ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ জুলাই ২০১৫

এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানি শুরু

ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার রফতানি তালিকায় উঠে এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে আমনগরী বা আম সাম্রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিশ্বের ভিভিন্ন দেশে আম রফতানি। আম শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে এই রফতানি কার্যক্রম। ইতোমধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান নিয়ে বাগান ঘোরা শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য কোন্ বাগানে উন্নত জাত ও কেমিক্যালমুক্ত পরিপুষ্ঠ আম পাওয়া যাবে। এসব অন্নেষণ শেষ করেই রফতানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানি শুরু হয়েছে। অধিক সুমিষ্ঠ জাত ল্যাংড়া ও ফজলি প্রথম চালানেই পাঠানো হয়েছে যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বাঙালী এলাকায় প্রচ- চাহিদা রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের। বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ওয়ালমার্ট ৯০টি ক্যারেট করে ল্যাংড়া ও ফজলি জাতের দুই টন আম ২৪ জুন বুধবার যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) যুক্তরাজ্যে আরও দুই টন ফজলি গেছে। প্রথম চালানে ইংল্যান্ডে গেছে ২৫ ক্যারেট ল্যাংড়া ও ৬৫ ক্যারেট ফজলি জাতের আম। শেষ খবরে জানা গেছে, এই আম যুক্তরাজ্যের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। প্রথম চালান যাওয়ার পর পরই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় চালান পাঠানোর প্রস্তুতি। প্রথম চলানের পুরোটা ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর অঞ্চলের আম বাগান থেকে নেয়া। এবার দৃষ্টি জেলার বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী এলাকা শিবগঞ্জ উপজেলার দিকে। তাই ৩০ জুন পাঠানো হয়েছে ইংল্যান্ডে ও ইতালিতে চার মেট্রিক টন আম শিবগঞ্জ থেকে। শিবগঞ্জ পৌর এলাকার একাডেমি মোড়সংলগ্ন সোনামসজিদমুখী সড়কের ধারে অবস্থিত ইসমাইল খান শামীমের বাগান থেকে নেয়া হয়েছে ওই আম। দ্বিতীয় চালানে ফজলি ও ল্যাংড়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে লখনা ও মল্লিকা জাত। শিবগঞ্জের এই আম বাগানের কোন গাছে কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ না করেও আমের ফলন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি আমে সুন্দর কালারও এসেছে, যা বিদেশীদের আকৃষ্ট করবে। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুজ্জামান জানান, ইসমাইল খান শামীমসহ একাধিক মালিকের আম বাগান তাঁরা তত্ত্বাবধান করায় কেমিক্যালমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। মেসার্স মরিসন এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুজ্জামান বাবু জানান, তাদের রফতানি করা আম লন্ডনের আঞ্চলিক মার্কেট (বাঙালী পরিচালিত) ও আল মার্ট এবং ইতালিতে প্রচ- চাহিদা রয়েছে। তারা প্রচুর পরিমাণ আমের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। চলমান উৎকৃষ্টমানের জাত ছাড়াও তারা বিষমুক্ত আম্রপালি ও আশ্বিনা জাত পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিভিন্ন উন্নতজাতের আম জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত বিদেশে রফতানি করবে, যার পরিমাণ শতাধিক মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ বছর আম রফতানির পরিবেশ সৃষ্টিতে বড় ধরনের অবদান রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালায়। এক কথায় মে মাসে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরকালে গত বছরের ফরমালিন আতঙ্ক সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হন। তাই ঢাকায় ফিরে তাঁর নিজস্ব সচিবালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন যে কোন মূল্যে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমকে ফরমালিনমুক্ত রাখতে হবে। বিধায় সর্বশেষ জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয় দেখভালের। সে অনুসারে প্রশাসন ফরমান জারি করে মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত কোন ধরনের অপরিপক্ব আম কেউ গাছ থেকে ভাঙ্গতে পারবে না। তাতেই কাজ হয়। অপরিপক্ব আম গাছ থেকে নামালেই কার্বাইড ব্যবহার করে কৃত্রিম পাকানোর চেষ্টা করত। সেটা ভ-ুল হয়ে যায়। জুনের প্রথম দিন থেকে পরিপক্ব আম নামানো শুরু হয়। এমনকি দেশের বৃহত্তম কানসাট আমের বাজার শুরু হয় ৪ জুন থেকে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের কারণেই এবার আম রফতানির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাতে করে উল্লসিত ও উচ্ছ্বসিত জেলার আম ব্যবসায়ীরা। আম রফতানির আনন্দ তারা ধরে রাখতে পারছেন না। তাদের আশা, এর ফলে আগামীতে নিয়মিত আম রফতানির পথ সুগম হবে, হাতে আসবে বিদেশী অর্থ। একই সঙ্গে আমচাষী ও বাগান মালিকদের ভাগ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র উপকৃত হবে চরমভাবে। অর্থাৎ বিদেশী অর্থ অর্জনের আরও একটি পথ খুলে গেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানির মধ্য দিয়ে।
×