্টীমারের স্পেশাল সার্ভিস ॥ বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান, বিশেষ সেবার টিকেট বিআইডব্লিটিসির নির্ধারিত কাউন্টার ও সহজ ডট কম নামের অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা যাবে। তিনি আরও জানান, ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-মোরেলগঞ্জ রুটে পিএস অষ্ট্রিচ, মাহসুদ, লেপচা, শেলা ও বাঙ্গালী ছাড়াও যোগ হবে নতুন নৌ-যান মধুমতি। এই সাত নৌ-যানের সঙ্গে চলবে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন রুটের খিজির-৮, খিজির-৭ ও এসটি শেখ জামাল। খিজির-৮ বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট, ইলিশা-মজুচৌধুরী হাট রুটে খিজির-৭ ও মনপুরা-শশীগঞ্জ রুট এসটি শেখ জামাল চলবে। এছাড়া আগামী ১০ অথবা ১২ জুলাই নতুন নৌ-যান মধুমতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করার পর যাত্রী পরিবহনে নামানো হবে। আনফিট লঞ্চে স্পেশাল সার্ভিস ॥ ঈদ উপলক্ষে যাত্রী জিম্মির রোটেশন প্রথা না থাকার সুযোগে ঢাকা-বরিশাল, চাঁদপুর, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যত লঞ্চ চলাচল করে এবার তার চেয়েও ৪-৫ গুণ বেশি স্পেশাল লঞ্চ চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন মালিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন ডক ইয়ার্ডে আনফিট লঞ্চে জোড়াতালি দিয়ে রং করা ও মেরামতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রাত-দিন খেটেখুটে এসব লঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের ঘরে ফেরার পথে বহনের জন্য। কিন্তু ঈদের এই ঘরে ফেরা কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
×